Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪,

সিঙ্গাপুর থেকে বিদ্যালয়ে হাজিরা দেন শিক্ষিকা

এম এইচ শুভ, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

এম এইচ শুভ, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

জুন ২৬, ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম


সিঙ্গাপুর থেকে বিদ্যালয়ে হাজিরা দেন শিক্ষিকা

সিঙ্গাপুরে অবস্থান করে বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাসলিমা আক্তার নামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে। শুধু স্বাক্ষর করেই থেমে যাননি তিনি বিদেশে থেকেও স্কুলে উপস্থিত দেখিয়ে বেতন উত্তোলন করে ভোগ করেছেন এই শিক্ষিকা।

তার অনুপস্থিতিকে হাজির দেখিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর সুপারিশও করেছেন খোদ সহকারী শিক্ষা অফিসার এবং বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এর সঠিক ব্যাখ্যা চেয়ে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত জবাব দাখিল করতে ওই শিক্ষিকাকে নোটিশ প্রদান করেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার। নোটিশের সময় পাড় হয়ে সেই শিক্ষা অফিসারের বদলি হয়ে গেলেও এখনো জবাব দেননি ক্ষমতাধর এই শিক্ষিকা।

চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বলীঘর পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তার এই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

জানা যায়, উপজেলার বলীঘর পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাসলিমা আক্তার তার সিঙ্গাপুর প্রবাসী স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য শিক্ষা অফিস থেকে গত বছরের ৩ আগস্ট থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে বিদেশে গমন করেন। ছুটি শেষে ১৮ আগস্ট তিনি কর্মস্থলে যোগদান করার কথা থাকলেও তিনি দেশে ফিরেন ৩ সেপ্টেম্বর।

অর্থাৎ তিনি ১৫ দিনের ছুটি নিয়ে একমাস পর। দেশে ফিরে তিনি বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় ১৫ দিনের ছুটি বাদে বাকি ১৫ দিনের হাজিরায় স্বাক্ষর করে বেতন উত্তোলনের মাধ্যমে ভোগ করেন এবং তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করার জন্য ৫ সেপ্টেম্বরে পূর্ববর্তী আগস্ট মাসের ২০ তারিখে (পেছনের তারিখে) বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য শিক্ষা অফিসে আবেদন জমা দেন। পেছনের তারিখে দেয়া এই আবেদনে সুপারিশ করেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আম্বিয়া খাতুন। জালিয়াতির মাধ্যমে করা এই আবেদনে সহকারী শিক্ষা অফিসারের সুপারিশ করা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে।

তাসলিমা আক্তারের ছুটি ও যোগদানপত্র নিয়ে অনিয়ম পরিলক্ষিত হওয়ার তৎকালীন শিক্ষা কর্মকর্তা মোতাহের বিল্লাহ তাকে বিস্তারিত ব্যাখ্যা চেয়ে ৩ কার্যদিবস সময় দিয়ে শোকজ করলেও শিক্ষিকা সেই নোটিশের কোন তোয়াক্কাই করেননি। একজন শিক্ষিকার এমন জালিয়াতিতে এখনো কোন প্রকার ব্যবস্থা না নেয়ায় শিক্ষা অফিসের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কে বেশি ক্ষমতাধর ওই শিক্ষিকা নাকি প্রশাসন।

এ ব্যাপারে শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তারের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই বিষয়ে প্রতিবেদকের সাথে সরাসরি দেখা করে কথা বলবেন বলেন জানান।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আম্বিয়া খাতুন, শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তারের সিঙ্গাপুরে ১৫দিনের স্থলে ১ মাস অবস্থান করা এবং বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করার বিষয়টি স্বীকার করেন। নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বাধ্য হয়ে সুযোগ দিয়েছেন বলে জানান।

সহকারী শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ হায়াতুন্নবী বলেন, এই অনিয়মের বিষয়ে আমি অবগত নই। আমি যে তারিখে আবেদনপত্র পেয়েছি সেই তারিখেই সুপারিশ করেছি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই বিষয়ে পূর্বের শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে শোকজ করেছে, আমি দুয়েকদিনের মধ্যে তাকে শোকজ করবো। ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সফিউল আলম বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। উপজেলা থেকে রির্পোট পাঠালে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ইএইচ

Link copied!