Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫,

জবিতে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের থিসিস বন্টনে শর্ত আরোপ, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

জবি প্রতিনিধি

জবি প্রতিনিধি

জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৭:২২ পিএম


জবিতে স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের থিসিস বন্টনে শর্ত আরোপ, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে শিক্ষার্থীদেরকে থিসিস বন্টনে সর্বনিম্ন সিজিপিএ ও একটি ব্যাচে সর্বোচ্চ কতজন থিসিস করতে পারবেন এ সংক্রান্ত শর্ত দিয়ে একটি অফিস স্মারক জারি করা হয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি অফিস স্মারক জারি করা হয়। শিক্ষার্থীদের থিসিস নিতে এমন শর্ত জারির বিষয়টি সামনে আসার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

ওই অফিস স্মারকে বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে থিসিস গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সুপারভাইজ্ঞার বা কো-সুপারভাইজার হওয়ার যোগ্যতা হিসেবে তাদের অবশ্যই পিএইচডি বা এমফিল বা থিসিসসহ মাস্টার্স ডিগ্রি থাকতে হবে। এ ছাড়া একজন কোয়ালিফাইড শিক্ষক স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে এক শিক্ষাবর্ষের তিন জনের বেশি শিক্ষার্থীর সুপারভাইজার হতে পারবেন না।

এ ছাড়া আরো বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএ প্রথম বর্ষে ভর্তির সময় যে সকল বিভাগ বা ইনস্টিটিউটে আসন সংখ্যা ৮০ বা তার চেয়ে কম সে সকল বিভাগে ঐ আসন সংখ্যার ২০ শতাংশ এবং যে সকল বিভাগে আসন সংখ্যা ৮০ এর অধিক সে সকল বিভাগে ঐ আসন সংখ্যার ১০ শিতাংশ শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে থিসিস নিয়ে অধ্যয়ন করতে পারবে। যে সকল শিক্ষার্থীর স্নাতক (সম্মান) বা বিবিএ পর্যায়ে ন্যূনতম সিজিপিএ তিন (৩.০০/৪.০০) আছে তারা থিসিস গ্রহণ করতে পারবে।

পাশাপাশি থিসিস গ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সুপারভাইজার লটারীর মাধ্যমে অথবা বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের অ্যাকাডেমিক কমিটি কর্তৃক গৃহীত পদ্ধতিতে নির্ধারিত হবে। তবে কোনভাবেই শিক্ষার্থীর পছন্দ অনুযায়ী (by choice) সুপারভাইজার নির্ধারণ করা যাবে না। যদি কোনো কোয়ালিফাইড শিক্ষক সুপারভাইজার হতে না চান এবং সেক্ষেত্রে যদি বিকল্প কোনো কোয়ালিফাইড শিক্ষক না থাকে তাহলে উক্ত কোয়ালিফাইড শিক্ষককে সুপারভাইজার হতে হবে বলেও তাতে উল্লেখ করা হয়।

গত ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ৭২তম সভায়  এসব সিদ্ধান্ত হয় যা ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ৯৯-তম সভায় অনুমোদিত হয়েছে। এ ছাড়া স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে থিসিস বন্টন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য গত ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ তারিখে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে এসব নিয়ম অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এ সংক্রান্ত অফিস স্মারক জারির পর থেকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে সমালোচনা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো অ্যাকাডেমিক পড়াশোনা ও গবেষণার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং অনেকটা নির্ভর করে গবেষণার উপর। সেই গবেষণার ক্ষেত্রে যদি সুযোগ না দেয়া হয় তবে বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে এগোবে কীভাবে? স্নাতকোত্তর শ্রেণিতেই আময়া ভালোভাবে একটা থিসিস করার সুযোগ পাই। কিন্ত সিজিপিএ শর্তসহ অন্যান্য শর্তে যদি এই সুযোগ থেকে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হয় তাহলে এটা কোনোভাবেই শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নয়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষার্থী বলেন, স্নাতকোত্তর শেষে একজন শিক্ষার্থীর আশা থাকে থিসিস করবে যেটা তা বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিতে গেলে ভালো বিশ্ববিদ্যালয় পেতে সাহায্য করবে। কিন্ত আমাদের থিসিসের শর্ত দিয়ে দেয়া হচ্ছে। সিজিপিএ কম থাকা মানে তো এই নয় যে একজন ভালো গবেষণা করতে পারে না। আবার বলা হচ্ছে, ২০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীকে থিসিস দেয়া যাবে না। এটা তো শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত হলো না।

এদিকে থিসিসের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ প্রশস্ত রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক বলেন, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রিসার্চ এর সুযোগকে সীমাবদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নেয়ার পরবর্তী সময়ে অনেকেই সমালোচনা করছে। আমার মতে এটা আবার পুনর্বিবেচনা করা যেতে পারে। ২০শতাংশ শিক্ষার্থীর লিমিটেশনটা মডিফাই করা যেতে পারে। কিন্তু সিজিপিএ ৩ এর ক্ষেত্রে আশা করি সমস্যা হওয়ার কথা না।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বেসিক কাজ যেটা, আমরা স্কোপটাকে ওপেন করব। কোনোভাবে যেন স্কোপটা লিমিটেড না হয়ে যায়। যদি কোনো স্টুডেন্টকে নিয়ে যদি সুপারভাইজার ভালো কোনো ফলাফল আনতে পারে তবে সেটা তো ভালো। তবে একাধিক শিক্ষক যদি আবার একজন স্টুডেন্ট বা ভালো স্টুডেন্টকেই চান সেক্ষেত্রে একটা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে সবাই মিলে একটা মেথডে যদি আসা যায় সেটা খুবই ভালো।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম বলেন, এই থিসিসের বিষয়ে আমাদের একটা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা একটা রিপোর্ট দিবে। তাদের রিপোর্ট অনুযায়ী শিগগিরই নতুন সিদ্ধান্ত আসবে। আশা করি ভালো একটা সিদ্ধান্তই আসবে।

আরএস

Link copied!