নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৯, ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম
নিজস্ব প্রতিবেদক
জানুয়ারি ২৯, ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম
নতুন শিক্ষাক্রমে চালু হওয়া জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের `নবম শ্রেণির বিজ্ঞান` বই বিভিন্ন ব্লগ, কোচিং সেন্টারের ওয়েবসাইট থেকে কপি করা হয়েছে । বইয়ের লেখকরা বেশ কিছু টপিক কৌশলে অনলাইন থেকে কপি-পেস্ট করার চেষ্টা করেছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে ভুল-ভাল ব্যাখ্যা।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) নাদিম মাহমুদ নিজের ফেসবুক আইডিতে এ বিষয়টি প্রকাশ করেছে। নাদিম মাহমুদ বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো সাইন্স বিভাগে পোস্ট ডক হিসেবে গবেষণা করছে।
তিনি গতবছরও সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বই: হুবহু চুরি আর গুগলের অনুবাদে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? শিরোনামে প্রথম আলোয় একটি লেখা লিখেছেন। দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা পর, সেই বইটি চলতি শিক্ষাবর্ষের মুদ্রণে সংশোধন আনা হয়েছে। তিনি মনে করেন,
এগুলো নিখাদ বড় ধরনের অপরাধ। পাঠ্যপুস্তকে চৌর্যবৃত্তিতে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার ব্যবস্থায় কখনো চোখে পড়েনি, তাই বলে এমন প্রমাণ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা এবার কি বলবেন? পরীক্ষামূলক সংস্করণ কিংবা পরিমার্জনের সুযোগ রয়েছে, এমন প্রথাগত কথা বলেই এনসিটিবি, শিক্ষামন্ত্রণালয় পার পাবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি এই লেখাটি পড়বেন? তিনি চোখ বুলিয়ে দেখবেন যে, পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে তিনি যে দায়িত্বভার যাদের কাঁধে তুলে দিয়েছেন, তাঁরা কতটা নির্দয়ভাবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করছে? অন্যের মেধা চুরি করে, নিজেদের মেধাকে ভোঁতা বানিয়ে রাখছে?
নাদিম মাহমুদের ফেসবুক আইডি থেকে জানা যায়, বইটির প্রথম অধ্যায় (বল, চাপ ও শক্তি) এর তৃতীয় পৃষ্ঠায় ১.১.১ অনুচ্ছেদে লেখকরা স্থিতি ও গতি জড়তা শিক্ষার্থীদের বুঝানোর জন্য কয়েকটি উদাহরণ দিয়েছেন, তা এসেছে মিশর ভিত্তিক একটি সফটওয়ার কোম্পানির ব্লগ থেকে।
পাঠ্যপুস্তকটির ৩ নং পৃষ্ঠায় বলা হচ্ছে, তোমরা যদি বাসে কিংবা ট্রেনে দাঁড়িয়ে থাক, এবং হঠাৎ বাস কিংবা ট্রেনটি চলতে শুরু করে তখন তোমরা লক্ষ করে থাকবে যে তোমরা পিছন দিকে পড়ে যেতে চাও। বাস কিংবা ট্রেনের মেঝেতে স্পর্শ করে থাকা তোমার শরীরের নিচের অংশ সামনের দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করলেও শরীরের উপরের অংশ তার আগের অবস্থানেই স্থির থাকতে চায়, সেজন্য তোমার শরীরের উপরের অংশ পেছন দিকে হেলে পড়ে এবং তুমি যেতে উদ্যত হও।
এই উদাহরণটুকু এসেছে মিশরের https://praxilabs.com/en/blog/2021/12/19/examples-of-law-of-inertia/ ওয়েব সাইটটি থেকে। ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল আপডেট হওয়া প্রাক্সিল্যাবস ডটকমে প্রাত্যহিক জীবনে `জড়তার ২০টি উদাহরণ দেয়া হয়েছে তার একটিতে লেখা হয়েছে` When a bus or a train starts suddenly, the passenger standing inside it falls backward: It happens because the feet of the passenger being in contact with the floor of the bus come in motion along with the bus but the upper part of the body remains at rest due to inertia of rest. Hence the passenger falls backward। যা নবম শ্রেণির বইয়ের ওই অংশটুকু ভাবানুবাদ মিলে যায়।
একই টপিকে পাঠ্যপুস্তকটির দ্বিতীয় উদাহরণে বলা হয়েছে, একটি গ্লাসের ওপরে এক টুকরো শক্ত কাগজ বা কার্ডবোর্ডের ওপর একটি মুদ্রা রেখে তুমি যদি টান দিয়ে কাগজটি সরিয়ে নাও, দেখবে মুদ্রাটি কাগজের সঙ্গে চলে না এসে গ্লাসের ভেতরেই পড়ছে। অর্থাৎ, কাগজটি সরে গেলেও মুদ্রাটি তার আগের অবস্থানেই থাকার চেষ্টা করেছে। এই যে, স্থির থাকা একটি বস্তু স্থির হয়েই থাকতে চায়, এই ঘটনাকে স্থিতি জড়তা বলে।
এটি চিরায়ত একটি সাধারণ উদাহরণ হলেও, প্রাক্সিল্যাবস ডটকমে উদাহরণে ভাবের সাথে মিলে যায়। ওই ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, If an index card is placed on top of a glass with a penny on top of it, the index card can be quickly removed while the penny falls straight into the glass, as The cardboard moves away due to the force applied by the finger but the coin remains at its position due to inertia of rest and hence falls into the glass.
ওই টপিকের তৃতীয় উদাহরণ হিসেবে টেক্সবইয়ে লেখা হয়েছে, তোমরা নিশ্চয় খেয়াল করেছ যে, চলন্ত গাড়ি হঠাৎ ব্রেক করে থামিয়ে দেয়া হলে আমাদের শরীর ঝটকা দিয়ে সামনের দিকে হেলে পড়তে চায়। ব্রেক করার কারণে শরীরের নিচের অংশ গাড়ির সঙ্গে থেমে গেছে কিন্তু আমাদের শরীরের উপরের অংশ তখনো গতিশীল রয়ে গেছে, এজন্য সেটি সামনে হেলে পড়ে।
এই উদাহরণটিও ওই ওয়েবসাইট থেকে টুকলি করা হয়েছে। ওয়েব সাইটে লেখা আছে, When the bus stops suddenly, people fall forward. When the driver of a bus brakes suddenly, the lower part of the body comes to rest as the bus comes to rest but the upper part of the body continues to move forward due to inertia of motion. As a result, a forward force is exerted on the body and we fall in the forward direction.
চতুর্থ উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, তোমরা কি কখনও কাউকে চলন্ত বাস বা ট্রেন থেকে নামতে দেখেছ? যারা এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ তারা মাটিতে পা দিয়ে কিন্তু থেমে যায় না খানিকটা দূরত্ব দৌড়ে যায়, তারা জানে মাটিতে নেমে গেলে তাদের পা থেমে যাবে কিন্তু শরীরের বাকি অংশ তখনও গতিশীল রয়ে যাবে, তাই শরীরের নিচের অংশ সমান বেগে ছুটিয়ে না নিলে সে হুমকি খেয়ে পড়ে যাবে।
এই সাধারণ উদাহরণটি ভাষাগত ও ভাবগতভাবেই ওই ওয়েব সাইট থেকে এসেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। ওয়েবসাইটে লেখা আছে, If you jump from a car or bus that is moving, your body is still moving in the direction of the vehicle. When your feet hit the ground, the grounds act on your feet and they stop moving. You will fall because the upper part of your body didn’t stop, and you will fall in the direction you were moving
এইসব উদাহরণ হরহামেশাই বিভিন্ন সময় আমরা শুনি বা জানি, তবে বাক্যের গঠনশৈল্য পর্যবেক্ষণ করলে অনেকটাই অনুধাবনযোগ্য যে আমাদের পাঠ্যপুস্তকের রচিয়তারা কৌশলেই ওই ওয়েবসাইটের আশ্রয় নিয়েছে।
পাঠ্যপুস্তক লেখা একটি অ্যাকাডেমিক চর্চার অংশ। একটি রিসার্চ পেপার লিখতে যেসব নিয়মকানুন মানতে হয়, টেক্সটবুক লিখতেও একই পথ অনুসরণযোগ্য। কুম্ভ লিক বৃত্তির পরিভাষায় উৎসের `স্বীকারোক্তি` না করে প্রকাশিত কোন আর্টিকেলে মূল ভাব বা অংশ নেয়া এক ধরনের অপরাধ। আর সেই বিষয়টি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা বা চর্চার নিমিত্তে আমি নিয়মিত লেখালেখি করে যাচ্ছি। পাঠ্যপুস্তকের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এই ধরনের টুকলি `অগ্রহণযোগ্য` এবং একাডেমিকভাবে ঘৃণিত।
আমার পক্ষে সম্পূর্ণ বই ধারে ধরে কুম্ভিলকবৃত্তি বের করা সম্ভব নয় কিংবা সেই সময়ও আমার নেই। তাই কয়েকটি অধ্যায় মনোযোগ দিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছি, যেখানে এই ঘৃণিত চর্চায় চোখে পড়েছে।
দশ নাম্বার অধ্যায় ছিল `সালোকসংশ্লেষণ` উপর। এই অধ্যায়ের ১৫০ পৃষ্ঠায় `ক্লোরোপ্লাস্টের গঠনে বলা হয়েছে, এটি মোটামুটি 1-2 μm পুরু এবং এর ব্যাস 5-7 μm। ক্লোরোপ্লাস্ট আকার ডিম্বাকৃতির এবং এটিতে দুটি ঝিল্লি আছে : একটি বাহিরের ঝিল্লি এবং একটি অভ্যন্তরীণ ঝিল্লি। বাহিরের এবং অভ্যন্তরীণ ঝিল্লির মধ্যে প্রায় 10-2 0nm চওড়া আন্তঃঝিল্লি স্থান। অভ্যন্তরীণ ঝিল্লির মধ্যবর্তী স্থানটিই হলো স্ট্রোমা: ক্লোরোপ্লাস্টে গ্রানা নামের অঞ্চলে সালোকসংশ্লেণের আলো শোষণ করে রাসায়নিক শক্তি উৎপাদন হয় এবং স্ট্রোমা অঞ্চলে সেই রাসায়নিক শক্তি ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে শর্করা গঠনের বিক্রিয়াটি ঘটে। সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্লোরোপ্লাস্টের ভেতরে কয়েকটি অঙ্গাণু হচ্ছে
দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন ঠিক রেখে হুবুহু এই অংশটি তুলে আনা হয়েছে,
approximately%2010%2D20%20nm%20wide.oroplasts%20are%20commonly% ওয়েবসাইট থেকে। ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর আপলোডকৃত CD Genomics Blog ক্লোরোপ্লাস্টের গঠনে যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তার বাংলা অনুবাদে পাঠ্যপুস্তকে এসেছে। মূল ওয়েবসাইটে ক্লোরোপ্লাস্টের গঠনে বলা হয়েছে, Chloroplasts are commonly found in guard cells located in plant leaves, roughly 1–2 μm thick and 5–7 μm in diameter. Chloroplasts are oval-shaped and have two membranes: an outer membrane and an inner membrane. Between the outer and inner membrane is the intermembrane space approximately 10-20 nm wide. The space within the inner membrane is the stroma, the dense fluid within the chloroplast. This is the site at where the conversion from carbon dioxide to carbohydrates takes place.
একই অংশে পাঠ্যপুস্তকে ক্লোরোফিল, থাইলাকয়েড, গ্র্যানামের যে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হয়েছে, সেই অংশটুকুও হুবহু ওই ওয়েবসাইটে থেকে আনা হয়েছে।
যদিও পাঠ্যপুস্তক মৌলিক গবেষণাপত্র নয়, তবে পাঠ্যপুস্তকে যেসব তথ্য আসে, তা গবেষকদের প্রকাশিত দীর্ঘদিনের পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে। আর সেইসব তথ্য উৎস উল্লেখপূর্বক লেখা পাঠ্যপুস্তকের গাম্ভীর্য যেমন বাড়িয়ে তোলে, তেমনি গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে না।
কপি-পেস্টের খাতা থেকে বাদ পড়েনি কোচিং সেন্টারও। প্রতিবেশী ভারতের বাইজুস কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রস্তুত করা `শিক্ষা সহায়িকা বা ম্যাটেরিয়ালস` থেকে সরাসরি চুরি করা হয়েছে বাইজুস ডটকম থেকে।
অনুসন্ধানী পাঠের ১২ নাম্বার অধ্যায়ের `বাস্তুতন্ত্রে` ১২.৭ অনুচ্ছেদের ২০২-২০৩ পাতায় নাইট্রোজেন চক্র অংশটুকু বাইজুস ডটকম থেকে এসেছে। পাঠ্যপুস্তকে নাইট্রোজেন চক্রের যে বর্ণনায় দেয়া হয়েছে সেখানে বলা হচ্ছে, নাইট্রোজেন জীবের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি, কিন্তু বায়ুমণ্ডলে এটি বিপুল পরিমাণে থাকলেও প্রাণী বা উদ্ভিদ এটি সরাসরি ব্যবহার করতে পারে না। নাইট্রোজেন চক্র এমন একটি জৈবভূরাসায়নিক প্রক্রিয়া যেটি প্রায় নিষ্ক্রিয় নাইট্রোজেন গ্যাসকে জীবের ব্যবহারের উপযোগী করে রূপান্তরিত করে তুলে। এই চক্রের মাধ্যমে নাইট্রোজেন গ্যাস বায়ুমণ্ডল থেকে মাটিতে আসে এবং চক্র শেষে আবার বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়।
এই অংশটুকু হুবহু তুলে আনা হয়েছে https://byjus.com/biology/nitrogen-cycle/ ওয়েবসাইট থেকে। ভারতের `বহুজাতিক শিক্ষা প্রযুক্তি` কোম্পানি বাইজুসের ওয়েবসাইটে নাইট্রোজেন চক্রের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, Nitrogen is a key nutrient element for plants. However, the abundant nitrogen in the atmosphere cannot be used directly by plants or animals. Nitrogen Cycle is a biogeochemical process through which nitrogen is converted into many forms, consecutively passing from the atmosphere to the soil to organism and back into the atmosphere.
নাইট্রোজেন চক্রের ধাপগুলো বর্ণনার পর সেই চক্রেরই গুরুত্বের যে চারটি পয়েন্ট ২০৩ পাতায় লেখা হয়েছে, সেটিও Byju`s থেকে হুবহু বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে।
ভারতের কোচিং সেন্টারের একটি ওয়েবসাইট থেকে হুবহু কপি করে বাংলাদেশের কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের জন্য লেখার `পাঠ্যপুস্তক`টি যদি সেই দেশের ছেলে-মেয়েরা দেখে তাহলে তাঁরা যে অট্টহাসি দেবে, সেই হাসির ব্যথা বোঝবার ক্ষমতা আমাদের পাঠ্যপুস্তকের ওই অধ্যায়ের লেখকের নেই। নাইট্রোজেন চক্রের ধাপগুলো বর্ণনার পর সেই চক্রের গুরুত্ব যে চারটি পয়েন্ট ২০৩ পাতায় লেখা হয়েছে, সেটিও Byju`s থেকে হুবহু বাংলা অনুবাদ করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকটির সিংহভাগ চিত্রের কনসেপ্ট ইন্টারেনট থেকে হুবহু নিয়ে পূনঃচিত্রায়ন করে বইটিতে ছাপানো হয়েছে, যে কেবল ইংরেজি শব্দগুলোকে বাংলানুবাদ করা হয়েছে। বইয়ের শুরুতে নিউটনের যে চিত্র এসেছে তা এবং চিত্র ১.১ নেয়া হয়েছে মিডিয়াম ডটকম (https://vineetkl.medium.com/design-as-driven-by-inertia-2cc1e58e3132) থেকে। চিত্র ১.২ প্রাক্সিল্যাবস ডটকমে আদলেই চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে। চিত্র ১.৯ নিউটনের মহাকর্ষ বলের ব্যাখ্যা বুঝানোর জন্য আপেল গাছের নিচে বসে থাকা কথিত নিউটনের চিত্রটি নেয়া হয়েছে জন এম জেনিংস ডটকম (https://johnmjennings.com/was-math-invented-or-discovered) থেকে।
দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৪২ নাম্বার পাতায় তাপ বিনিময় করে কঠিন, তরল ও গ্যাসের তিনটি অবস্থার রুপান্তরের চিত্র ২.৭ অঙ্কন করা হয়েছে, তা মূলত প্রিন্টারেস্ট ডটকম (https://www.pinterest.com/pin/656118239455573801) থেকে নিয়ে পুনঃঙ্কন করা হয়েছে মাত্র।
তৃতীয় অধ্যায়ের আলোর তরঙ্গ ধর্ম বুঝানোর জন্য চিত্র ৩.২ অঙ্কন করা হয়েছে তা ভারতের কোচিং সেন্টার বাইজুস (https://byjus.com/physics/constructive-interference/) থেকে নামানো। ৬৬ নাম্বার পাতার চিত্রটি (৩.১১) সায়েন্সফটোগ্যালারি ডটকম (https://sciencephotogallery.com/featured/relativity-of-simultaneity-mark-garlickscience-photo-library.html) থেকে নিয়েছে।
চতুর্থ অধ্যায়ের চিত্র ৪.৪ এসেছে ফাইনআর্ট আমেরিকা ডটকম থেকে, ৪.৮ এসেছে আইস্টকফটো ডটকম থেকে। পদার্থের গঠন অধ্যায়ের অরবিটালের শক্তিক্রমের ৫.৫ চিত্র বাইজুস (https://byjus.com/question-answer/how-do-you-write-the-electron-configuration-of-scandium/) থেকে। জীনতত্ত্ব ও বংশগতিবিদ্যার বেশ কিছু চিত্র ও বর্ণনা এসেছে রবার্ট বেয়ারের প্রিন্সিপালস অব বায়োলেজি থেকে।
জৈব অণু অধ্যায়ের ৯.২ নং চিত্রটি গিকসফরগিকস ডট ওআরজি, ৯.৭ অ্যাডেনট্র ডটকম https://adntro.com/en/blog/learn-genetics/protein-amino-acids/) সহ ৯.৮ সায়েন্সডায়াগ্রাম থেকে কপি করে রিপ্রোডিউস করা হয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকের চিত্র ১২.১৬ ছাপানো হয়েছে, সেটিও বাইজুসেরই (https://byjus.com/biology/nitrogen-cycle/) করা, যেটি আমাদের বইয়ের চিত্রকররা পুনঃ:ইলিউস্ট্রেশন করেছে মাত্র। শুধু অধ্যায়ের চিত্রটিই নয়, নবম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের অনেক চিত্রের উৎসই বাইজুস। অথচ এইসব ছবি হুবহু না করে নিজস্ব কনসেপ্টে আঁকা যেত, কিন্তু তা না করে অন্যের আইডিয়া চুরি করে প্রাপ্তি স্বীকার না করে পুনঃচিত্রায়ন করা হয়েছে।
ভিনদেশে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষার্থীদের জন্য বানানো শিক্ষা সহায়িকায় যে তথ্য দিয়েছে, সেটি সঠিক না হয়ে ভুলও যে হতে পারে সেই বোধগম্যতা আমাদের সম্মানিত পাঠ্যপুস্তক লেখকদের তৈরিই হয়নি। অথচ নতুন শিক্ষাক্রমে বড় স্লোগান হচ্ছে, এই দেশে কোচিং ব্যবসা বন্ধ করা, গাইড বই বাতিল করা। তাহলেই সেই শিক্ষাক্রমে কীভাবে একটি কোচিং সেন্টারের ম্যাটেরিয়ালস আমাদের দেশে পাঠ্যপুস্তকে এলো? কারা নিয়ে আসলো? এটি কি দ্বিচারিতা নয়? অথচ তাঁদের কাঁধে দায়িত্ব পড়েছে, কোটি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানের জ্ঞান বিতরণে। অন্যের লেখায় নিজেদের ক্রেডিট বসিয়ে যে চতুরবৃত্তির আশ্রয় নেয়া হয়েছে, তা সমগ্র জাতির জন্য কলঙ্কজনক।
নাদিম মাহমুদ বলেন, এ লেখার উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তিকেন্দ্রিক বিতর্ক তৈরি করার জন্য নয়, পাঠ্যপুস্তুক বাতিলের জন্য নয়, নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিতর্ক তৈরির জন্য নয় বরং একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থার মধ্যে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে নিয়ে আসা, আগামী প্রজন্মের জন্য কুম্ভিকবৃত্তি ছাড়ায় উন্নতমানের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে লেখক, সম্পাদক ও রচনাকারীদের উৎসাহ দেয়া। শিক্ষার্থীদের জন্য উর্বর মেধা বিকাশের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
নাইম/আরএস