নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
এপ্রিল ৯, ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
এপ্রিল ৯, ২০২৪, ০৪:১৮ পিএম
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সালমান আজাদীর পরিবারের পাশে দাড়াতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশন করিয়ে পরিবারের সকল ভরণপোষণ চালাতেন সালমান আজাদী। অসুস্থ বিধবা মা, বাচ্চা ও স্ত্রীকে রেখে পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি সালমান আজাদী পরপারে পারি জমালে অসহায় হয়ে পরিবারটি। এ অবস্থায় অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করে পরিবারটির পাশে দাড়াতে এগিয়ে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পরিবারটিকে সহায়তার উদ্দেশ্যে আজাদীর মৃত্যুর একদিন পরেই শিক্ষার্থীরা মিলে গঠন করে সালমান আজাদী ট্রাস্ট ফান্ড। পরবর্তীতে এই ট্রাস্ট ফান্ডে শিক্ষকদেরও যুক্ত করা হয়। প্রথম সাত দিনেই এই ফান্ডে জমা পড়েছে ২ লক্ষ ৮০ হাজার ১৯০ টাকা। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ইফতারের বরাদ্দকৃত অর্থ সালমান আজাদীর পরিবারের কাছে হস্তান্তরের দাবিও তুলেন।
ট্রাস্ট ফান্ড গঠন নিয়ে সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থী সুস্মিতা সরকার পিউ বলেন, সালমান মারা যাওয়ার পর, হাসপাতালে গিয়ে যখন ওর দেড় বছরের বাচ্চাটাকে দেখি। নিজেকে আর কোনোভাবেই ঠিক রাখতে পারছিলাম না। সে জানেই না তার বাবা এ পৃথিবীতে আর নেই। তখনই মাথায় আসে অন্তত এই ছোট্ট বাচ্চাটার জন্য হলেও কিছু একটা করা জরুরি। বাচ্চাটার ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই আমাদের এ কাজে নামা। তাছাড়া সালমানের মমতাময়ী মা, উনিও বেশ অসুস্থ। মূলত সালমানের মা ও তার ছোট বাচ্চাটার জন্যই এই কাজ শুরু করেছি।
ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আনোয়ার হোসেন জানায়, সালমান আজাদী ভাই এবং উনার পরিবারের প্রতি সকলের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ ও ভালোবাসা দেখে আমি অভিভূত। এই কাজে এখন পর্যন্ত আমরা সকল স্তর থেকে অভাবনীয় সাড়া পেয়েছি। ভার্সিটির পেইজে আমার দেওয়া অতি সামান্য একটা পোস্টে এর জন্য মানুষ কোনকিছু না ভেবে মানবতার খাতিরে এভাবে দাঁড়াবে সামলান ভাই এর পরিবারের পাশে তা হয়ত নিজে কাজ না করলে বিশ্বাস করতে পারতাম না। মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্বশীলতার বহিঃপ্রকাশ সালমান আজাদীর পরিবারের পাশে দাড়ানো। পাশাপাশি আমি চাই, যেসব পরিবারের সাহায্য প্রয়োজন তাদের পাশেও যেনো আমরা একইভাবে থাকতে পারি।
এ ব্যাপারে সংগীত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আহমেদ শাকিল হাসমী বলেন, তার অসুস্থ মা, দেড় বছরের শিশু আর স্ত্রী রয়েছে। টিএসসি গ্রুপে পোস্ট করি তারপর জানতে পারি, শিক্ষার্থীরা আগেই সালমান আজাদী ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছে, আমি তাতে যুক্ত হয়ে যাই। এরপর সবার কাছ থেকে অকল্পনীয়ভাবে সাড়া পাচ্ছি, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ সকলেই এগিয়ে আসছে।
অন্যদিকে সালমান আজাদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে, পরিবারটির পাশে দাড়াতে এগিয়ে এসেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। শিক্ষক সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সকল শিক্ষকের বেতন থেকে সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা বা সম্মতিক্রমে অধিক পরিমাণ টাকা কর্তন করে নেওয়া হবে। যার পুরো অংশ সালমান আজাদী ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে চলে যাবে পরিবারটির কাছে। অভিনব এমন উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের প্রশংসায় ভাসছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
এ ব্যাপারে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, সালমান আজাদীর পরিবারের পাশে দাড়ানো আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। আর আমারা যে আর্থিক সাহায্য করছি তা আসলেই আমাদের সকল সম্মানিত সহকর্মীর সার্বিক সিদ্ধান্ত এবং শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। এজন্যই সকল সম্মানিত সহকর্মীর প্রতি অনেক অনেক কৃতজ্ঞ।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুষার কান্তি সাহা জানায়, আমি যতদূর জানতে পেরেছি তার স্ত্রী, ছোট একটি সন্তান ও অসুস্থ মা আছেন। পরিবারটি খুবই অসচ্ছল। তাই শিক্ষক সমিতি তার পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য সালমান আজাদী ট্রাস্ট ফান্ডে সকল শিক্ষকের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে পরিবারটিকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তাই আমি মনে করি এই অর্থ সালমান আজাদের পরিবারের ভবিষ্যতে চলার পথ সুগম করবে।
ইএইচ