ইবি প্রতিনিধি
মার্চ ২৪, ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম
ইবি প্রতিনিধি
মার্চ ২৪, ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম
আসন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশ নেওয়া নিয়ে নতুন করে মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মাঝে। শিক্ষক সমিতি গুচ্ছের বিরুদ্ধে থাকলেও সিদ্ধান্তটির বিরুদ্ধে এবার মতামত দিয়েছেন শিক্ষক সমিতিরই ৬ শিক্ষক।
গত শনিবার সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ মতানৈক্য দেখা দেয়। এতে ১৫ সদস্যের কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক ছাড়া অন্যদের সাতজন গুচ্ছে না যাওয়ার পক্ষে এবং ছয়জন গুচ্ছের পক্ষে মত দেন। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে গুচ্ছে না যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হলে তাৎক্ষণিক ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করেন ওই ৬ শিক্ষক।
ইবিশিস সভা সূত্রে জানা যায়, আগের সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গুচ্ছে না যাওয়ার পক্ষে ছিল শিক্ষক সমিতি। তবে ইউজিসি ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী নতুন পরিস্থিতিতে বিষয়টি সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সভায় এজেন্ডা আকারে আলোচনা হয়। এতে আগের সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন গুচ্ছের পক্ষে থাকা শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদত আজাদের নেতৃত্বে ছয় সদস্য।
নোট অব ডিসেন্টে উল্লেখ করা হয়, গত ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ইবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের প্রতি তারা শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। উল্লিখিত ৬ শিক্ষক নেতৃবৃন্দ মনে করেন যেহেতু ইতোমধ্যে ১৫ হাজারের অধিক আবেদনকারী ইবিকে গুচ্ছের কেন্দ্র হিসেবে চয়েজ দিয়েছেন। এর আগে, ৮ ফেব্রুয়ারি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষক প্রতিনিধির সঙ্গে কমিশন কর্তৃপক্ষ ৮ ফেব্রুয়ারি মতবিনিময় সভার আহ্বান করে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষক প্রতিনিধির স্বাক্ষরিত পত্রে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত না হতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে কমিশনকে অবহিত করা হয়।
এছাড়াও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যিনি এবছর গুচ্ছ কার্যক্রমের আহ্বায়ক যাকে ইবিসহ ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিতে শিক্ষামন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে আমরা এই ৬ জন মনে করি বর্তমান পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার আর কোনো সুযোগ নাই।
গুচ্ছের পক্ষে থেকে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়া শিক্ষকদের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি ও ইবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদত আজাদ বলেন, আমরা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভার সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু ওই সভার পরে বেশ কিছুদিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে, ইউজিসি, সরকারের বিভিন্ন মহল ও গুচ্ছের আহ্বায়ক যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারের বক্তব্য থেকে সুস্পষ্ট হয়েছে যে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সরকারের অভিপ্রায় রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, দ্বিমত পোষণ গণতান্ত্রিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা। এটা সিদ্ধান্তের অংশ নয়। সিদ্ধান্ত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। ৬ জন বিরোধিতা করেছে তারমানে ধরে নিতে হবে বাকি ৯ জন সিন্ধান্তের পক্ষে। এ অবস্থায় প্রশাসন গুচ্ছে গেলে আমরা কোনো কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করবো না।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাকে আজও গুচ্ছে যাবে বলে নিশ্চয়তা প্রদান করেছে। আমাদের প্রবেশপত্র, আসনবিন্যাস সবকিছু সম্পন্ন হয়েছে। সকল বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অংশ নিয়ে যে সমস্ত গোপন কাজ করতে হয় পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রশ্ন করা প্রশ্নের মান নির্বাচন সবকিছুই এখন কমপ্লিট। এ বছর তাই ইবি কেনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েরই আর গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার সুযোগ নেই। শুধু ইবি প্রশাসন নয় আমার শিক্ষক সমিতির সভাপতির সাথেও কথা হয়েছে তিনি বলেছেন গুচ্ছে যাবে। এখন যদি কেউ এই পদ্ধতিতে না যেতে চায় তবে তা হবে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরোধিতা।
এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা থাকায় সভাপতি হিসেবে আমি কোন পক্ষে মত দিতে পারি না। নিয়ম অনুযায়ী সংখ্যাগরিষ্ঠ মতই সিদ্ধান্ত। তবে একজন শিক্ষক হিসেবে আমি মনে করি বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবং গুচ্ছে আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে গুচ্ছে অংশ নেওয়া উচিত।
ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, তারা শুরু থেকে না যেতো এটা ঠিক ছিল। কিন্তু পরীক্ষার চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ হয়েছে তারা কার্যক্রমও শুরু করেছে, বিভিন্ন মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছে এখন গুচ্ছে না যাওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আমি মনে করি এ ধরনের সিদ্ধান্ত জাতির জন্য শুভকর নয়। কোমলমতি শিক্ষার্থী এবং তাদের অবিভাবকদের কষ্ট লাঘবের জন্য গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতির প্রবর্তন করা হয়েছিল। যেহেতু তারা বিগত বছরগুলোতে অংশগ্রহণ করেছে। এবছরও তাদের অংশগ্রহণ করা উচিত।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমরা গুচ্ছে অংশগ্রহণ করলেও এবছর আমরা গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্তে ছিলাম। কিন্তু এর পর যখন চিঠিটা আসলো তখন সরকার বললো যে এখন আর গুচ্ছের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা যে যাচ্ছিনা এর আগেও আমরা তাদের জানিয়েছিলাম। জানানোর পরও কিন্তু গুচ্ছওয়ালারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যুক্ত করলো। আমি তখন তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম আমাদের কেনো যুক্ত করেছেন। তখন তিনি বললেন, আমি আদিষ্ট হয়ে দেয়নি সরকার থেকে আমাকে বলা হয়েছে যুক্ত করার।
ইএইচ