কুবি প্রতিনিধি
আগস্ট ৩, ২০২৩, ০২:২২ পিএম
কুবি প্রতিনিধি
আগস্ট ৩, ২০২৩, ০২:২২ পিএম
গত ৩১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ ও প্রবীন বিদায় অনুষ্ঠানে ‘দেশে দুর্নীতি হচ্ছে দেখেই উন্নতি হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন। এ বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ করায় দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার (কুবি) প্রতিনিধি ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকবাল মনোয়ারকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ দিয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বহিষ্কারাদেশের আইনের ভিত্তি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ কর্তৃপক্ষ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো শৃঙ্খলাবিধি নেই। সেজন্য কোনো শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করতে হলে একাডেমিক কাউন্সিল কিংবা সিণ্ডিকেটের সুপারিশ প্রয়োজন হয়। তবে ইকবালকে বহিষ্কারাদেশ দিতে এসবের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি।
বুধবার রাতে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়, উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন এর বক্তব্যকে ‘বিকৃত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তমূলক ‘মিথ্যা তথ্য’ প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বুত পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন ও সুপারিশে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের সভায় অনুমোদিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।’ কোন আইনে বহিষ্কারাদেশ দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি দাবি করে উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে ফোনকল কেটে দেন রেজিস্ট্রার।
প্রক্টরিয়াল বডির সুপারিশের বিষয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমরা প্রাথমিক প্রতিবেদন দিয়েছি। তবে আমরা কোনো সাংবাদিককে বহিষ্কারাদেশের জন্য সুপারিশ করিনি। আমরা শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছি।
এদিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড এ এফ এম আব্দুল মঈনের সাথে একাধিক সংবাদকর্মী মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক ইকবাল মনোয়ার বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমার সাথে কেউ কথা বলেনি। সংশ্লিষ্ট সংবাদের সকল তথ্য আমার কাছে সংরক্ষিত আছে।
বিধিবহির্ভূতভাবে বহিষ্কারাদেশ দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মুহা. মহিউদ্দিন মাহি বলেন, কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হয়। প্রশাসন বহিষ্কারাদেশ দিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
ইকবালকে বহিষ্কারের নিন্দা জানিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য প্রকাশের কারণে একজন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা ‘শ্যুট দ্য মেসেঞ্জার’ বা বার্তাবাহককে স্তব্ধ করার চর্চার উদাহরণ। একই সাথে এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের পরিচায়ক। যা সম্পুর্ণ অযৌক্তিক ও অনাকাঙ্খিত। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত এই প্রতিশোধমূলক ও অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত নিঃশর্ত প্রত্যাহার করা।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৩০ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের `নবীন বরন ও বিদায়` অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন `অনেকেই বলেন দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমি বলব উলটো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন। যে ঘুষ খায়, সে পদ্মা পাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মা পাড়ের গরীব মানুষেরা ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই অর্থনীতিবিদগণ দুর্নীতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করে তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকে। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গায় থেকে যদি বল, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাঁধা নয়।’
এআরএস