Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

ইবিতে ‘সান্ধ্য আইন’ প্রবর্তনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ইবি প্রতিনিধি

ইবি প্রতিনিধি

ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪, ০৬:১০ পিএম


ইবিতে ‘সান্ধ্য আইন’ প্রবর্তনে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সাধারণ সভার মাধ্যমে সান্ধ্য আইনে ছাত্র-ছাত্রীদের হলে প্রবেশ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।  ছাত্র হলে রাত ১১ টার মধ্যে এবং ছাত্রীদের মাগরিবের আজান হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে  বাধ্যতামূলকভাবে প্রবেশের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের স্ব-স্ব হল ব্যতিরেকে অন্য হলে অবস্থানেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

এতে ক্যাম্পাসজুড়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও  ক্যাম্পাসে সক্রিয় রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন নেতৃবৃন্দ।

এবিষয়ে  ইসলামী ছাত্রশিবির ইবি শাখার সভাপতি এইচ এম আবু মুসা বলেন, ছাত্রশিবির মনে করে প্রত্যেকটা হল প্রশাসনের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়বদ্ধতা রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এখতিয়ারাধীন যেকোনো সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রায় প্রতিদিন গভীর রাতে ঝোপঝাড়ে ছেলে-মেয়েদের অশ্লীল অবস্থায় ধরে বিচার করেছে, কয়েকদিন আগে রাত দুইটার সময় কিছু ছেলে শিক্ষার্থী মেয়েদের হলের সামনে গিয়ে চিল্লাচ্ছে বলে তার প্রতিকার চেয়ে একটা মেয়ে পোস্ট করলো। এভাবে শিক্ষার্থীরা অনিরাপদ তো বটেই কিছু দুষ্টু-চক্র এটাকে হাতিয়ার বানিয়ে যৌন হয়রানি, ইভটিজিং, মাদক সেবন ও গুপ্ত হত্যাসহ ঘটাতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তবে গৃহীত সিদ্ধান্তে কোনো শিক্ষার্থীদের মতামত না নেওয়ায় কিছুটা হলেও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। আমরা মনে করি শিক্ষার্থী সংশ্লিষ্ট যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়া উচিত। আমরা খুশি হতাম যদি প্রভোস্টরা স্ব স্ব হলের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করে সিদ্ধান্ত নিতেন।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ইবি শাখার আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, এটা কিন্ডারগার্টেন না, বরং স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আমরা এরকম সান্ধ্য আইন বাতিল চাই। এ বিষয়ে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে কথা বলবো।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান এক বিবৃতিতে জানান, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সব সময় শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা এবং অধিকার রক্ষায় কাজ করে আসছে। কোনো ধরনের শৃঙ্খলা বা নীতির নামে শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতা হরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। একটি বিশ্ববিদ্যালয় যাতে শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তা, মতপ্রকাশ এবং নিজেদের জীবনযাত্রা পরিচালনা করতে পারে, সে ধরনের পরিবেশ তৈরি করা উচিত। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদ্য ঘোষিত সন্ধ্যা আইন শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করবে এবং একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। আমরা মনে করি সান্ধ্য আইন শিক্ষার্থীদের মৌলিক স্বাধীনতা ও তাদের জীবনযাত্রাকে সীমাবদ্ধ করার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।

ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ইবি শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, শিক্ষার্থী বান্ধব সিদ্ধান্তের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে অভ্যস্ত কেননা আমরা প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই শিক্ষার্থী অধিকারে কাজ করে চলছি। ১৪০তম প্রভোস্ট কাউন্সিল বৈঠকে ক্যাম্পাসের মূল স্টেকহোল্ডার শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ না করে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় আমরা এই উদ্ভট সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি। যেহেতু ক্যাম্পাস নিরাপত্তার প্রশ্ন চলে এসেছে সেহেতু আমরা প্রশাসনকে বলবো নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর দিন এবং হল প্রভোস্ট ও টিউটরদের ক্যাম্পাসে অবস্থান বাধ্যতামূলক করতে এবং হলে রিডিং রুমের প্রশস্ততা, রিসার্চ ও জব এইড তৈরি, খাবার মান উন্নতকরণ ও ডেটা সার্ভিস ডেভেলপ করা সহ শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত গ্রহণে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা শিক্ষার্থীদের মনস্তত্ত্বকে উপেক্ষা করে প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তকে দৃঢ়তার সহিত প্রত্যাখ্যান করছি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, প্রত্যেক আবাসিক হলের ভিতর একটা করে ক্যান্টিন, চাহিদা মোতাবেক মেডিসিন, পর্যাপ্ত রেডিং রুম নিশ্চিত করে এই আইন বাস্তবায়ন করুক। এর আগে বাস্তবায়ন গ্রহণযোগ্য নয়। পাশাপাশি মেয়েদের ক্ষেত্রে যে সান্ধ্য আইন নামক যে সন্ধ্যায় প্রবেশ সেটা মেয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা উচিত। জরুরি অবস্থায় প্রবেশ-প্রস্থানের রোডম্যাপ না দিয়ে মেয়েদের হলে সান্ধ্য আইন এবং ছেলেদের হল এগারোটায় বন্ধ এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসা উচিত বলে মনে করি। 

আরএস

Link copied!