Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

রাবিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ

রাবি প্রতিনিধি:

রাবি প্রতিনিধি:

মে ৯, ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম


রাবিতে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‍‍‘ইসরায়েলের আগ্রাসন ও মানবতাবাদ‍‍’ শীর্ষক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৯মে) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে ‍‍‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়‍‍’ এর ব্যানারে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‍‍‘স্টপ জেনোসাইড ইন গাজা‍‍’, ‍‍‘সেভ আল-আকসা ফ্রি প্যালেস্টাইন‍‍`, ফ্রম দ্যা রিভার টু দ্যা সি, প্যালেস্টাইন উইল বি ফ্রি‍‍’, ‍‍‘জেনারেশন আফটার জেনারেশন আনটিল টোটাল লিবারেশন‍‍’, ‍‍‘স্টান্ড উইথ প্যালেস্টাইন‍‍’, ‍‍‘ফ্রিডম ফর প্যালেস্টাইন‍‍’, ‍‍‘উই স্টান্ড ফর প্যালেস্টাইন‍‍’, ‍‍‘স্টপ ওয়্যার সেভ প্যালেস্টাইন‍‍’, ‍‍‘হ্যায় দ্যা ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ড, হোয়্যার আর হিউম্যান রাইটস ইন গাজা?‍‍’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্লেকার্ড প্রদর্শন করেন।

প্রতিবাদ সমাবেশে মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন বুঝতে হলে দুইটা জিনিস জরুরি। একটি হলো উপনিবেশবাদ আরেকটা মানবতাবাদ। এই দুইটার সম্পর্ক বাদ দিয়ে এবিষয় বুঝা সম্ভব নয়।

আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আন্দোলনের দাবি হিসেবে ইসরাইলকে এই অন্যায় আগ্রাসন থামাতে হবে, আমেরিকান অর্থসংগ্রহের পলিসি বন্ধ করতে হবে। গত ৭০-৮০ বছরের মধ্যে এটা আমেরিকাতে হওয়া সবচেয়ে বড় আন্দোলন। যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে তাদেরকে নাজিক বলা হচ্ছে। তারা এন্টিসেমিটিক। ইহুদি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো কথা বললে সে কথাটি এন্টিসেমিটিক হিসেবে গণ্য করা হবে বলে আমেরিকার পার্লামেন্টে আইনও পাশ হয়েছে। এই এন্টিসেমিটিক ধারণাটি অনেক পুরনো এবং এর অনেক ট্রান্সফরমেশন আছে। ১৯৬৮ সালের পর থেকে এর অর্থ দাঁড়িয়েছে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনা করলেই সেটি এন্টিসেমিটিক হিসেবে প্রচার করা হয়।’

গাজায় ইসরায়েলের হামলার নির্মমতার কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, ‘গাজায় মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। যে ১৫ হাজার শিশু মারা গেছেন, তাঁরা তাদের জীবন সম্পর্কেই ভালোভাবে জানতেন না। সেখানে খাবার নেই। প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই। গাজা বর্তমানে একটা উন্মুক্ত কারাগার হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনিদের খুঁজে খুঁজে হত্যা করা হচ্ছে। গত ১০০ বছরেও এ রকম অমানবিক ঘটনা ঘটেনি। সবার চোখের সামনে ইসরায়েল যে গণহত্যা চালাচ্ছে সেটির ভিত্তি কী? যুক্তি কী?’

ইসরায়েলের উত্থানের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এই গণহত্যা চালানোর ভিত্তি হলো ইসরায়েলের জায়নবাদ ইতিহাস। উনিশ শতকে একটা ইনটেলেকচুয়াল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট ঘটে। সেসময় প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানরা ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা করে। তখনই ধারণা হয় একটি জায়নবাদ রাষ্ট্রের। ১৯১৭ সালে ব্রিটিশরা ইহুদিদেরকে একটি জায়গা দেওয়ার ঘোষণা দেন। যেটা একটা নতুন রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হলোকাস্ট বা ব্যাপক ইহুদি গণহত্যা শুরু হয়েছিল, তাতে ইউরোপিয়ানদের মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করছিল। যখন নিপীড়িত ইহুদিরা প্যালেস্টাইনে গিয়ে বসতি স্থাপন শুরু করল, তখন ঠিক তার উল্টো ঘটনা ঘটলো। ফিলিস্তিনিরা হয়ে গেল নিপীড়িত। ফিলিস্তিনিদের হাজার বছরের জায়গা দখল করে তারা সেখানে বসতি শুরু করলো।’

মানবতাবাদ বিষয়ে আলোচনায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ‘মানবতাবাদের সাথে কলোনিয়ালিজমের সম্পর্ক রয়েছে। মূলত ১২০০-১৩০০ সালের দিকে মানবতাবাদ গড়ে উঠেছে। মানবতাবাদের কেন্দ্রে রাখা হয়েছে মানুষকে। এই মানবতাবাদের উৎস আসলে ক্রিসচিয়ানিটি। এই ক্রিসচিয়ানিটিতে যে আলোর কথা বলা হচ্ছে তা মূলত কলোনিয়ালিজমের আলো, সেই আলো পৃথিবীকে আলোকিত করবে। এই মানবতাবাদ ইউরোপকে শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে। কিন্তু এই মানবতাবাদ আর উপনিবেশবাদকে কোনোভাবেই আলাদা করা যায় না।’

প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার। এসময় তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আগ্রাসনের মূল হোতা হয়েছে আমেরিকা। আমরা ভিয়েতনাম, ইরাক ও আফগানিস্তানের ওপর আমেরিকার আগ্রাসন দেখেছি। সবশেষ দেখছি ফিলিস্তিনে। আরেকটা যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনে, সেখানে মানবতা ভয়ংকরভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। এই ব্যাপারগুলো এখন আর সাধারণ পর্যায়ে নাই। এখন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এবং সাধারণ বাচ্চারাও এই আন্দোলনগুলোতে যোগ দিচ্ছে। তারা জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে ফিলিস্তিন ও মানবতাবাদের পক্ষে কথা বলছে।’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রুদ্র আল মুত্তাকিম অনুষ্ঠানে সঞ্চালনা করেন। এসময় ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী এবং কয়টি ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিআরইউ

Link copied!