সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২, ১২:১৩ পিএম
গাজী মাজহারুল আনোয়ার দেশের সেরা গীতিকারের একজন। প্রায় ২০ হাজার গানের স্রষ্টা তিনি। বিবিসির এক জরিপে সেরা ২০ বাংলা গানের মধ্যে তিনটিই তার রচিত।
একাধারে তিনি একজন সফল গীতিকার, কাহিনিকার, চিত্রনাট্যকার ও চিত্রপরিচালক।
তিনি সংবাদমাধ্যমের দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘এ দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক গান লেখার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এ পর্যন্ত ২০ হাজারেরও বেশি গান লিখেছি। কিন্তু সব গান আমার সংরক্ষণে নেই। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনী বাঙালিদের সব সৃষ্টিকর্ম ধ্বংস করে দিয়েছিল। ফলে আমার রচিত প্রচুর গান হারিয়ে গেছে। ’
২০ হাজার গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন। পাশাপাশি ওই বছরই বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান লেখেন ১৯৬৭ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ সিনেমায়।
অবশ্য ১৯৬২-৬৩ সালে যখন তিনি মেডিক্যাল কলেজে পড়েন সে সময় লিখেছিলেন তার প্রথম গান। সেই গানের কথা ছিল এমন-‘বুঝেছি মনের বনে রং লেগেছে’, যার সুর করেছিলেন নাজমূল হুদা বাচ্চু ও শিল্পী ছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন।
১৯৬৪ সালে রেডিও পাকিস্তানে গান লিখে ৫০ টাকা আয়ের মাধ্যমে তার পেশাদার গীতিকার জীবন শুরু। আর ১৯৬৭ সালে যুক্ত হন চলচ্চিত্রের সঙ্গে। সুভাষ দত্তের ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ সিনেমায় ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’ গানটি দিয়ে চলচ্চিত্রের গান লেখা শুরু গাজী মাজহারুল আনোয়ারের।
তিনি একজন সফল কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালকও। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘দেশ চিত্রকথা’। গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রযোজিত ও পরিচালিত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম শাস্তি, স্বাধীন, শর্ত, সমর, শ্রদ্ধা, ক্ষুধা, স্নেহ, তপস্যা, উল্কা, আম্মা, পরাধীন, আর্তনাদ,পাষাণের প্রেম, এই যে দুনিয়া।
তার লেখা কিছু কালজয়ী গান হলো- ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে’ প্রভৃতি।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘অবুঝ মন’, ‘চাষীর মেয়ে’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘মহানগর’, ‘নতুন বউ’, ‘নাজমা’, ‘অভিযান’, ‘মা ও ছেলে’, ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘ছুটির ফাঁদে’, ‘বাবার আদেশ’, ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান লিখেছেন।
কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পাঁচ বার গীতিকার হিসেবে পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এছাড়াও ২০০২ সালে একুশে পদক, ১৯৭২ সালে প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক, এস এম সুলতান স্মৃতি পদক, একাধিকবার বাচসাস পদক সহ অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে তার অর্জনে।
এবি