Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪,

বাবার সঙ্গে চা বিক্রি করে বিসিএস ক্যাডার ইমরোজ

‘আমার মতো ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পাশে সারাজীবন থাকতে চাই’

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

আগস্ট ২০, ২০২৩, ০২:৩৬ পিএম


‘আমার মতো ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পাশে সারাজীবন থাকতে চাই’

পারিবারিক আর্থিক অভাবে ছেলে বেলায়েত হোসেন ইমরোজের পড়াশোনা বন্ধ করে বসিয়েছিলেন চায়ের দোকানে। বাবার সঙ্গে চা বিক্রি ও কৃষি কাজ করেই ৪১তম বিসিএসে সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিষয়ে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ইমরোজ।

বেলায়েত হোসেন ইমরোজ শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর বাছারকান্দি গ্রামের শামছুল তালুকদার ও হালিমা বেগম দম্পত্তির ছেলে। তারা চার ভাইবোন।

জানা যায়, ইমরোজ সকাল-বিকাল বাবার সাথে চায়ের দোকান সামলিয়ে স্কুল-কলেজের সকল পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে। চলতি বছর বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছেন। বিসিএস ক্যাডার বেলায়েত হোসেন ইমরোজের শিক্ষার হাতেখড়ি তাদের গ্রামের ৩১নং পশ্চিম বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর স্থানীয় বিনোদপুর মৌলভী কান্দি দাখিল মাদরাসা থেকে এসএসসি ও  শরীয়তপুর সরকারি কলেজে এইচএসসি শেষ কর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। স্নাতক শেষে ২০১৯ সালে ওই বিভাগ থেকে তিনি স্নাতকোত্তর পাস করেন। পড়ালেখা শেষে সরকারি চাকরির প্রস্তুতিও নিতে শুরু করেন ইমরোজ। ২০২২ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় সদর উপজেলায় প্রথম হন ইমরোজ।

এরপর গেল (০৩ আগস্ট) বৃহস্পতিবার ৪১তম বিসিএসের সুপারিশ প্রাপ্তদের নামের তালিকা প্রকাশ করে পিএসসি। সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে দর্শন বিষয়ে সারা দেশে দ্বিতীয় হয়েছেন ইমরোজ। তার সফলতায় খুশি বাবা মা সহ স্থানীয়রা।

৪১তম বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে চুড়ান্তভাবে সুপারিশ প্রাপ্ত বেলায়েত হোসেন ইমরোজের সঙ্গে কথা হয় আমার সংবাদ পত্রিকার প্রতিবেদক নয়ন দাসের। বেলায়েত হোসেন ইমরোজ বলেন, প্রাথমিকের সমাপনী পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর বাবা আমাকে আর স্কুলে ভর্তি করেননি অভাবের কারণে। গ্রামের রাস্তার পাশে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান ছিল আমাদের। সেই দোকানে নিয়ে চা বিক্রি করতে বসিয়ে দেন বাবা। বন্ধুরা হাইস্কুলে ভর্তি হলেও টাকার অভাবে আমার আর ভর্তি হওয়া হয়নি। বছরের তিন মাস কেটে যাওয়ার পর বৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে জানতে পারি আমি বৃত্তি পেয়েছি। বৃত্তি পাওয়ার খবর শুনে আমার শিক্ষক ও মামা এসে বাবাকে বুঝিয়ে আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। বাবা পড়াশোনার খরচ দিতে পারত না বলে বৃত্তির প্রাপ্ত টাকা দিয়েই আমি পড়াশোনার খরচ বহন করি। এভাবেই কষ্ট করে আমি দাখিল ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই।

ইমরোজ আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ভগ্নিপতির কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম চাকরি পেয়ে শোধ করার শর্তে। ২০১৪-১৫ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা শুরু করি। মা মানসিক ভাবে ও মামা আনিছুর রহমান আর্থিকভাবে আমাকে পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন। এই খুশিতে মা, বাবা ও মামাসহ আমার সকল শিক্ষাগুরুর নিকট আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা না হলে আমার হয়ত আজকের এ ফলাফল করা সম্ভব হতো না। আমি চাই গ্রামের কোনো কলেজে শিক্ষকতা শুরু করব। আমি আমার মতো ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের পাশে সারাজীবন থাকতে চাই।

অদম্য মেধাশক্তির অধিকারী বেলায়েত হোসেন ইমরোজ বর্তমানে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে যোগদানের পর দেশের ঝড়ে পড়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার ইচ্ছে রয়েছে তার।

ইমরোজের বাবা শামছুল তালুকদার বলেন, ছেলেটাকে আমি অভাবের কারণে চায়ের দোকানে বসিয়েছিলাম। আমার ছেলে ইমরোজ এখন বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। আমি অনেক আনন্দিত। ওরে আমি পড়াশোনার জন্য টাকা-পয়সা ও ভালো পরিবেশ দিতে পারিনি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি, আমার ইমরোজের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

এআরএস

Link copied!