হৃদয় সরকার, বশেমুরবিপ্রবি
জানুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০১:৩৯ পিএম
হৃদয় সরকার, বশেমুরবিপ্রবি
জানুয়ারি ১৭, ২০২৪, ০১:৩৯ পিএম
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উদিত এবং পশ্চিম দিগন্তে অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়টিতে পিতার আদর স্নেহ ভোগ করেন ৫৫ একরের লক্ষাধিক দেশি-বিদেশি বৃক্ষ এবং বিভিন্ন জাতের ফুল ও ফলের চারা। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে একটি সংসারের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্যটিও তার কাছে আরেকটি সংসারের মত হয়ে উঠেছে।
পরিবর্তনীয় মৌসুমে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে নতুন নতুন সাজে রাঙিয়ে তুলেন এক মালী। যে নিজের সন্তানের ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয়টিকে লালন করছে, সাজিয়ে তুলছে। ফলে বৃক্ষপ্রেমী মানুষদের মন কেড়ে নিচ্ছে তার হাতে লাগানো বিভিন্ন গাছের সৌন্দর্য্যে।
বলছিলাম, জাতির পিতার নামাঙ্কিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(বশেমুরবিপ্রবি) স্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করা এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তির কথা। যার কোমল হাতের ছোঁয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিতার আদর-যত্ন ভোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষাধিক বনাজি, ঔষধী, ফুলজ এবং ফলজ বৃক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে তিসি রন`দা নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম রনথ চন্দ। বেড়ে উঠা দেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর জেলার আমইর গ্রামে। ঘরে দুই ছেলে এক মেয়ে মিলে পাঁচজনের সংসার রনথের। স্থায়ী ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিকিৎসা-ভাতাদিসহ মাসিক বেতন পান ১৬ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়েই কোনোরকমে সংসারের খরচ চালিয়ে নেন রনথ।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শুরুটা তেমন একটা ভালো ছিলোনা। বৃক্ষের প্রতি প্রেম এবং যত্ন দেখে ২০১৭ এর কিছু সময় পর তৎকালীন উপাচার্য খন্দকার নাসিরউদ্দিন তাকে নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসময় রনথ মুকসুদপুর হর্টিকালচার সেন্টারে কাজ করতেন। বেতন ছিলো দৈনিক ৪৫০টাকা। নাসিরউদ্দিন তার কাজের দক্ষতা দেখে দৈনিক ৩৫০টাকা মজুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসেন৷ প্রথমাবস্তায় রনথ রাজি না হলেও পরবর্তীতে কোনো এক অজানা কারনে অস্থায়ী মাস্টারোলে ৩৫০টাকায়ই কাজ করতে রাজি হয়ে যান তিনি। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য বর্ধনের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে৷
ঘড়ির কাটা যতই সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, রনথের দায়িত্বও তত বাড়ছে। বৃক্ষপ্রেমী নাসিরউদ্দিনের মন জয় করা বেশ দুঃসাধ্য ছিলো৷ রনথও নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য্য বর্ধনে দেশ-বিদেশ থেকে নানান প্রজাতি বনাজী, ঔষধী, ফুল ও ফলের চারা নিয়ে আসতে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সাজিয়ে তুলতে থাকেন নিজের বাড়ির আঙ্গিনার মত। এলাকায় আগে অবশ্য টুকটাক মালির কাজ করেছেন রনথ। কিন্তু এবারের কাজটা একটু ভিন্ন। তাকে সামলাতে হবে পুরো ৫৫ একরের সৌন্দর্য্য। যাতে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে না পারে৷ তাই প্রতিদিন নিজ হাতে যত্ন নিতে শুরু করেন ৫৫ একরের লক্ষাধিক বৃক্ষ এবং চারা গাছের। বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে নানান রংয়ের ফুল ও ফলের চারা লাগিয়ে এক অসাধারণ সৌন্দর্য্য তৈরি করেছেন রনথ। এখানে ঘুরতে আসলে যেকোনো মানুষের মন কেঁড়ে নিবে রনথের হাতে লাগানো ফুলের চারাগুলো।
প্রথম অবস্থায় দৈনিক ৩৫০টাকা মজুরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য্য বর্ধনে কাজ করেন তিনি। পরবর্তীতে উপাচার্য পরিবর্তনের পর তারও ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায়৷ চলতি উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহনের পর তাকে পূর্বের বেতন থেকে ১৫০টাকা বৃদ্ধি করে আনুষঙ্গিক ভাতাদিসহ ৪৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। এতেই তার সংসার চলে।
বলা হয়ে থাক, এটিই দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে৷ সবচেয়ে বেশি বিদেশি প্রজাতির বৃক্ষ এবং চারাগাছ রয়েছে। রয়েছে হারিয়ে যাওয়া হলুদ শাপলা, হলুদ প্রজাতির বাঁশ ঝাড়, যেটি দেশের অন্যান্য স্থানে দূর্লভ। এখানে রয়েছে দেশ বিদেশের নানান প্রজাতির ফলজ, বনজ, উদ্ভিজ্জ এবং ভেষজ বৃক্ষ। রয়েছে বাহারি জাতের ফুলের সমাহার। তাই নিয়মিত শিক্ষার্থীদের মন কেড়ে নিচ্ছে ৫৫একরের এই ছোট্ট বিশ্ববিদ্যালয়টি। এখানে রয়েছে ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত আইসক্রিমবিন ফল, রয়েছে থাইল্যান্ডের এবকেডো ফল, আফ্রিকান ডুমুর ফল, থাইল্যান্ডের সফেদা , ইন্ডিয়ান স্থলপদ্ম এবং রাধাচূড়া, জবা ফুল, রয়েছে ভিয়েতনামি নারিকেল যেটি ৩মাসে ফল দেয় বলে জানা যায়। এখানে শোভা পেয়েছে থাইল্যান্ডের সোনালী বাঁশ সহ ইনকা গাদা, ছেলবিয়া, ডায়ানথাস, পিটুনিয়া, উইপিন দেবদারু, চায়না গাদা`সহ দেশি বিদেশি নানান জাতের উদ্ভিদের সমাহার।
এআরএস