যবিপ্রবি প্রতিনিধি
আগস্ট ৩, ২০২৩, ১২:৫৩ পিএম
যবিপ্রবি প্রতিনিধি
আগস্ট ৩, ২০২৩, ১২:৫৩ পিএম
সরকার প্রদত্ত প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য গত এক মাসের জন্য অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নেয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি) কতৃপক্ষ। এ-সময় শিক্ষকদের নিজস্ব বিভাগের ডিজিটাল ক্লাস রুমে এসে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ সিদ্ধান্তের পর কতিপয় শিক্ষার্থী জোরপূর্বক শিক্ষকদের পরিবহনের চাবি ছিনিয়ে নেওয়া ও লিফট বন্ধ করার অভিযোগে শিক্ষক সমিতির ঘোষিত সীদ্ধান্ত "শিক্ষকদের অপমানের বিচার না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম থেকে কর্মবিরতি" এখন ও পর্যন্ত চলমান রেখেছেন।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কতৃক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ২ই আগস্ট থেকে স্ব শরীরে ক্লাস কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা বলা হয়। অথচ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় কোন বিভাগের ক্লাস কার্যক্রম চলছে না। এতে চরম হতাশা ও সেশনজটের সম্ভাবনা দেখছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের কতিপয় ব্যয় স্থগিত/হ্রাসকরণ ও বিদেশভ্রমণ সীমিতকরন প্রসঙ্গে সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, যবিপ্রবিতে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ২৫ শতাংশ বিদ্যুতের ব্যবহার কমাতে হবে। এই মর্মে গত ১০ জুলাই (সোমবার) সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ জুলাই কতিপয় শিক্ষার্থী হঠাৎ বেলা আড়াই টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সকল রুটের পরিবহনের চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। প্রশাসনিক, একাডেমিক ভবনের লিফটসমূহও বন্ধ করে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ভবনের লিফটম্যানদের সরিয়ে লিফটগুলো বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে সিনিয়র শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনেকে লাইনবাসে, ভ্যান বা অটোতে করে বাড়ি ফিরে যায়।
পরবর্তীতে ১৮ জুলাই (মঙ্গলবার) এ ঘটনার বিচার চেয়ে উপাচার্য বারবার অভিযোগ করে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত ১৬ জুলাইয়ের ঘটনায় শিক্ষকবৃন্দ চরমভাবে অপমানিত ও অসম্মানিত বোধ করেছেন। উক্ত অপমান ও লাঞ্চনা`র তদন্তক্রমে সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত ২২ জুলাই শনিবার হতে শিক্ষকগণ সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম হতে বিরত থাকেন।
এ দিকে ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২ আগস্ট (বুধবার) থেকে সকল ক্লাস স্বশরীরে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কর্ম বিরতিতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। অনলাইন ক্লাস হওয়ার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে যায়, ক্লাস অফলাইনে হওয়ার ঘোষণা আসলেও শিক্ষকরা ক্লাসে না ফেরায় অনেকেই এ ব্যাপারে নিশ্চয়তা না পেয়ে দোটানায় পড়েছে, আবার দীর্ঘদিন ক্লাস না হওয়ায় সেশনজটের আশঙ্কায় ভুগছে শিক্ষার্থীরা। আবার সেমিস্টার পরীক্ষার কোর্স রেজিষ্ট্রেশন ফি জমাদানের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ আগস্ট পর্যন্ত। এ নিয়েও চলছে নানা সমালোচনা।
ক্লাস পরীক্ষা বন্ধের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ঈদ-উল-আজহার পর থেকে বিভিন্ন সমস্যার কারণে আমাদের ক্লাস হচ্ছে না। এতে আমরা শিক্ষার্থীরাই ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা দেড় মাসের মতো পিছিয়ে গেছি। পাঁচ - ছয় মাসের সেমিস্টারে এভাবে চলতে থাকলে আমরা সেশনজটে পড়ব। আশা করব কতৃপক্ষ দ্রুত এটা সমাধান করবেন। এবং সেমিস্টারের সময় বাড়িয়ে দিবেন।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক কাইয়ুম বলেন, ক্লাস বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের, অন্য কারো নয়। কারণ পরীক্ষা যদি সময় মতো হয় তাহলে কোর্স শেষ করার জন্য আমরা যথেষ্ট সময় পাবো না। অন্য দিকে একমাস সময় আমাদের ইতোমধ্যেই চলে গেছে ক্লাস ছাড়া৷ এভাবে চলতে থাকলে সেশনজটে পড়তে পারি আমরা। যা দূর্ভাগ্যজনক।
ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী জাকারিয়া হাবিব জীম বলেন, দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম এভাবে বন্ধ থাকা হতাশা জনক। ৫ মাসের সেমিস্টারের মধ্যে ইতোমধ্যে দেড় মাস শেষ ক্লাস ছাড়া। এভাবে চলতে থাকলে আমরা সেশনজটে পড়ব। করোনা মহামারীর কারনে এমনিতেই আমরা পিছিয়ে আছি। আশা করব কতৃপক্ষ দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করবেন।
শিক্ষকদের চলমান কর্মসূচি বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো: গালিব বলেন, আগামী শনিবার কর্মসূচি সম্পর্কে শিক্ষকদের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হবে ।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য চলতি বছরের ৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ডিন, চেয়ারম্যান ও দপ্তর প্রধানদের বৈঠকে ১০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষকগণ এ সিদ্ধান্ত কে সাধুবাদ জানিয়ে অনলাইন ক্লাসে ফিরেছিলেন। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়টি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল কুচক্রের অংশ হিসাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লিফট ও বাস বন্ধ করে দেয় যাতে শিক্ষকগণ চরমভাবে অপমানিত হয়ে সকল প্রকার ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছিলেন।
ঘটনার সত্যতা যাচাই ও দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য শিক্ষকদের সম্মতিক্রমে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত প্রতিবেদন পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে শিক্ষকদের জানানো হয়েছে। তবে অনলাইন ক্লাসের সময়সীমা শেষ হলেও শিক্ষকদের ক্লাসে না ফেরায় শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়বে। শিক্ষকদের কোনো কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ক্ষতি ও পিছিয়ে পড়া কোনোভাবেই কাম্য নয়। শারীরিক অসুস্থতার দরুণ চিকিৎসা নিতে আমি আগামী ৯ আগষ্ট পর্যন্ত দেশের বাইরে অবস্থান করবো, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে শিক্ষকরা আগামী ৯ আগষ্ট পর্যন্ত ক্লাসে ফিরতে পারতেন। আমি শিক্ষকদের প্রতি আহবান জানাবো তারা যেন শিক্ষার্থীদের সুষ্ঠু পড়ার পরিবেশ ও সেশনজটের দিক বিবেচনায় তারা যেন ক্লাসে ফেরেন।
আরএস