Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪,

ছাত্রলীগের কায়দায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও শিক্ষার্থী হয়রানি

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

নভেম্বর ৭, ২০২৪, ০৮:১৪ পিএম


ছাত্রলীগের কায়দায় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও শিক্ষার্থী হয়রানি

হল প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ছাত্রদলের পরিচয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ, হলের সিট ছাড়তে চাপ প্রয়োগসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলের নেতা বনে যাওয়া আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে।

গতকাল বুধবার মধ্যরাতে বঙ্গবন্ধু হলের ২য়, ৩য় ও ৪র্থ তলার একাধিক কক্ষে গিয়ে রহিমসহ ৫-৭ জন ছাত্রদলের কর্মী পরিচয়ে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত তথ্য চেয়ে হয়রানি করেন।

Displaying IMG_20241107_181111.jpg

ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ছাত্রদলের নেতা বনে যাওয়া আব্দুর রহিম এর আগে ২০১৬ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাব্বির-আপেল কমিটিতে কলা অনুষদের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। পরে ২০১৭ সালে ছাত্রলীগের কমিটি পরিবর্তনের পর ভোল পাল্টে যোগ দেন ছাত্রদলে।স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের তোষামোদি করে ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পান রহিম। পাঁচ আগস্টের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধানের অনুসারী হিসেবে  নিজেকে পরিচিত করে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন আব্দুর রহিম।

Displaying IMG_20241107_181418.jpg

বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল প্রকার ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এ ধরনের কার্যক্রমে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হলে থাকা ছাত্রদের তথ্য এভাবে তালিকা করে রাখতো ছাত্রলীগ। কিন্তু ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর তা আবারও শুরু করেছে রহিমের নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের একাংশ।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ হাসান আকাশ বলেন, রাত ১২ টার পর আমার রুমে হঠাৎ করে ৮-১০ জন কোন অনুমতি ছাড়াই ঢুকে পরে। পরেরদিন আমার সেমিস্টার পরীক্ষা থাকায় আমি তাদের দিকে তেমন মনোযোগ না দিয়ে পড়তে থাকি। তারপর আমার বিভিন্ন তথ্যের জন্য জেরা করা শুরু করে। পরে আমার ম্যানার খারাপ এইসব বলে তাদের খাতায় নাম, বিভাগ লিখে পাশে স্টার চিহ্ন বসিয়ে দেয়।

ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনুর রশীদ বলেন, ছাত্রদলের রহিম ভাই ৪-৫ জন নিয়ে আমাদের রুমে এসে নাম লিস্ট করে। রুমের আরেক সিটের ফজলুল ভাই তখন ক্যাম্পাসে না থাকায় তাকেও কল করে। ফজলুল ভাইয়ের মাস্টার্সের একটা ইমপ্রুভ বাকি ছিলো তাই তার সিট ক্যান্সেল করে নি। কিন্তু তাও জোরপূর্বক সেই সিটে রহিম ভাই তার জুনিয়রকে উঠিয়ে দিয়ে যায়। এটা নিয়ে আমাদের মাঝে বাকবিতন্ডাও হয়।

এ বিষয়ে জানতে আব্দুর রহিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন তিনি। তিনি বলেন- হ্যা, আমি রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছি। স্বৈরাচারী ছাত্রলীগের পোস্টেড কোনো নেতাকর্মী কেউ হলে আছে কি না, সেটা দেখার জন্য ছাত্রদল সেখানে গেছে। কিন্তু শিক্ষার্থী কাউকে ডিস্টার্ব বা বের করে দেওয়া হয়নি। হলে ছাত্রলীগের পোস্টেড কেউ আছে কি না, এটা জিজ্ঞেস করা তো দোষের কিছু না৷

কথোপকথনের এক পর্যায়ে ছাত্রদল কেন শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছে জানতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে রহিম বলেন, সাংবাদিকরা নিউজ করে কি করতে পারে আমি দেখে নিবো, আর আমি কি করবো তোমরা দেখবে৷

এদিকে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে হল প্রশাসনের কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন হলটির সিনিয়র হাউজ টিউটর আব্দুল মুয়ীদ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে এ ধরনের অভিযোগ আমিও শুনেছি। হলে থাকা শিক্ষার্থীদের তালিকা করতে এমন কোনো সাহায্য হল প্রশাসন ছাত্রদলের কাছে চায় নি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে এমন তথ্য চাওয়া ঠিক নয়। আমরা দ্রুতই হলের সিট বরাদ্দের তালিকা প্রকাশের জন্য কাজ করছি।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, হলের সিট বরাদ্দের বিষয়ে হল প্রশাসন কাজ করছে। আমরা হল প্রশাসনের পক্ষ থেকেই প্রতিটি কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ এবং সিট বরাদ্দের জন্য সাক্ষাৎকার নিয়েছি। কিন্তু রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে আলাদাভাবে হলের কক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানির বিষয়টি অনুচিত। হল প্রশাসন এ ধরনের দায়িত্ব কাউকে দেয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হোসেন প্রধান বলেন, হলে কে থাকবে এটা নির্ধারণ করবে হল প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে কেউ যদি ছাত্রদলের নাম ব্যবহার করে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

বিআরইউ

Link copied!