মুরাদুল মুস্তাকীম মুরাদ, কুবি
অক্টোবর ৯, ২০২৪, ০৮:২০ পিএম
মুরাদুল মুস্তাকীম মুরাদ, কুবি
অক্টোবর ৯, ২০২৪, ০৮:২০ পিএম
আওয়ামী ফ্যাসিজমের বিদায় এবং সরকারের পট পরিবর্তনের পর বিগত আমলে নিয়োগ পাওয়া অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীই নিরুদ্দেশ হয়েছেন।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়েও একইভাবে নিরুদ্দেশ আছেন কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও রেজিস্ট্রার দপ্তরের সেকশন অফিসার রেজাউল ইসলাম মাজেদ।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই তিনি অফিস করেছিলেন। এরপর থেকে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায়নি তাকে। এ অবস্থায় পলায়নের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে মাজেদের।
গত বছরের অক্টোবরে বিভিন্ন অনিয়ম করে তাকে চাকরি দেয় তৎকালীন আওয়ামীপন্থি প্রশাসন।
সরকারি চাকরি (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ তে বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী পলায়নের দায়ে দোষী হলে তাকে তিরস্কার থেকে শুরু করে বাধ্যতামূলক অবসর প্রদান, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা বরখাস্ত করা হতে পারে।
একই বিধিমালার ২ (চ) তে বলা হয়েছে, বিনা অনুমতিতে ৬০ দিন বা তদূর্ধ্ব সময় কর্ম থেকে অনুপস্থিত থাকলে ওই কর্মচারী পলায়ন বলে গণ্য হবেন। সরকারের পট পরিবর্তনের আগে মাজেদ সর্বশেষ ১৬ জুলাই অফিস করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে। এরপর থেকে দুইমাসেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি তিনি। এমনকি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই তার।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। রেজাউল ইসলাম মাজেদ এখন কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে সবশেষ গত ১৩ আগস্ট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেখা গেছে তাকে। তবে পুলিশি তৎপরতায় সেসময় তিনি দেশ ছেড়ে পালাতে পারেননি বলেই জানা গেছে।
মাজেদের চাকরির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার বলেন, গত দুই মাসে এখনো পর্যন্ত তার পক্ষ থেকে আমাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। ছুটিও নেয়া হয়নি। তাই নিয়মানুযায়ী আমরা শিগগিরই ফাইল ফরোয়ার্ড করবো। আইনে যে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা আছে, সে অনুযায়ীই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগ রয়েছে, ছাত্রনেতা থাকা অবস্থায় ভিন্নমত দমনের নামে প্রায়ই বিভিন্ন শিক্ষার্থীকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন করতেন রেজাউল ইসলাম মাজেদ। পান থেকে চুন খসলেই পেটাতেন নিজ দলের নেতাকর্মীদেরও। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদককাণ্ডের নেতৃত্বেও ছিলেন তিনি। তার নির্যাতনের কারণে অনেক শিক্ষার্থীকেই হল ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে; বাদ দিতে হয়েছে পড়াশোনা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কাজে নিয়মিত হস্তক্ষেপ, শিক্ষকদের নিয়ে কটূক্তি, উপাচার্যের গাড়ি আটকিয়ে অনৈতিক দাবি আদায়সহ রয়েছে আরা বিস্তর অভিযোগ।
সবচেয়ে বড় অভিযোগ, দলীয় অন্তঃকোন্দলে বিশ্ববিদ্যালয়েরই আরেক শিক্ষার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত অন্যতম আসামি মাজেদ। ২০১৬ সালের ১ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের অন্তঃকোন্দলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন মার্কেটিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের এ শিক্ষার্থী। তিনি কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
আওয়ামী সরকার ক্ষমতাচ্চ্যুত হওয়ার পরও এখনো মাজেদ বহাল তবিয়তে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা আক্তার। তিনি বলেন, মাজেদ আমার ছেলের খুনের মামলার চার্জশিটের ৩ নাম্বার আসামি হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ে তার চাকুরি হওয়া এবং এখনো তাতে বহাল থাকা আমার মতো মায়েদের জন্য অপমান। আমি চাই এই খুনের বিচার দ্রুত হোক এবং মাজেদসহ অন্যান্য আসামিদের চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হোক।
সার্বিক বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, নিয়মানুযায়ী সব ব্যবস্থা নেয়া হবে। রেজিস্ট্রার দপ্তর থেকে যখন জানানো হবে, একজন কর্মকর্তা আইনের বাইরে আছেন কিংবা আইন অনুযায়ী কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন, তখন আমাদের পক্ষ থেকে তার বেতনভাতা সয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইএইচ