Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

ডিআইইউ ছাত্র নেতৃত্ব: ভাবনা, প্রত্যাশা ও প্রতিবন্ধকতা

ডিআইইউ প্রতিনিধি

ডিআইইউ প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৫, ০৮:৫২ পিএম


ডিআইইউ ছাত্র নেতৃত্ব: ভাবনা, প্রত্যাশা ও প্রতিবন্ধকতা

নতুন আলোচনার সূচনা হয়েছে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে। যেখানে দেশ রাজনীতির নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছে।

ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পালিয়ে গেছেন, আর বিপ্লবী পথে আগত সরকার দেশের ভবিষ্যতকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার অঙ্গীকার নিয়েছে। এই পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতি আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠেছে।

গত দু’দশক ধরে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করার পক্ষে ও বিপক্ষে ব্যাপক তর্ক-বিতর্ক চলছে। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ক্ষমতাসীন সংগঠনের নেতা ও কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে বারবার দমন-নিপীড়নের চেষ্টা করে আসায়, ছাত্ররাজনীতি বন্ধের আহ্বানও তীব্রতা লাভ করেছে। তবে ক্ষমতাসীন দলের পাশাপাশি বিরোধী দলের ছাত্র অঙ্গসংগঠন ও বাম সংগঠনগুলোও এ বিষয়ে সর্বদা বিরোধিতা করে এসেছে।

বিভিন্ন আন্দোলন এবং ঘটনার প্রেক্ষাপটে, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় ছাত্ররাজনীতির বিষয়টি নিয়ে তাদের অবস্থান ঘোষণা করেছে। বিষয়গুলো নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ছাত্র রাজনীতিবিদদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন বায়েজিদ হুসাইন।

রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সামাজিক অস্থিরতা

বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ছাত্র নেতাদের কর্মসূচি, ভাবনা এবং প্রত্যাশা অনেকটাই দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার উপর নির্ভরশীল। তারা মূলত ছাত্রদের অধিকার, শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়ন, জাতীয় সংকট মোকাবিলা ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা নিয়ে কাজ করে।

তাদের ভাবনা হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। যেন দেশের প্রতিটি নাগরিক সমান সুযোগ পায়। ছাত্রদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তা তাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রতিবন্ধকতা বেশ কিছু দিক রয়েছে।

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, দলীয় স্বার্থের মধ্যে বিরোধ, ছাত্রদের মধ্যে বিভেদ এবং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যা তাদের কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করে। অনেক সময় ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক চিন্তা ব্যক্তিগত বা দলের স্বার্থের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে যা তাদের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারে। পাশাপাশি প্রশাসনিক চাপ, রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং সামাজিক অস্থিরতা তাদের কাজের পথকে আরও কঠিন করে তোলে। এমন অবস্থায় ছাত্রনেতাদের জন্য নিরপেক্ষতা, সুশাসন এবং বাস্তবধর্মী চিন্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেন তারা নিজেদের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন এবং ছাত্র সমাজের কল্যাণে কাজ করতে পারে।

জুবায়ের নুর শাকিব। শিক্ষার্থী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

আদর্শিক প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা

প্রাইভেট ভার্সিটিগুলোতে রাজনীতির ক্ষেত্রে অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে তারা সরাসরি ক্যাম্পাসের রাজনীতি করতে দিতে চায় না তাহলে এই বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ দেশ নিয়ে তাদের চিন্তাধারার প্রতিফলন কীভাবে হবে! আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করে রাজনৈতিক সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা সম্ভব নয়।

এর জন্য প্রয়োজন একটি কালজয়ী আদর্শিক ছাত্র সমাজ। আর সেই কালজয়ী আদর্শটি হল নবী আদর্শ। যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জানাবে মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) এর আদর্শ।

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে ভার্সিটিতে আমাদের আদর্শিক প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেখানে কালমার্কস, লেলিন ও আব্রাহাম লিংকনদের আদর্শের রাজনীতি চর্চা করা হয় সেখানে সর্বকালের সেরা মহামানব জনাবে মুহাম্মদূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ চর্চা করতে গেলে আমাদের নানাবিধ বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এটা হওয়া উচিত নয়। ইসলামি ছাত্র আন্দোলন তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসী ও অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পেরেছে এবং ন্যায় ও ইনসাফের কথা বলে আসছে যা আগামীতেও বলে যাবে।

মো. শামীম মাতুব্বর। শিক্ষার্থী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

ডিআইইউ ছাত্র সংসদের মাধ্যমে মুক্ত চিন্তার চর্চা হতে পারে

ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) ক্যাম্পাসে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে ছাত্রলীগের অংশগ্রহণ দেখা গেলেও অন্যান্য রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে দেখা যায়নি। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। বিগত ছয়মাসে তাদের উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি দেখা যায়নি। শুধু লেজুরবৃত্তির রাজনীতি বর্তমান বাংলাদেশের কোনো ক্যাম্পাসে সম্ভব না।

ছাত্রনেতাদের চিন্তাভাবনা থাকা উচিত অ্যাকাডেমিক ও প্রশাসনিক জটিলতা নিরসন, ক্যাম্পাস উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা, বিভিন্ন সেমিনার, কর্মশালা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম আয়োজন। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট, বৃত্তি ও গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধি নিয়ে তারা নিয়মিত কাজ করা উচিত। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা থাকে ছাত্রনেতারা প্রশাসনের সঙ্গে কার্যকর সংযোগ স্থাপন করবেন। যেন তাদের ন্যায্য দাবিগুলো বাস্তবায়িত হয়। শিক্ষার্থীরা চায় ক্যাম্পাস শুধু পাঠদানের কেন্দ্র না হয়ে এক অনন্য জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্র হয়ে উঠুক। ডিআইইউ ছাত্র সংসদের মাধ্যমে মুক্ত চিন্তার চর্চা হতে পারে দেশ গড়ার কারখানা। 

তবে বাস্তবতায় ছাত্রনেতাদের নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়। বর্তমানে প্রশাসনিকভাবে ডিআইইউতে রাজনীতি নিষিদ্ধ। কিন্তু দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতির এই গণ জোয়ারে রাজনীতি করার অধিকার সকলের আছে। তবে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামত গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, দক্ষ নেতৃত্ব এবং প্রশাসনের সমর্থনই পারে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে। ডিআইইউতে শিক্ষার্থীবান্ধব নেতৃত্ব বিকাশ পেলে একটি আধুনিক, গবেষণামুখী ও সমৃদ্ধ শিক্ষাঙ্গণ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

মো. সাদিক মাহমুদ। শিক্ষার্থী ও ক্লাব সংগঠক ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

ছাত্ররা সরাসরি ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে পারে

প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অন্যতম একটি বাধা হচ্ছে ছাত্ররা সরাসরি ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতে পারে না, রাজনীতি চর্চা থেকে অনেকটা দূরে সরিয়ে রাখা হয় শিক্ষার্থীদের। যার ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করাটা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু এতে করে কি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব? কখনোই সম্ভব না। এর জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক চর্চা এবং কালজয়ী আদর্শিক ছাত্রসমাজ আর সেই আদর্শিত হতে হবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত-  যাতে করে পুরো বিশ্বে শান্তি স্থাপন করা যায়। যার উদাহরণ স্বরূপ আমরা ইসলামি ছাত্র আন্দোলনকে দেখতে পারি। 

আমাদের প্রত্যাশা থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক চর্চা পরিচালনায় কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। আমরা দেখে থাকি প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় আব্রাহাম লিংকনের তত্ত্ব অনুসারে  রাজনী চর্চা করা হয় কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথে রাজনৈতিক চর্চা করতে দেওয়া হয় না এবং সেই পথে রাজনীতি করতে গেলে নানা ধরনের বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তাই আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুক্ত রাজনীতি এবং রাজনৈতিক চর্চা করতে দেওয়া হোক যেখানে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। যার মাধ্যমে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনা যাবে।

মো. আশিকুজ্জামান কাব্য। শিক্ষার্থী ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

ইএইচ

Link copied!