বায়েজিদ হুসাইন, ডিআইইউ
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৯:৩১ পিএম
বায়েজিদ হুসাইন, ডিআইইউ
ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৫, ০৯:৩১ পিএম
একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রতিবছর এই দিনে স্বাধীন বাংলাদেশের আপামর জনগণ মহান ভাষা আন্দোলনের সূর্যসন্তানদের শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করে। ১৯৫২ এর ভাষা শহীদদের পবিত্র রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি মায়ের ভাষা, মুখের ভাষা। তাদের রক্তের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালি জাতির মুক্তিসংগ্রামের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস।
একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের শিখিয়েছে আত্মত্যাগের মূলমন্ত্র। বাঙালিকে করেছে একতাবদ্ধ। এই একতাবদ্ধে উজ্জীবিত হয়েই বাঙালিদের মধ্যে জাগ্রত হয়েছিল স্বাধীনতার চেতনা এবং সেটার প্রতিফলন এই জুলাই অভ্যুত্থানে দেখা গেছে। এই চেতনা থেকেই আজ আমরা স্বাধীন। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ভেদে ভাষার ভিন্নতা রয়েছে আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য সম্পর্কে তরুণদের ভাবনা জানতে তাদের সঙ্গে কথা বলেন আমার সংবাদের ডিআইইউ প্রতিনিধি বায়েজিদ হুসাইন।
আঞ্চলিক ভাষার সংরক্ষণ মানে আমাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা-
ভাষা কেবল কথার বাহন নয়, এটি একটি সংস্কৃতি, নিজস্ব পরিচয় ও আত্মার প্রতিচ্ছবি। আমাদের ভাষার প্রতি প্রেম শুধু সাহিত্য কিংবা শুদ্ধ উচ্চারণের গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়, আঞ্চলিক ভাষার প্রতিও গভীর ভালোবাসা থাকা প্রয়োজন। আঞ্চলিক ভাষা আমাদের নিজস্ব পরিচয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ভাষার প্রতিটি শব্দ, উচ্চারণ আমাদের শৈশবের স্মৃতি, আমাদের সংস্কৃতি আর আবেগের সাথে জড়িয়ে থাকে। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার মাঝে যে আন্তরিকতা ও আত্মীয়তার অনুভূতি, তা শুদ্ধ উচ্চারণে কখনোই সম্ভব নয়।
বাংলা ভাষার বিভিন্ন আঞ্চলিক রূপ যেমন চট্টগ্রামের স্বতন্ত্র টান, সিলেটি ভাষার সুরেলা ছন্দ, খুলনার সহজ-সরল বাচনভঙ্গি বা বরিশালের প্রাণবন্ত উচ্চারণ—সবকিছুই ভাষার সৌন্দর্য বহন করে। এছাড়াও প্রতিটি অঞ্চলের ভাষা অঞ্চলের মানুষের আবেগ, ঐতিহ্য ও জীবনের গল্প বলে।
অনেকেই মনে করেন আঞ্চলিক ভাষা শুধু গ্রাম্য কথ্য রূপ, কিন্তু এটি আসলে ভাষার শেকড়।
এই ভাষায় কথা বললেই মনে হয়, শেকড়ে ফিরে এসেছি। আঞ্চলিক ভাষায় মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের গল্প, শৈশবের স্মৃতি—সবকিছু মিশে আছে।"(আমার কাছে মনে হয়"কিরে মনি, খাবিনে?"—এই সহজ একটা আঞ্চলিক কথার মাঝেই মায়ের স্নেহ, যত্ন আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। মায়ের ভাষার এই আপন সুরেই আমি ভালোবাসা, আর শান্তি খুঁজে পাই।)"
শহরের কোলাহলে থেকেও আমাদের আঞ্চলিক ভাষা আমাদের হৃদয়ে গাঁথা, আর আঞ্চলিক ভাষাতেই রয়েছে আমাদের আত্মপরিচয় ও সংস্কৃতির প্রতিচিহ্ন। নিজের এ আঞ্চলিক ভাষার সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ করা উচিত
আঞ্চলিক ভাষার সংরক্ষণ মানে আমাদের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখা। তাই বলাই যায় ভাষার প্রতি আমদের প্রেমের অন্যতম দিক হলো নিজস্ব আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে ভালোবাসা, লালন করা এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেওয়া।
খালিদ হাসান টিটো, সাংগঠনিক সম্পাদক
সিভিল ইন্জিনিয়ারিং ক্লাব, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
ভাষার প্রতি নয় আঞ্চলিক ভাষার প্রতি ও শ্রদ্ধা রাখা উচিত-
আমি মনে করি ভাষার প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা তখনই সম্পূর্ণ হয়, যখন আমরা তার আঞ্চলিক বৈচিত্র্যকে সম্মান করি। স্থানীয় ভাষা বা উপভাষাগুলো আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও স্বকীয় পরিচয়ের অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিটি অঞ্চলের ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং মানুষের জীবনধারা, অভ্যাস ও আবেগের প্রতিফলন। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষায় শব্দের ব্যবহার, উচ্চারণ ও প্রকাশভঙ্গিতে স্পষ্ট পার্থক্য দেখা যায়, যা আমাদের ভাষাকে আরও সমৃদ্ধ ও রঙিন করে।যেমন :
চট্টগ্রামের ভাষায় “তুমি কেমন আছো?” বলা হয় “তুমি ক্যামনে আছো?”
সিলেট অঞ্চলে বলা হয় “তুমারে কিতা লাগি?”
বরিশালে “তোমরা কিরাম আছো?”
খুলনায় “তু কেমন আছস?”
ময়মনসিংহে “তোমার কি অবস্থা?”
তাই ভাষার প্রতি সত্যিকারের প্রেম কেবলমাত্র প্রমিত ভাষা চর্চায় সীমাবদ্ধ নয়; বরং তার আঞ্চলিক রূপগুলোর সংরক্ষণ, চর্চা ও ভালোবাসার মধ্যেও নিহিত।আমার মনে হয়, বাঙালি হিসেবে শুধু বাংলা ভাষার প্রতি নয় আঞ্চলিক ভাষার প্রতি ও শ্রদ্ধা রাখা উচিত।
মেহেনুর রহমান,
সাংগঠনিক সম্পাদক, ডিআইইউ বন্ধুসভা।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরতে চাই-
ভাষা কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয়ের প্রতিচ্ছবি। আমার মাতৃভাষা বাংলার প্রতি ভালোবাসা যেমন গভীর, তেমনি আঞ্চলিক ভাষার প্রতি আমার টানও অপার। আঞ্চলিক ভাষা আমাদের শেকড়ের সাথে যুক্ত রাখে, স্থানীয় সংস্কৃতি ও অনুভূতিকে ধারণ করে।
আমি যখন আমার নিজ এলাকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি, তখন মনে হয় এটি কেবল শব্দ নয়, বরং অনুভূতির আদান-প্রদান। আমাদের আঞ্চলিক ভাষাগুলো বাংলার ভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। এগুলো সংরক্ষণ ও প্রচারের মাধ্যমে আমরা ভাষার প্রকৃত সৌন্দর্য ধরে রাখতে পারি।
বিশ্বায়নের যুগে অনেকেই আঞ্চলিক ভাষা ভুলতে বসেছে, যা দুঃখজনক। তাই ভাষার প্রতি ভালোবাসা থেকে আমি আমার আঞ্চলিক ভাষাকে লালন করি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এর গুরুত্ব তুলে ধরতে চাই।
আমানউল্লাহ আল ফারাবী
পুরকৌশল বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
আঞ্চলিকতায় কোনো খারাপ লাগা কিছুই নেই-
পৃথিবীর স্বচ্ছ ভাষাগুলোর মধ্যে একটি হলো বাংলা,এটা আপনার তখনই মনে হবে যখন আপনি শুদ্ধ উচ্চারণে জড়তাহীন নিজের ভাষায় কথা বলবেন।তখন মনে হবে এতো সুন্দর ভাষাও হয়?তবে আঞ্চলিকতায় কোনো খারাপ লাগার কিছুই নেই,বরং গর্ব করার বিষয়।আমি আমার অঞ্চলকে তখনই রিপ্রেজেন্ট করতে পারবো যখন আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলব।আমরা মানুষরা অনেক কৃত্রিম।কিন্তু আসল প্রাণ,আসল গভীরতা এবং প্রশান্তি তখনই পাওয়া যায় যখন আমি আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলি।এতে আমি একদমই লজ্জা পাই না,বরং কেনো যেনো অন্যরকম আনন্দ কাজ করে যেটা কেউ বুঝতে পারবে না।
তাসনিম
ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
আরএস