আবু হাসনাত তুহিন, পবিপ্রবি প্রতিনিধি
আগস্ট ২১, ২০২৩, ০৮:৩২ পিএম
আবু হাসনাত তুহিন, পবিপ্রবি প্রতিনিধি
আগস্ট ২১, ২০২৩, ০৮:৩২ পিএম
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) দক্ষিণবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসটির পরিসর ছোট হলেও এর সৌন্দর্য সকলকে বিমোহিত করে। তবে প্রশাসনিক অদক্ষতা, স্থবিরতা, অজ্ঞতা, উদাসীনতা, সিদ্ধান্তহীনতা, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও সূদুরপ্রসারী চিন্তাভাবনার অভাবে ধীরে ধীরে বিশ্ববিদ্যালয়টির মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সচেতন মহল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। আমাদের প্রতিনিধি আবু হাসনাত তুহিন পবিপ্রবিতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এর সমাধান নিয়ে শিক্ষার্থীরা কি ভাবছেন তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন।
হলের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে এর সমাধানের উপায় নিয়ে মত দিয়েছেন আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদের ৫ম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মীর মো. নূরুন্নবী। তিনি বলেন, শিক্ষকদের নিয়মিত হল পরিদর্শন ও সমস্যা সমাধান করা দরকার। এছাড়াও সহকারী প্রভোস্ট স্যারদের দায়িত্ব যেহেতু ভাগ করে দিয়েছে, সেই অনুযায়ী মিটিং অথবা ছাত্রদের সাথে কথা বলা। আর ছাত্রদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক রিপোর্ট নেওয়া। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। ডাইনিং এর খাবারের মান উন্নত করা। একই খাবার এর তালিকা বিগত ৪ বছর ধরে চলছে। এখানে ডাইনিং ও ক্যান্টিন নিত্য নতুনভাবে সাজানো দরকার বলে আমি মনেকরি। আর খাবারের সাথে মূল্যের সমন্বয় করা অনেক বেশি প্রয়োজন। রিডিং রুমে চেয়ার এর সংখ্যা বাড়ানো। দরকার হলে এক সাথে স্থায়ী ৫-৬ টি চেয়ার দেওয়া। নতুন টিউবওয়েল বসানো হচ্ছে। এক্ষেত্রে মাঝে মাঝে আর্সেনিকের মাত্রা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। ছাত্রদের কাছ থেকে ঝাঁড়ুদার ও ক্লিনারদের কাজের উপর রিপোর্ট শিক্ষকদের গ্রহণ করা উচিত। প্রভোস্ট স্যারদের মাঝেমধ্যেই ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ও ছাত্রদের সমন্বয়ে হলের পরিবেশ ঠিক রাখতে হবে।
কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং এম কেরামত আলী আবাসিক হল থেকে ক্যাম্পাসের যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা। হল থেকে ক্যাম্পাসের যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের হাজারো শিক্ষার্থীর ভোগান্তি কমাতে প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকতে হবে। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে পানি সমস্যার ভোগান্তিতে আমরা। কেরামত আলী হলে পানি সরবরাহের জন্য একটিমাত্র টিউবওয়েল আছে। তারপর অধিকাংশই টিউবওয়েল এর পানি পানে অভ্যস্ত নই। এজন্য হলের প্রতিটি ফ্লোরে বিশুদ্ধ ফিল্টার স্থাপন করলে আমরা উপকৃত হতাম। আবার দীর্ঘদিন ধরে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকটি ওয়াশরুমের ঝর্ণা অচল অবস্থায় পড়ে আছে। তবুও কোনো তদারকি নেই। অরবিট এবং টাইটানের মতো গণরুমে নেই কোনো ইলেকট্রিক ফ্যান এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। এখানে আমরা প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী থাকি। প্রচন্ড গরমে অনেক শিক্ষার্থীকে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকতে দেখেছি। তাই প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে অনতিবিলম্বে ক্যাম্পাস থেকে হলের যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানির ফিল্টার এবং ইলেক্ট্রিক ফ্যানের সুব্যবস্থা করে দিতে।
আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদের শের-ই-বাংলা হল-১ এর শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান বলেন,আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীদের দিনের বেশীরভাগ সময় হলে কাটে। তাই আমরা যে হলগুলোতে অবস্থান করি তার উন্নয়ন একান্তই কাম্য। কেননা এটি আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপন এর শর্ত। বর্তমানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আটটি হল রয়েছে এবং দুইটি হল নির্মাণাধীন। হলের বিদ্যমান সমস্যার মধ্যে রয়েছে-খাবার পানি, অপর্যাপ্ত টয়লেট ও গোসলখানা, অপরিষ্কার টয়লেট, ডাইনিং ও ক্যান্টিন এর বেহাল দশা, ধীরগতির ইন্টারনেট, লাইব্রেরি ও রিডিং রুম, ইনডোর গেমস এর ব্যবস্থা না থাকা, অতিথিদের রুম, গণরুমের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, এক রুমে গাদাগাদি শিক্ষার্থী থাকা। এছাড়াও হলের বাইরের সমস্যাগুলোর মধ্যে রয়েছে- মানোন্নয়ন পরীক্ষার সুযোগ না থাকা যা অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি সপ্তাহের ৩ দিনই বন্ধ থাকে এবং দিনের পর্যাপ্ত সময় খোলা থাকেনা যার ফলে শিক্ষার্থীদের বিস্তর পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি হয় নি। এছাড়াও টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের খাবারের অনেক অসুবিধা হয়। বর্তমানে সমস্যা গুলোর সমাধান যেভাবে করা যেতে পারে- প্রতি বছর হলে আমাদের যে বাজেট দেয়া হয় সেটিকে প্রয়োজন অনুযায়ী বৃদ্ধি করে হলের মান উন্নয়ন করা, কেরামত আলী হল পর্যন্ত পিচ রাস্তা করা এবং লাইট সংযোজন, গণরুম ব্যবস্থার সমাপ্তি, হলের প্রতিটি রুমে চারজন করে শিক্ষার্থী থাকার ব্যবস্থা করা, নির্মাণাধীন হলগুলোর কাজ দ্রুত শেষ করা, হলে সুস্থ বিনোদন এর আয়োজন করা, মাদক এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া, নিয়মিত টয়লেট পরিষ্কারের ব্যবস্থা রাখতে হবে, পানির ফিল্টার স্থাপন, রুম এর ভেতর ইলেকট্রিক সুইচ বা লাইন গুলো নিয়মিত ঠিক করা, ডাইনিং ও ক্যান্টিনের মান উন্নয়ন করা, হলের আশপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখা, বহিরাগতদের প্রবেশে কড়াকড়ি করা, লাইব্রেরি স্থাপন ও রিডিং রুম এর উন্নয়ন করা, হলের প্রতিটি সুবিধা যাতে নিশ্চিত হয় সেটার খোঁজ নেয়া। এছাড়া প্রতিটি হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এর শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাদের সদিচ্ছা ও সুষ্ঠ পরিকল্পিত কাজ আমাদের হল জীবন কে আরো সহজ ও আনন্দময় করে তুলতে পারে।
পবিপ্রবির বহি:স্থ ক্যাম্পাসের ডিভিএম বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বলেন, আমি এক মাস গণরুমে ছিলাম। আমাদের তো বড় হল নাই, ছোটো ছোটো বিল্ডিংয়ে কক্ষ বরাদ্দ দেয়া হতো। যদিও বিল্ডিংগুলো জড়াজীর্ণ, অনেক বিল্ডিংয়ের ছাঁদ ভেঙ্গে পড়েছে। ১৫-২০ জনের জন্য একটি টয়লেট। আর আমাদের ক্যাম্পাসে পানি লবণাক্ত, এটা একটা সমস্যা। নতুনরা এসেই পানির সমস্যায় পড়ে। পড়ার জন্য গণরুমে পর্যাপ্ত টেবিল নাই। এরপর রুম দিয়েছে ৫-৬ জনের। রুমগুলোতে কোনো ফ্যানের ব্যবস্থা নেই, থাকলেও লাইন দেওয়া নেই। কিছু রুমে আছে ফ্যান। আর ডাইনিংয়ে চড়া দামে খাবার কিনতে হয় যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্য সর্বোচ্চ হতে পারে। অনেক রুমে টয়লেট থেকে পানি আসে। আমাদের ক্যাম্পাসে ভালো একটি ক্যান্টিন নাই। মেডিকেল ফ্যাসিলিটিজ নেই। ক্যাম্পাসে কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে তার চিকিৎসার কোনো ব্যাবস্থা নেই। ক্লাসে সাউন্ড সিস্টেম নেই যার ফলে পেছন পর্যন্ত লেকচার শোনা যায়না, অনেক কিছু মিস হয়। সবচেয়ে বড় সমস্যা এখানে পরিবহন ব্যবস্থা খুব খারাপ। একটা পুরনো বাস রয়েছে। আসলে এটাকে মুড়ির টিন বললেও ভুল হবেনা।কর্মচারি, শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রী একই বাসে যাতায়াত করতে হয়। জায়গার সংকুলান হয়না, দাঁড়িয়ে যাওয়ারও জো থাকেনা। তার উপর লক্করঝক্কর অবস্থা। যেকোনো সময় দূর্ঘটনা হতে পারে। বিল্ডিং সব কয়টা জড়াজীর্ণ।
একই প্রশ্নে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে কেউ ১০০% সুবিধা ভোগ করবে। আর বরিশাল ক্যাম্পাসে প্রশাসনের কাছে অবহেলার শিকার আমরা। নতুন একাডেমিক ভবন ও হল নির্মাণ সহ আরো সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো যেতে পারে। পুরণো বিল্ডিংগুলো অন্ততপক্ষে যাতে চুনকামসহ মেরামত করা হয় এটা চাই। লাইব্রেরীতে মজুদ রাখা পুরনো আমলের এডিশনের বই পরিবর্তন করে নতুন বই সংযোজন করা উচিত। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ফিল্টার করা বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা উচিত। হলে স্বল্পমূল্যে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। মেডিকেল সেবা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি মেইন ক্যাম্পাসের সাথে বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এআরএস