আমার সংবাদ ডেস্ক
আগস্ট ১, ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
আগস্ট ১, ২০২৪, ০২:৩৪ পিএম
ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমের বেশ কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে। ওই সব ছবির মধ্যে একটি ছবিতে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের পাশে দাঁড়িয়ে কোনো এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন তিনি। তার এই ছবিটি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এবার বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন সারজিস।
শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বিষয়টি সম্পর্কে জানিয়েছেন তিনি।
পাঠকদের জন্য সারজিস আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
কিছু মানুষ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে আমার সম্পৃক্ততা নিয়ে কথা বলছেন। সে বিষয়ে কিছু কথা...
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে ১ম বর্ষে থাকা অবস্থায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অমর একুশে হলে উঠি। ঢাবির ছেলেদের হলে উঠার একমাত্র উপায় হচ্ছে পলিটিক্যালি উঠা। হলের সিটের ব্যাপারে প্রশাসনের তেমন কোনো হাত নেই। আপনি যে আদর্শে বিশ্বাস করেন না কেন বর্তমানে ঢাবির হলে থাকতে হলে অন্তত ১ম, ২য়, ৩য় বর্ষে আপনাকে ছাত্রলীগ করতে হবে। ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম, গেস্টরুম করতে হবে। এটা বাধ্যতামূলক। নাহলে হলে থাকতে পারবেন না।
২০১৯ সালে ডাকসু ইলেকশনে আমি ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে হল সংসদে ইলেকশন করি। ছাত্রলীগের প্যানেলের ১৩ জনের মধ্যে ৭ জন নির্বাচিত হয়েছিলো। ৬ জন স্বতন্ত্র থেকে ছিল। স্টুডেন্টদের কাছে যাদের গ্রহনযোগ্যতা ছিল তারাই নির্বাচিত হয়েছিলো। সদস্যদের মধ্যে আমি সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলাম। ইভেন ভিপি জিএসের চেয়েও বেশি ভোট পেয়েছিলাম। একুশে হল আর এফএইচ হলে যে সবচেয়ে সুন্দর ও স্বচ্ছ ভোট হয়েছিলো সেটা তখনকার কাউকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন।
ফেসবুকে ২টা ছবি দেখছি। একটা ২০১৯ সালে হল ছাত্রলীগের কোনো প্রোগ্রামের। হলের টিভি রুমে ডায়েসের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার ভঙ্গিতে তোলা। তখনকার সময় অনুযায়ী জুনিয়র হিসেবে এসব শখ করে তোলা। সবাই তোলে। অন্য ছবিটি ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের ম্যান অব দ্যা সিরিজ ট্রফি নেওয়ার সময়। ঢাবি-পঞ্চগড় এসোসিয়েশন আয়োজিত ওই প্রতিযোগিতায় সাদ্দাম ভাই অতিথি ছিল। যেহেতু তার বাড়ি পঞ্চগড়ে এবং তখন তিনি ডাকসুর এজিএস ও ঢাবির সেক্রেটারি।
২০২২ সালের এপ্রিলে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে সরে আসি। অনেক কারন থাকলেও প্রধান ২টি কারন ছিল।
প্রথমত, তখন হল প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারির থেকে আমার মাধ্যমে জুনিয়দের জন্য যে নির্দেশ আসতো সেটা আমার কাছেই অযৌক্তিক, অন্যায় ও জুলুম মনে হতো। যেটা আমার কাছেই অযৌক্তিক সেটা আমি কখনো আমার জুনিয়রদের উপর চাপিয়ে দিতে পারিনা। সে জায়গা থেকে নিজের বিবেকবোধকে প্রায়োরিটি দিয়ে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে সরে যাই।
দ্বিতীয়ত, যারা ১ বছর বা তার বেশি সময় ধরে আমার সাথে ফেসবুকে যুক্ত আছেন, তারা জানেন আমি বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার ও ছাত্রলীগ নিয়ে সরকারবিরোধীদের চেয়ে কঠোরভাবে যৌক্তিক সমালোচনা করার চেষ্টা করি। আমার টাইমলাইন ঘাটলেই তা পাওয়া যাবে। সে জায়গা থেকে হল ছাত্রলীগের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি আমাকে অনেকবার রুমে এবং গেস্টরুমে ডেকে এসব লেখালেখির জন্য সতর্ক করে। কিন্তু কাজ হয়নি। সবশেষে হল ছাত্রলীগের কমিটি হওয়ার পূর্বে আমাকে একটি অপশন বেছে নিতে বলা হয়। লেখালিখি করবো অথবা ছাত্রলীগ করবো। আমি নির্দ্বিধায় আমার লেখালিখি কে বেছে নিই। নিজের বিবেকের কাছে সত্য আর স্বচ্ছ থাকার চেয়ে আত্মিক প্রশান্তির কিছু হতে পারে না। ফলে ছাত্রলীগের কোনো কমিটিতে আমার কোনো পোস্ট নেই।
আমার বাবা আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার কাছে দলের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইথিকস, ব্যক্তিত্ব, আদর্শ। সেদিক দিয়ে আমি সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষমতাসীন দলগুলোর এতো সমালোচনা করার পরও বাবা আমাকে কখনো কিছু বলেনি। আমাকে আমার বিবেকবোধ দিয়ে চিন্তা করার সুযোগ দিয়েছে। ইভেন এই নির্বাচনে আমি বাড়িতে থাকার পরও যখন ভোট দিতে যাইনি তখনও কিছু বলেনি। এটাই আমার রক্ত।
২০২৪ এর কোটা আন্দোলনে আমি যুক্ত হই ঢাবি সাইন্স লাইব্রেরীর প্রতিনিধি হিসেবে। পরবর্তীতে যখন এটি ব্যাপক আকার ধারন করে তখন মনে হয়েছিলো এমন একটি জাতীয় আন্দোলনের অংশ হতে পারাও সৌভাগ্যের বিষয়। দেশের ইতিহাস পরিবর্তনের এই আন্দোলনে অনেক চড়াই উতরাই পার হয়েছি, হচ্ছি। সবকিছু ব্যাখ্যা করার সময় বা সুযোগ কোনোটিই এই মুহুর্তে নেই। আন্দোলনে প্রথম ধাক্কা আমার উপরেই আসে। সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করার কারনে ছাত্রলীগ হল থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়। কিন্তু সেদিন আমার হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইয়েরা সে বাঁধায় প্রাচীর হয়ে দাড়িয়ে যায়। পরেও সোশ্যাল মিডিয়া ট্রায়ালের শিকারও আমি হই। কারন যারা এসব করছে তারা চায় এভাবে একজন একজন করে প্রশ্নবিদ্ধ করে আমাদের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি করার , আন্দোলনটাকে নষ্ট করে ফেলার। তাছাড়া অনেকের অনেক অসৎ উদ্দেশ্য আছে। যেগুলোতে আমাকে বাঁধা মনে করলে তারা এসব প্রোপাগান্ডা করে। কিন্তু মিথ্যা এতোটাও শক্তিশালী নয়।
আমি জানি আমাদের সাথে পুরো দেশের মানুষ রয়েছেন। নানা মতের, নানা দলের , বিভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শের। সবার চাওয়া ব্যক্তি, দল বা আদর্শ অনুযায়ী ভিন্ন। আমি জানি, সবার চাওয়া আমার দ্বারা পূরন করা সম্ভব না, সেই আশাও করিনা, সেই চেষ্টা করাও বৃথা।
কিন্তু আমি এটুকু নিশ্চিত জানি- আমার উদ্দেশ্য কি, আমার কি করা উচিৎ, আমার কোথায় গিয়ে থামতে হবে। এখন পর্যন্ত যা করেছি তা এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখেই করেছি। বিবেকের সাথে বিন্দুমাত্র আপোস করে নয়। আমার সামনে আমার আন্দোলনের উদ্দেশ্য, আমার দেশ, আমার দেশের মানুষ। শেষ।
আপনারা যারা কিছু না জেনে ২-৩টা ছবি দেখে মন মতো অনেক কিছু বলে ফেলছেন, আপনাদের সাথে ক্ষমতাসীন দলের অন্ধ ভক্তদের কোনো পার্থক্য নেই। ক্ষমতায় আসলে আপনিও তাদের মতো হবেন তাতে সন্দেহ নেই। বরং নিজের বিবেকবোধকে কাজে লাগান, দলান্ধ না হয়ে ব্যক্তিত্ব আর কাজ দিয়ে যাচাই করুন।
আমি মানুষ। আমার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে, অভিজ্ঞতার সীমাবদ্ধতা আছে। ভুলভ্রান্তি আছে। কিন্তু আমি নিজেকে সংশোধন করতে, ভুল থেকে শিক্ষা নিতে সবসময় প্রস্তুত। হয়তো আর একদিন বেঁচে থাকবো কিন্তু বাঁচার মতো বাঁচবো। অন্যায়ের সাথে আপোস করে নয়। আমাকে পথ দেখাবে আমার সত্য। ইনশাআল্লাহ দেখা হবে বিজয়ে...
ইএইচ