হৃদয় সরকার, বশেমুরবিপ্রবি
মে ২৩, ২০২৪, ০৩:০৭ পিএম
হৃদয় সরকার, বশেমুরবিপ্রবি
মে ২৩, ২০২৪, ০৩:০৭ পিএম
শিক্ষার্থীদেরকে যথাযথ শিক্ষা প্রদানে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত খুব বেশি গুরুত্ব বহন করে থাকে। আনুপাতিক হারে শিক্ষক অপেক্ষা শিক্ষার্থী বেশি হলে সেখানে শিক্ষার্থীরা যথাযথ সুযোগ সুবিধা পায় না। আর এ অনুপাত কম হলে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় যেকোনো ধরনের সমস্যা খুব দ্রুত সমাধান দিতে পারেন।
শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে বিশ্বব্যাপি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ১.২০ অনুপাতকে যথাযথ বলে মনে করা হয়। উচ্চশিক্ষা অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই অনুপাতকে আরো কম হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
বিশ্বব্যাপি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র্যাংকিং প্রতিষ্ঠান কিউএস এবং টাইম হায়ার এডুকেশন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাতকে র্যাংকিংয়ের অন্যতম সূচক হিসেবে বিবেচনা করেন। কিন্তু দেশের ১৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হার বৃদ্ধির দিক দিয়ে চতুর্থ। যার আনুপাতিক হার দেখানো হয়েছে ১.৩৪।
বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বেশ জটিল। বিভিন্ন সময় শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। অযোগ্য ব্যক্তিকে ক্ষমতাবলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার গুঞ্জনও শোনা যায়। আবার কোরাম ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগের তথ্যও পাওয়া গিয়েছে। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি।
এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, অনেক বিভাগে শিক্ষক সংকট রয়েছে। অনেক বিভাগে দেখা যায়, ৪-৫ ব্যাচের শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক সংখ্যা মাত্র ২-৩ জন। কিন্তু সেখানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০০ থেকে ৫০০ জন। তবে একই ব্যাচে ৫-৬ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
তবে এখন শিক্ষক সংকট কেন?
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভাগের বেশিরভাগ শিক্ষক রয়েছেন শিক্ষা ছুটিতে। কেউ পিএইচডি করতে বাহিরে গিয়েছেন। এতে অনেক বিভাগে সেশনজট বেঁধে গিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে একাধিকবার আন্দোলন করেছে। কিন্তু তাদের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বশেমুরবিপ্রবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হার এত বেশি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব আমার সংবাদকে বলেন, এর কারণ সোজা, আগে থেকে কেউ শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারেনি। টাকা, জনবল বা শিক্ষক কেউ একদিনে দেয় না। ধীরে ধীরে বাড়াতে হয়।
শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়সকে দায়ী করে তিনি বলেন, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স অনেক পুরোনো। তাদের বাজেট আমাদের থেকে চারগুণ। সেজন্য ওদের বাজেট বেশি এবং শিক্ষকও বেশি।
তিনি বলেন, বশেমুরবিপ্রবির বয়স ১০ বছরের বেশি। এর আগের কোনো উপাচার্য এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আমি দায়িত্ব নেওয়া পর থেকে শিক্ষক নিয়োগের চেষ্টা করছি। আমাদের যতজন শিক্ষক দরকার তার অর্ধেকও নাই। আমাদের এখানে শিক্ষকের ঘাটতি অনেক বেশি।
অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগে বাঁধা হিসেবে শিক্ষক আন্দোলনকে দায়ী করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, গত বছর অক্টোবরে ২৪ জন শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। তাদেরকে ডিসেম্বরে নিয়োগ দিতে পারতাম। কিন্তু শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে আমরা সেটি বাস্তবায়ন করতে পারিনি।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আনুপাতিক হার কমানোর জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, আমরা নতুন করে ১৪ জন নেবও। তাদেরকে একবারে নিতে পারবো না। ঈদের আগে এবং পরে ৫-৭ জন করে নিয়োগ দিব। এতে করে আনুপাতিক হার কিছুটা কমে যেতে পারে।
তিনি বলেন, পূর্বে যতজন নিয়েছি, সেগুলো পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবো না।
ইএইচ