Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৫ অক্টোবর, ২০২৪,

ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে দুই সহপাঠীকে সহিংসতার মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি

তিতুমীর কলেজ প্রতিনিধি

জুলাই ৩০, ২০২৪, ১০:৩৬ পিএম


ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে দুই সহপাঠীকে সহিংসতার মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের ধরে দুই সহপাঠীকে মারধর করে সহিংসতার মামলায় জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে তিতুমীর কলেজের অর্থনীতি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ রানার বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইউসুফ ও কামরুজ্জামান সোহাগ একই বিভাগের শিক্ষার্থী। অভিযুক্ত সোহাগ কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়লের অনুসারী হিসেবে পরিচিত বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, গত বুধবার সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে কামরুজ্জামান শাকিল চত্বরের দিকে গেলে তার সহপাঠী ও ছাত্রলীগ কর্মী সোহাগ রানা ডেকে নিয়ে বড় ভাইদের কাছে দেয়। বড় ভাইয়েরা কামরুজ্জামানের ফোন রেখে তাকে মারধর করে। পরে ফোন রেখেই বাসায় চলে যায় সে। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী মুন্তাসীর ফাহিমসহ আরও ৭-৮ জন কামরুজ্জামানকে ওয়ারলেস মোড়ে পাওয়ার সাথে সাথেই একসাথে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ে। চড়-থাপ্পড় কিল ঘুসি মারতে মারতে শাকিল কল চত্বরের দিকে নিয়ে যায়। মারধর সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে সে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে চোর চোর বলে সবাই পিছন থেকে দৌড়ে নিয়ে কলাম্বিয়া মার্কেটের পিছন থেকে আবারও আটক করে। তারপর আরও মারধর করে বনানী থানায় দেয়।

আমার সংবাদকে ইউসুফের পরিবার জানায়, কামরুজ্জামান বিপদে পরে ইউসুফকে জানালে সে বন্ধুর জন্য যায়। তখন তাকেও মারধর করে  মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মামলায় জড়ায় সোহাগ রানাসহ বাকিরা। তারা এখনও কেরানীগঞ্জ কারাগারে আছে। ইউসুফ সাধারণ শিক্ষার্থী। কোটা সংস্কার আন্দোলন সারাদেশের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এটা নিয়ে কোটি কোটি মানুষ পোস্ট দিয়েছে। আর মামলার এজাহারে উল্লিখিত ঝামেলার দিন ইউসুফ বাসায় ছিল। এ সময় তারা অর্থনীতি বিভাগ ও কলেজ প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কামরুজ্জামানের এক সহপাঠী অভিযোগ করে বলেন, সোহাগ রানা আমাদের অনেককেই বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। সে কিছুদিন আগে কানিজ ফাতেমা ম্যামের ক্লাস চলাকালীন সময়ে বাহিরে থেকে এসেই ওকে এবং আরেকজন সামনের বেঞ্চে থেকে উঠিয়ে দিতে চেয়েছিল। সে প্রতিবাদ করলে সেখান থেকেই কামরুজ্জামানের সাথে তার শত্রুতা তৈরি হয়। সেই শত্রুতার সূত্র ধরেই তাকে পাঠানো হয়েছে।

অপর এক সহপাঠী বলেন, ২য় বর্ষে থাকাকালীন সময়ে ক্লাসে শিক্ষক থাকাকালীন আরেক সহপাঠীকে থাপ্পড় মারে সে। একাধিক শিক্ষার্থীকে ভয় দেখিয়ে নানা কথা বলেছে সে। সবার আমলনামা নাকি তার কাছে লেখা আছে এইসব বলে বেড়াচ্ছে সে।

এদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের নি:শর্ত মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাব, রিসার্চ ক্লাবসহ বেশকিছু সংগঠন।

তিতুমীর কলেজ রিসার্চ ক্লাব তাদের বিবৃতিতে বলেন, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গ্রেপ্তারকৃত সরকারি তিতুমীর কলেজ রিসার্চ ক্লাব আইটি সম্পাদক, কামরুজ্জামান ও অর্থ সম্পাদক মো. ইউসুফের নিঃশর্ত মুক্তি চায়।

বিতর্ক ক্লাব জানায়, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গ্রেপ্তার সরকারি তিতুমীর কলেজ বিতর্ক ক্লাবের মো. ইউসুফের নিঃশর্ত মুক্তি চায় তারা।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষক জানায়, ‘বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করা হচ্ছে। খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান তুল্য। সকলের নিরাপত্তা আমাদের কাম্য।’

অভিযোগের বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ রানা বলেন, যেদিন ঘটনা ঘটে, সেদিন বিকাল ৫টার দিকে ক্যাম্পাস সংলগ্ন ফুচকার দোকানের সামনে আমি কথা বলছিলাম। কথা বলার পর আমি দেখি মহাখালী ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের সামনে ক্যাম্পাসের বড় ভাইরা দাঁড়িয়ে। আমি যেয়ে দেখি, ওনারা আমার বন্ধু কামরুজ্জামানের ফোন ঘেঁটে দেখছে। আমি ভাইদের বললাম, ও আমার বিভাগের সহপাঠী। কিন্তু বড় ভাইরা আমার কথায় গুরুত্ব দেয় না। তারপর আমি চলে আসি। সন্ধ্যা পর্যন্ত বড় ভাইয়েরা কামরুজ্জামানের সাথেই ছিল। এরপর ঘণ্টা দুয়েক বাদে আমি আবারো যাই সেখানে। গিয়ে দেখি, আরেক সহপাঠী ইউসুফকে আনার জন্য পরিকল্পনা চলছে। তারপর ইউসুফ আসার পর ওদের মারধর করে থানায় সোপর্দ করে।

কিন্তু বড় ভাইদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এখন বড় ভাইরা কারা ছিল, চাইলেই আমি নাম প্রকাশ করতে পারি না। আমি হলে থাকি, নিরাপত্তার ঝুঁকি আছে আমার।

তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল আমার সংবাদকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি অবগত নই। কিন্তু ছাত্রলীগের ইউনিট সেক্রেটারি হিসেবে আমার সাথে যে কেউ ছবি তুলতে পারে। ছবি ব্যবহার করে যে কারো অপকর্ম করার সুযোগ নাই। যদি কেউ এমন কাজ করে থাকে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কলেজের উপাধ্যক্ষ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, কোন শিক্ষার্থী অপরাধ না করে থাকলে তাকে কোন প্রকার হয়রানি যেন না করা হয়। ঘটনা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে হয়ে থাকলে যাচাই-বাছাই করে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তিতে আঘাতের সাথে কেউ যুক্ত থাকলে আইন তার নিজ গতিতে চলবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের নির্দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। সবগুলো বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের কাছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের আপডেট নেওয়া হচ্ছে। কোন শিক্ষার্থী কোন প্রকার সহিংসতা ছাড়া অন্যায়ভাবে কোন ঝামেলায় পড়েছে কী না? তাদের অবস্থানে তারা বর্তমানে কেমন আছে সেগুলোও। আমরা আগামীকালের মধ্যে সবকিছুর তথ্য নিয়ে অধ্যক্ষের মাধ্যমে মেয়র মহোদয়কে অবহিত করতে কাজ করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনানী থানার কর্মকর্তা কাজী শাহান হক আমার সংবাদকে জানান, আমরা সব ধরনের মামলার বিষয়ে অবগত আছি। তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতেই আমরা গ্রেপ্তার করে থাকি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তিতুমীর কলেজের সমন্বয়ক নূরউদ্দিন হোসাইন জিসান বলেন, কামরুজ্জামান, ইউসুফ, ইমরান, রায়হান, সাফওয়ান এরা সাধারণ শিক্ষার্থী। কোটা ইস্যুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার মত নিজেদের যৌক্তিক মত প্রকাশ করেছেন। এটাই কী তাদের অপরাধ?

ইএইচ

Link copied!