Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

আটককৃত ছাত্রদের পরিবার

হাওরে নাশকতা করতে যাওয়ার গল্প হাস্যকর

মো. মাসুম বিল্লাহ

আগস্ট ১, ২০২৩, ০৫:০২ পিএম


হাওরে নাশকতা করতে যাওয়ার গল্প হাস্যকর

সিলেটের সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে যাওয়ার সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) ৩৪ শিক্ষার্থীকে অন্যায়ভাবে আটক করে সন্ত্রাসদমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আটককৃত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকবৃন্দ।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) বিকালে বুয়েট শহীদ মিনারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকবৃন্দ এ দাবি করেন।

লিখিত বক্তব্যে আলী আহসান জুনায়েদ নামে এক অভিভাবক বলেন, আমাদের জ্ঞাতসারে গত শনিবার আমাদের সন্তান ও স্বজনেরা ক্যাম্পাসের বন্ধুদের সাথে সুনামগঞ্জের টাংগুয়ার হাওরে ঘুরতে যান। 

ভ্রমণের এক পর্যায়ে গত রোববার বিকালে তাদেরকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। রোববার বিকাল থেকেই তাদেরকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তবে পরবর্তীতে রাতে ভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি, ভ্রমণকারী সবাইকে তাহিরপুর থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।

এরপর থেকে তাদের বিষয়ে খোঁজখবর জানার জন্য আমরা ওসি ও এসপিকে বারবার ফোন করেছি, কিন্তু উনারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। তাই, আমরা জানতেও পারছিলাম না কেন তাদেরকে আটক করা হয়েছে। এর মাঝে আমাদের কারো কারো আছে পরশু রাতেই আমাদের সন্তান/স্বজনেরা ফোন করে এনআইডির ছবি চেয়েছে। কিন্তু তখনও সেই অভিভাবকেরা জানতো না যে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। তাদের দিক থেকেও আর কিছু বলতে দেওয়া হয়নি।

সোমবার (৩১ জুলাই) বিকালে আমরা জানতে পারি যে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। তারা নাকি নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনার জন্য সেখানে গেছে। আমরা মনে করি এরকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। স্থানীয় ওসি এবং এসপিকে ফোন দেওয়ার পাশাপাশি আমরা রাত থেকে ভিসি স্যারকেও ফোন দিয়েছি অসংখ্যবার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা কারো সাথেই যোগাযোগে সক্ষম হইনি।

তিনি আরও বলেন, সোমবার বিকালে আমাদের হাতে পৌঁছানো মামলার বিবরণীতে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ঘটিয়ে জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা, জানমালের প্রতি ক্ষতি সাধন, রাষ্ট্রদ্রোহী কর্মকাণ্ড সহ ধর্মীয় জিহাদ সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অপরাধ ইত্যাদি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পুরো বিষয়টি আমাদেরকে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। এমন বাস্তবতায় সোমবার সন্ধ্যায় আমরা কয়েকজন অভিভাবক বুয়েটের ভিসি স্যারের সাথে দেখা করতে যাই। সেখানে গিয়ে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের সাথে দেখা হয় এবং তাকে পুরো বিষয়টি অবহিত করি।

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মহোদয় আমাদেরকে জানান যে, তাদেরকেও পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে গতকাল বিকাল চারটা বা পাঁচটার দিকে। সেসময় এরকম ষড়যন্ত্রমূলক প্রচেষ্টা কারা করছে এবং কোন উদ্দেশ্যে করছে এ বিষয়টি নিয়ে যে আমরা উদ্বিগ্ন এবং আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবন ও ক্যারিয়ার হুমকির সম্মুখীন সেটা জানিয়েছি আমরা। এবং এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অনুরোধও জানিয়েছি আমরা। তারা তাদের প্রসিডিওর অনুযায়ী চেষ্টা করবেন বলেছেন।

নাশকতার পরিকল্পনা হাস্যকর উল্লেখ করে তিনি বলেন, জব্দকৃত মালামাল হিসেবে কতগুলো জিনিসপত্র তাদের কাছ থেকে উদ্ধারের যে প্রসঙ্গ অবতারণা করা হয়েছে এটি অত্যন্ত হাস্যকর এবং পরিষ্কারভাবে বানোয়াট বিষয়। তারা টার্ম-ব্রেকের বন্ধের সাথে বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঘুরতে ওখানে গেছে। আর টাঙ্গুয়ার হাওরে গিয়ে কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করবে এমন অভিযোগও হাস্যকর।

পরবর্তীতে তাদের সাথে সাক্ষাৎ হলে তারা এটা পরিষ্কার করেছে যে, তাদের কাছে এবং সাথে থাকা মোবাইলে প্রত্যাশিত কিছুই না পেয়ে তাদের সামনেই জব্দকৃত মালামাল হিসেবে সেগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে এবং ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড দিয়ে প্রিন্ট করা হয়েছে তাদের মামলা সাজানোর জন্য।

আমরা বুয়েট প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোন ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সাথে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়। কোন ধরনের রাজনীতির সাথে জড়িত এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা পরিষ্কার ভাষায় বলছি তারা সাধারণ শিক্ষার্থী মাত্র।

এইচআর

Link copied!