চবি প্রতিনিধি:
জুন ৫, ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
চবি প্রতিনিধি:
জুন ৫, ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) প্রথমবারের মতো আয়োজিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ বক্তৃতার অনুষ্ঠান ‘টেডএক্স চিটাগাং ইউনিভার্সিটি’ তে চট্টগ্রামের ছেলে এভারেস্ট বিজয়ী ডা: বাবর আলী বলেন, হালদা পাড় থেকে এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছানো মোটেও সহজ ছিল না। মাউন্টেইন ক্লাইম্বিংকে মানুষ একটা স্পোর্টস হিসেবে না বরং জীবনাদর্শ হিসেবে দেখে থাকেন।
তিনি আরও বলেন, যখন আমি কোনো পাহাড়ে উঠতে যাই তখন এটাকে শুধু একটি যাত্রা নয়, তীর্থযাত্রা মনে করি। আমি এভারেস্ট শীর্ষে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট অবস্থান করি। এটা ছিল অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। যখন পাহাড়ে উঠি তখন নিজেকে একদম ছোট্ট মনে হয়। এই জিনিসটি আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। সবাইকে মাউন্টেন এভারেস্ট জয় করতে হবে এমন কোনো কথা নয়, প্রত্যেকের নিজের লাইফে অনেক মাউন্টেইন রয়েছে সেগুলো জয় করুন।
মঙ্গলবার (৪ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্স এন্ড ফিশারিজ অনুষদের মিলনায়তনে চিটাগাং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ এন্ড হায়ার স্টাডি সোসাইটির (সিইউআরএইচএস) উদ্যোগে এটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসময় বাবর আলীর মতো নিজেদের জীবনের শিক্ষণীয় গল্প শুনান দেশের পরিচিত ৮ বিশিষ্টজনেরা।
নুসরাত আফরিন এবং সিলভিয়া নাজনীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, কিছু মানুষ এটা চিন্তা করে যে বিশ্ববিদ্যালয় একটা প্রতিষ্ঠান মাত্র। কিন্তু আমি মনে বিশ্ববিদ্যালয় হলো নতুন কিছু উদ্ভাবন করার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়কে উন্নত করতে যতকিছু করার দরকার আমি তা করবো। আমি চাই আমার বিশ্ববিদ্যালয় হোক উদ্ভাবনী শক্তি সম্পন্ন। আমার শিক্ষার্থীদের নব আবিষ্কারকে আমি সবসময় সাধুবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে টেড বক্তা হিসেবে জীবনের গল্প তুলে ধরেন স্বাধীনতা পদক বিজয়ী বিজ্ঞানী অধ্যাপক হাসিনা খান, প্রখ্যাত বিতার্কিক ও উপস্থাপক ডা. আব্দুন নুর তুষার, গীতিকার ও কর্পোরেট ব্যক্তিত্ব আসিফ ইকবাল, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বাসনা মুহুরি, চবি অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া, এভারেস্ট পর্বত আরোহী ডা. বাবর আলী এবং মিস বাংলাদেশ ২০০৭- বিজয়ী জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ও পাটের জীবনরহস্য উন্মোচনকারী গবেষক দলের সদস্য অধ্যাপক ড. হাসিনা খান বলেন, পাট বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক। এটি আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য যা আমাদের রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। । আজ থেকে ৩০ বছর আগে আমরা যখন শুরু করি তখন জানতামই না কীভাবে এর জিন বের করতে হয়। পাঠের জিনোম আবিষ্কার আমাদেরকে এতোটা সাহস জুগিয়েছে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতেও নতুন নতুন আবিষ্কার করতে আগ্রহ জোগাবে।
চবি অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল আমাদের নদীগুলো। তবে আজ দুঃখের বিষয় সেই নদীগুলো আজ অবহেলিত। বাংলাদেশের একমাত্র নদী যেটা বাংলাদেশে শুরু হয়ে বাংলাদেশেই শেষ হয়েছে। পৃথিবীর একমাত্র নদী যেটা থেকে নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। হালদা নদী থেকে শুধু ১ বছরে কন্ট্রিবিউট অর্থনীতিতে ৮ কোটি টাকা। এটা চট্টগ্রামের লাইফ লাইন।
চবি অধ্যাপক বলেন, প্রতিদিন হালদা নদী থেকে ১৮ লক্ষ লিটার পানি সংগ্রহ করা হয়। আমি হালদা পাড়ের সন্তান। আমি যখন ৮ম শ্রেণীতে পড়ি আমার স্কুল টিচার আমাকে একটি কবিতা লিখতে বলেছিলেন। আমি লিখেছিলাম হালদা নদী কবিতাটি। আমরা দূষণমুক্ত নদীর উদাহরণ দিতে গিয়ে লন্ডনের টেমস নদীর উদাহরণ দেই। কিন্তু আমরা অতি শিগগিরই হালদা নদীকে উদাহরণ দিতে পারবো দূষণমুক্ত নদী হিসেবে। ‘নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে।’ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা নদী নিয়ে সচেতনতা তৈরি করি। হালদা নদী নিয়ে আমাদের সাকসেস হলো বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।
পিয়া জান্নাতুল বলেন, জীবনটা আমার কাছে একটি প্রতিযোগিতা নয়, আমার কাছে এটি একটি ক্যাটওয়াক। ছোটবেলায় আমার বাবা আমাকে বলেছিলেন আমি একটা লস প্রজেক্ট! জীবনের এই পর্যায়ে এসে আমি তাদেরকে বলতে যে না আমি বা মেয়ে হিসেবে জন্মানো কোনো লস প্রজেক্ট না।
বিআরইউ