Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

স্বামীর অনুপ্রেরণায় শিক্ষকতা ছেড়ে প্রশাসন ক্যাডার রেক্সোনা

মোঃ শওকত জাহান

মোঃ শওকত জাহান

আগস্ট ১৭, ২০২৩, ০৭:৪০ পিএম


স্বামীর অনুপ্রেরণায় শিক্ষকতা ছেড়ে প্রশাসন ক্যাডার রেক্সোনা

মুক্তাগাছার খেরুয়াজানী ইউনিয়নের সৈয়দগ্রাম গ্রামের মোঃ আব্দুল কদ্দুস ও মোছাঃ শরিফা বেগম দ¤পতির তিন সন্তানের বড় মেয়ে রেক্সোনা কাউসারী ছোট থেকেই যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতেন সেখানেই তার শিক্ষকতা করার তীব্র আকাক্সক্ষা জন্ম নিতো। তাই তিনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে জামালপুরের শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। 

সম্প্রতি তিনি স্বামীর সাহস ও অনুপ্রেরণায় তিনি ৪১ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, মুন্সিগঞ্জে এসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্বপ্নজয়ের গল্প নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

বিসিএস যাত্রার গল্প ও স্মরণীয় ঘটনা

বিসিএসের প্রতি কখনোই আকর্ষণ ছিলো না। ছোটো থেকেই শিক্ষকতার প্রতি প্রবল আকর্ষণ ছিলো তার। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক না হতে পেরেও শিক্ষকতার প্রতি আকর্ষণের কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগদান করেন। কিন্তু এখানে পদোন্নতি, ভবিষ্যতের নানা অনিশ্চয়তা এবং সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো শিক্ষকতার অনিশ্চয়তায় নিজেকে প্রমাণ করার জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে শিক্ষকতা ছেড়ে বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন। তখন স্বামী-স্ত্রী দুজনের সংসার। তারা দুজন ক্লাসমেট-বন্ধু এবং তাদের বোঝাপড়া ভালো হওয়ায় তাকে খুব একটা সংসারের চাপ সামলাতে হয় নি। ৪১তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার পূর্বেই বাংলাদেশ পল্লীবিদ্যুতায়ন বোর্ডের এজিএম হিসেবে যোগদান করার পর চাকরীর চাপে ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে উঠে নি তার। ভাইভার পূর্বে তার সন্তান হওয়ায় তখন তো আরও প্রস্তুতি নিতে পারেন নি। ব্যাটে-বলে মিলে যাওয়াতে তবুও ভাইভা ভালো হয়েছিল। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর সময়ের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে লিখিত পরীক্ষার আগের সময়টায় অনিশ্চয়তার মাঝে খুব খারাপ সময় পার করে এসেছেন। তখন বারবার ডিপ্রেশনে চলে যেতেন আর ভাবতেন কেনো চাকরি ছেড়েছেন।

পর্দার আড়াল থেকে অনুপ্রেরণা

ইউএনওদের দেখে তার আব্বা-আম্মার একটা  স্বপ্ন ছিলো সেও যেনো এমন কিছু হতে পারে। তবে তার এই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার ক্ষেত্রে প্রচন্ড পরিমাণে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে তার স্বামী। সে বলেছে চাকরি ছেড়ে চলে আসতে, চাকরি করতে করতে বিসিএস হবে না। তারপর চাকরি ছেড়ে চলে আসার পর তার স্বামী সবধরনের সহযোগিতা করেছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

তার উপর অর্পিত দায়িত্ব সৎ থেকে নিষ্ঠার সাথে পালন করবেন বলে জানান। কাজের মধ্যে পরিবর্তন  এবং বৈচিত্র্য এনে কাজ করবেন, যেনো সবাই বলে সৎ মানুষজন পৃথিবীতে এখনো আছে, ক্ষমতা পেলেই মানুষ নষ্ট হয়ে যায় না। আর তার জীবনে কোনোদিন নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা, ঝামেলা, বাণিজ্য দেখবেও না, দেখতেও দিবে না। কোনোদিন লবিংও করবে না, কারোর কাছ থেকে ফেভার নিবেও না, কাওকে ফেভার দিবেও না।

বিসিএস যাদের স্বপ্ন তাদের জন্য পরামর্শ

বিসিএস যাদের স্বপ্ন তাদের জন্য বলেন, "বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে, বিসিএস ছাড়া পৃথিবীতে কিছু নেই এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। বিসিএস ছাড়াও অনেক চাকরিতে সম্মান আছে, আনন্দ আছে, সমাজসেবা করা যায় এবং মানুষের ভালোবাসা পাওয়া যায়। বিসিএস জয়ের রাস্তাটা কঠিন কিছুও নয়। প্রচলিত একটি ধারণা আছে বিসিএসের জন্য সারাক্ষণ কারি কারি বই পড়তে হয়, ধারণাটা একদমই ভুল। মূল ব্যাপার হচ্ছে মাথা ঠান্ডা রেখে সবকিছুর কিছু কিছু আর কিছু কিছুর সবকিছু পড়তে হবে। আমাকে সেরা হতে হবে, প্রথম হতে হবে, এডমিন ক্যাডার হতে হবে এমন চিন্তা না করে মাথা ঠান্ডা রেখে নিজের উপর আস্থা ও ভরসা রেখে ধীরস্থিরভাবে বুঝে বুঝে এবং বেছে বেছে পড়াশোনা করলেই বিসিএসে সফল হওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করি।"

আরএস

Link copied!