কুবি প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৮:২০ পিএম
কুবি প্রতিনিধি
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৮:২০ পিএম
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে ডকুমেন্টারিগুলো ইন্ডিয়ান মিডিয়ার জন্য চপেটাঘাত। আজকে আমার ভালো লেগেছে যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ও জুলাই নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রকাশ করেছে।
সোমবার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (কুবিসাস) ১১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন ও কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২৪ এর দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
অনুষ্ঠানে কার্যনির্বাহী পরিষদ-২০২৪ এর সাধারণ সম্পাদক সাঈদ হাসানের সঞ্চালনায় এবং সভাপতি জুবায়ের রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কুবিসাস`র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল ও কোষধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান। এছাড়া প্রধান আলোচক হিসাবে উপস্থিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও বিশেষ আলোচক হিসেবে ছিলেন নেত্র নিউজের এডিটর ইন চিফ তাসনিম খলিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কুবিসাস`র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো: হায়দার আলী বলেন, আপনাদের স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে হবে। লেজুড়বৃত্তিক সাংবাদিকতা থেকে বের হতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো অন্যায়ের পাশাপাশি ভুলভ্রান্তিও তুলে ধরতে হবে। এমন কি আমার ভুলগুলোও তুলে ধরবেন। আমি এটাই চায়। আমি ৬ মাস ক্যাম্পাসে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক ভালো ও মেধাবী শিক্ষক-শিক্ষার্থী থাকার পরেও এই বিশ্ববিদ্যালয় এখনো সরকারি হিসেবে ২য় গ্রেডে রয়েছে। সেটা খুবই দুঃখ জনক। আমি সাংবাদিকদের বলব বিশ্ববিদ্যালয় কেন ২য় গ্রেডে গেল সেই রহস্য উদঘাটন করা হোক। দেশে এমন অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আছে যারা ওয়ান গ্রেডে আছে। আপনাদেরকে এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখতে হবে। নতুন ক্যাম্পাসের কাজ দ্রুত শেষ করা যায় সে সম্পর্কে লেখালেখি করতে হবে। নতুন ক্যাম্পাসের যে অনিয়ম হয়েছে সেটিও উদঘাটন করতে হবে। যারা অন্যায়ের সাথে জড়িত আছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হোক।
উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন, সাংবাদিক আমাদের সমাজের দর্পন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অথিরিটি ও রেসপনসেবলিটি নিশ্চিত হয় জবাবদিহিতার মাধ্যমে এবং সাংবাদিকেরা এই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেন। আমি আপনাদের নৈতিকতা ঠিক রেখে নিউজ করতে বলবো। মেধা ও মননের সমন্বয়ে কাজ করতে বলবো। সর্বশেষ কুবিসাসের নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (কুবিসাস) নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও তারা জাতীয় বিষয়গুলো নিয়ে সোচ্চার থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে কুবিসাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাজ জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তারা। পড়াশোনার পাশাপাশি পেশাদারিত্ব সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আমরা প্রত্যাশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেজ বৃদ্ধিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাংবাদিকরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, এই আন্দোলনে সবার অংশগ্রহণ আছে। একজন মানবাধিকার কর্মী বলেছে ঢাকার বাইরে কিসের আন্দোলন হয়েছে? এই ডকুমেন্টারিগুলো তার প্রমাণ। আমি দেখেছি আন্দোলনে অনেক মেয়েরা অংশগ্রহণ করেছে, সামনে আসছে। কী অভূতপূর্ব আন্দোলন। সেই অনুযায়ী যদি নব্বইয়ের আন্দোলন দেখেন আপনি খুব কম মেয়ে পাবেন। বাংলাদেশের এই আন্দোলন নিয়ে ইন্ডিয়ার মিডিয়া অনেক আজেবাজে কথা লেখে। আমার মনে হয় এই ডকুমেন্টারিগুলো ইন্ডিয়ার মিডিয়ার জন্য চপেটাঘাত। আমি ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার ফ্যান। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা আমরা এখনো বুঝতে পারে নাই। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার মূল জায়গা স্টোরি টেলিং শেখা। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা এই সুযোগটা তরুণ সাংবাদিকদের দেয়। আপনারা কুবিসাস`র মাধ্যমে একটা পেইজ খুলেন ওইখানে সবাইকে বলবেন স্টোরিগুলো শেয়ার করতে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা মানেই শোষণের শিকার। আগের সরকার সকল সিকিউরিটি ফোর্স দিয়ে আমাদের অধিকার হরণ করেছে। আমি এখানে সবাইকে বলবো ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জীবনী পড়তে। ভিসি এটা বলেছে, প্রো-ভিসি এটা বলেছে, হলে খাবার সংকট এসবে পড়ে থাকবেন না। নিজেকে ব্যাপ্ত করেন। স্টোরি টেলিংয়ের মাধ্যমে নিজেকে খুঁজে পাবেন। এটা নিজেকে খুঁজে পাওয়ার একটা ভালো মাধ্যমে। আপনারা শুধু ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ থাকবেন না। আমি আশাবাদী কুবিসাস বাংলাদেশের যতগুলো ক্যাম্পাস সাংবাদিকতায় যারা যারা এগিয়ে আছে তাদের মধ্যে ফ্রন্ট লাইনে থাকবে।
তাসনিম খলিল বলেন, আজকে দায়িত্ব হস্তান্তরে আগের নেতৃবৃন্দ সরে যাবেন নতুন আপনারা আসবেন। আপনারা খুব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে নেতৃত্ব নিচ্ছেন। ১যুগ বাংলাদেশে কোনো স্বাধীন সাংবাদিকতা ছিল না। আপনারাই প্রথম নেতৃত্ব যারা নতুন করে স্বাধীন বাংলাদেশে, স্বাধীন গণমাধ্যম সৃষ্টির সুযোগ পাচ্ছেন। আপনাদের মনে রাখতে হবে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার উর্বর ক্ষেত্র হলো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আপনারা অনেকে বিভিন্ন স্থানীয় মিডিয়া বা জাতীয় মিডিয়ায় প্রতিনিধি হিসেবে যুক্ত আছেন। আমার প্রশ্ন হলো বিশ্বের বিভিন্ন জাতি যেমন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের হাত পাকায় ইউনিভার্সিটি পত্রিকায় কাজ করে। বাংলাদেশে এরকম ব্যক্তিগত গণমাধ্যম দেখা যায় না। এখানে একটা বড় গ্যাপ আছে আপনারা নতুন যারা আসছেন এরকম কিছু করা যায় কিনা দেখবেন। আপনারা স্বাধীন গণমাধ্যম চর্চা নিশ্চিত করবেন। আপনারা যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সেহেতু আপনারা শিক্ষার্থীদের সকল স্বার্থ নিয়ে কথা বলবেন।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে আপনাদের কমিউনিটির প্রতি দায়বদ্ধতা। যেটা ইংরেজিতে একটা টার্ম আছে টাউন এন্ড গাউন। আপনারা গাউন পড়া শিক্ষিত লোকজন কিন্তু আপনাদের টাউন এর লোকজন কেমন আছে, বাইরের দোকানদার কেমন আছে তাদের প্রতি আপনাদের দায়িত্ব আছে। এই দায়িত্ব আপনাদের মাথায় রাখতে হবে। আপনাদের যেকোনো পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে আসুন আমরা সহযোগিতা করব আপনাদেরকে।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাবেক সভাপতি মো.শফিউল্লাহ বলেন, সাংবাদিক সমিতির যাত্রা শুরু হয় ২০১৩ সালে। আমি পরিষ্কার করে বলতে চায় শিক্ষার্থী আর সাংবাদিক এক নয়। কুবিসাসের সাবেকরা সবাই ভালো অবস্থানে আছে। আমি বিপ্লবী নয় আমি বিপ্লবী ও নির্যাতিতদের কথা বলি। সাংবাদিকদের কাজ নিউজ প্রচার করা। আমি স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করি, আন্দোলনে অনেক মরা, পচা লাশ দেখেছি। ২০ জন নিহতের নিউজ করলে দেখা যায় সেখানে ২৭ জন আছে। সাত জনের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারায় ২০ জন উল্লেখ করতে হয়েছে । আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে ছিলাম তাই আমার সাহসের জায়গায় থেকে কাজে অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
সাবেক সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা হল সাহসিকতার সাংবাদিকতার আঁতুড় ঘর। বাংলাদেশে এখনো ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা অবহেলিত হয়ে আছে। এখন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে সবাই চেনে। ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের যদি গুরুত্ব আগে দেওয়া হত তাহলে আগেই দেশ স্বাধীন হত। আমরা সাইদ, মুগ্ধকে হারাতে হতো না। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা অন্যায় নিয়ে কথা বলতে গেলে কর্তৃপক্ষের বলে বসে সমাধান করতে, আসলে অন্যায় হয়ে গেলে বসে সমাধান করা যায় না।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা জেলার মাই টিভির প্রতিনিধি আবু মুসা, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের তানভীর দীপু, সময় টিভির ইসতিয়াক আহমেদ, এসএ টিভির রফিকুল আলম, দৈনিক বাংলা প্রতিনিধি মাহফুজ নান্টু, চ্যানেল আইয়ের জাহিদুল আলম, এখন টিভির খালেদ সাইফুল্লাহ, আমার দেশের প্রতিনিধি এম হাসান, প্রতিদিনের সংবাদের মারুফ আহমেদ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল মামুন ও সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ, ছাত্র শিবির সভাপতি ইউসুফ ইসলাহীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
আরএস