Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪,

শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে ডাকসু নির্বাচনের দাবি

জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

জালাল আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

মার্চ ৩০, ২০২৪, ১২:৫৪ পিএম


শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে ডাকসু নির্বাচনের দাবি
ছবি: আমার সংবাদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির ইফতার মাহফিল যেন ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল সব দল-মত নির্বিশেষে সবার একদিনের জন্য অনন্য রাজনৈতিক সহাবস্থান। ইফতার মাহফিলে উপস্থিত বক্তারা ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে দ্রুত ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির উদ্যোগে ইফতার মাহফিল উপলক্ষ্যে ‘শিক্ষাঙ্গনে সংকট: ছাত্র সংগঠন নির্বাচনের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা  ক্যাম্পাসে সকল রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মিলনমেলায় পরিণত হয়।

আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এবং  সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন রাষ্ট্রচিন্তক, লেখক, বিশ্লেষক ও ঢাবির বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার ।

প্রধান আলোচক বিশিষ্ট রাষ্ট্রচিন্তক, লেখক, বিশ্লেষক ও ঢাবির বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, ‘১৯২১ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল এবং পাকিস্তান আমলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে তা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তন-পরিবর্ধন হয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে আরও পরিবর্তন আনা জরুরি। পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য সৃজনশীল কাজ করার সুযোগ থাকতে হবে। মানুষের সাথে মানুষের মতপার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে সৌহার্দ্য থাকা চায়।তা এখন নেই। তবে নির্বাচন করতে হলে শিক্ষার্থীদের সকলের সমান অবস্থান থাকতে হবে। সব কাজের ধারাবাহিকতা থাকে। কয়েক বছর আগে একটা ডাকসু  নির্বাচন হলো।সরকারের কাছ থেকে আশা করবো ছাত্র সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নিবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র এবং শিক্ষকদের অনেক সমস্যা আছে।শিক্ষকদের সহায়তায় ছাত্র সংগঠন কাজ করতে পারবে না হলে অবস্থা আরো খারাপ হবে। ছাত্রদের অনেক সমস্যা আছে। প্রশাসনের সহায়তায় পর্যায়ক্রমে এসব সমস্যা সমাধান করা দরকার।’

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার উন্নয়ন এবং নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনকে বিবেচনার অনুরোধ জানান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আমরা ছাত্রনেতাদের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকেন্দ্রিক বক্তব্য শুনেছি। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকুক। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকুক। বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে নিয়ে যেতে শিক্ষার্থী ও ছাত্র সংগঠনের সহযোগিতা প্রয়োজন। ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমাদের আপত্তি নেই। এটি শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমকে প্রসারিত করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দর পরিবেশ পেলে আমরা নির্বাচনের আয়োজন করতে পারি। তবে এই দায়িত্ব প্রশাসন বা কোনো ছাত্রসংগঠনের একার নয়। এতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সহযোগিতা করবে। আর লাইব্রেরি সংস্কার, আবাসন সংকট সমাধানের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। আশা করি— মাস্টারপ্লানের কাজ শুরু হলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক চিত্র পাল্টে দিতে পারবো এবং শিক্ষার্থীদের অনুকূল শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারবো।’

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ও শিক্ষার্থীদের অবাধ রাজনৈতিক চর্চায় ডাকসুর ভূমিকা রয়েছে। এটা শিক্ষার্থীদের আইনি অধিকারও। আমরা বিশ্বাস করি, ছাত্র রাজনীতিকে আরও স্মার্ট ও যুগোপযোগী করতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন জরুরি। এর মাধ্যমে ক্যাম্পাস ভায়োলেন্স অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব।’

এসময়, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকট, লাইব্রেরি সংকট ও অন্যান্য সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারপ্ল্যান দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান।

ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘আজকে ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করে রাখা হয়েছে, যা আধুনিক যুগের ছাত্র রাজনীতির সম্পূর্ণ পরিপন্থি। তাছাড়া হলগুলো রাজনৈতিক সংগঠনের কাছ থেকে মুক্ত করে শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা হোক। আমরা চাই, বর্তমান পরিস্থিতিতে ডাকসুর নির্বাচন যেন অতিসত্বর দেওয়া হয়।’

সভাপতির বক্তব্যে ডুজা সভাপতি আল সাদী ভুঁইয়া বলেন, ‘ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের মতানৈক্য বা ক্যাম্পাসে তাদের সহাবস্থান সেভাবে লক্ষ্য করি না। তবে আজকে ডুজার আয়োজনে সব রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোকে আমরা এক ছাদের নিচে আনতে পেরেছি। এটা আমাদের জন্য একটা বিশেষ প্রাপ্তি। আমরা সাংবাদিক সমিতি চাই— ক্যাম্পাসে সবসময়ই রাজনৈতিক সহাবস্থান বিরাজ করুক এবং শিক্ষার্থীরা সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা করার সুযোগ পাক।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূইয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মাকসুদুর রহমান, নীল দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় চেয়ারম্যান, হল প্রাধ্যক্ষসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাবৃন্দ এবং সাংবাদিক সমিতির সাবেক সদস্য ও নেতৃবৃন্দ।

রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, ঢাবি সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসির, ছাত্রদলের ঢাবি সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আদীব, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি (একাংশ) রাগীব নাঈম, সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল রনি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি (অন্য অংশ) দীপক শীল, সাধারণ সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির  আহ্বায়ক আখতার হোসেন,সদস্য সচিব নাহিদ হাসান সহ  রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

এদিকে সাংবাদিক সমিতির ইফতার মাহফিলে দাওয়াত না পাওয়ায় ইশাসহ কয়েকটি ইসলাম ভিত্তিক ছাত্র সংগঠন হতাশা প্রকাশ করেছে।

এআরএস

Link copied!