Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

মূলধারার চলচ্চিত্রে পুরস্কারের জয়জয়কার; পরিচালকদের ভিন্ন কথা

আকাশ নিবির

আকাশ নিবির

জানুয়ারি ৭, ২০২৩, ০৭:১২ পিএম


মূলধারার চলচ্চিত্রে পুরস্কারের জয়জয়কার; পরিচালকদের ভিন্ন কথা

জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০২১ এর চলচ্চিত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন বানিজ্যিকধারার চলচ্চিত্রে অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। এই দুটি পুরস্কার ছাড়া মোট ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪টি পুরস্কার পাচ্ছে মূলধারার চলচ্চিত্রে। তাহলে কি ধ্বংস হতে বসেছে বাণিজ্যিকধারার চলচ্চিত্র?

গেল বছর এই দুই ধারায় চলচ্চিত্র ব্যবসায়িকভাবে মূলধারায় সফল হয় একটি পরিচালক রায়হান রাফির ‘পরাণ’ আর বানিজ্যিকধারার চলচ্চিত্র ব্যবসায়িকভাবে সফল হয় পরিচালক দেবাশিষ বিশ্বাসের ‘শ্বশুরবাড়ী জিন্দাবাদ-২’ চলচ্চিত্রটি।    

এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, উপমহাদেশের সর্বকনিষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক রিয়াজুল রিজু। তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে মূলধারা আর বানিজ্যিকধারা বলে কোন ভেদাভেদ নেই। নতুবা সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী মূলধারার চলচ্চিত্র। সেটি তখন ব্যবসা করেনি। সেটি পৃথিবী-বিখ্যাত একটি চলচ্চিত্র হয়ে আমাদের মাঝে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। 

তার নির্মিত ‘বাপজানের বায়োস্কোপ’ চলচ্চিত্রে আর কিছু ইনভেস্ট করলে কিন্তু সেই বানিজ্যিকধারা হয়ে যেত। তবে তিনি মনে করেন কিছু অসাধু লোকজন এই দুই ধারা তৈরী করেই বরং চলচ্চিত্র ধ্বংসের পায়তারা করছেন।’

তবে পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকীকে আমার সংবাদ থেকে মুঠোফোন কথা বলতে চাইলে তার কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এমনকি তিনি এই জটিল প্রসঙ্গে কোন কথা বলতে চাননি তিনি।

মূলধারা আর বানিজ্যিকধারা নিয়ে আমার সংবাদ এর মুঠোফোনে কথা বলেছেন পরিচালক রাশিদ পলাশ। তার নির্মিত মূলধারার চলচ্চিত্র ‘পদ্মপুরাণ’ নিয়েছেন চার ক্যাটাগরিতে পুরস্কার। এই পরিচালকের তার ভাষ্যে, ‘চলচ্চিত্র বলতে মূলধারা আর বানিজ্যিকধারার কিছু নেই। তাদের হয়তো গল্প বলার ধরনটা অন্যরকম ছিল। তাছাড়া থার্টি ফাইভে শুটিং করাকঠিন ছিল। সিনিয়র পরিচালকদের হয়তো সেখান থেকে ফিরতে সময় লাগবে। দশ বছর মাত্র থার্টি ফাইভ থেকে ডিজিটাল এ শুটিং করতে পারছি আমরা। সেখানে দর্শক মূলধারার গল্প লুফে নিচ্ছে। বাংলাদেশের স্বনামধন্য পরিচালকরা মূলধারার গল্পে ফিরতে শুরু করেছেন।’ 

এই পরিচালক আরও বলেন, ‘চলচ্চিত্রে মূলধন ফেরাতে হবে। যে ধারার চলচ্চিত্র হোক না কেন। সেটি স্পন্সরে হোক আর সিনেমা হল থেকেই হোকন। আমরা যখন একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করি। সেখানে সমাজের জন্য কিছু মেসেজ দিবার পাশাপাশি পুঁজিটা ফেরাতে পারাটাও বানিজ্যিক ব্যাপার থাকে। দর্শক চাহিদা থেকেই এক সময় সবাইকে এক তালে কাজ করতে হবে বলে মনে করেন এই পরিচালক।’    

এই দুই ধরণের চলচ্চিত্রের সংজ্ঞা বুঝতে কথা মুঠোফোনে কথা বলেছেন তরুণ নির্মাতা আবু রায়হান জুয়েল। তিনি বলেছেন, ‘আমার কাছে সকল ধারাই সমান। একটি মূলধারার চলচ্চিত্র যখন ব্যবসা করে তার লগ্নি ফেরত তুলে আনে। সেটি কিন্তু বানিজ্যিক চলচ্চিত্র রূপান্তিত হয়। তবে এখনকার চলচ্চিত্র আর অনেকে নির্মাণের ধরণটা হয়তোবা আলাদা।’

তবে অনেকের মতে মূলধারা আর বানিজ্যিকধারা কোনদিনও একধারার চলচ্চিত্র নয়। সেটি সত্তর আশির দশক আর বিংশ শতাব্দি থেকে শুরু করে  ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ আর ‘আম্মাজান’সহ একাধিক বানিজ্যিক চলচ্চিত্রের নির্মাণ, গল্প আর উপস্থাপনাই হচ্ছে বানিজ্যিকধারার চলচ্চিত্র। সেখানে ১২০০ সিনেমার হল আর দর্শকচাহিদায় বানিজ্যিকধারার চলচ্চিত্র এগিয়ে ছিল। বর্তমানে যুগ ডিজিটাল আর দর্শকচাহিদা ভিন্নতা এসেছে। 

তাছাড়া দেশের সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখার চাহিদা তৈরী হয়েছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হয়তোবা এফডিসির পরিচালকদের ফিরতে সময় লাগছে। সেইদিক থেকে মূলধারার চলচ্চিত্র থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছেন এফডিসির চলচ্চিত্র। এতো কিছুর পরও মূলধারায় গল্পে আর নির্মাণে তারা কেন ফিরতে চাচ্ছেন না। সেটি এখন অনেকের প্রশ্ন।

এবার ২০২১ চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ সম্মাননা বা স্বীকৃতি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতি বছর ২৮টি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেওয়া হবে। সেখানে নেই বাণিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে কোন পুরস্কার। যদিও বানিজ্যিক ধারার চলচ্চিত্রে শ্রেষ্ঠ নৃত্য পুরস্কার পাওয়ার আশা থাকলেও এই বছর ‍‍এই ক্যাটাগরিতে কোনো প্রার্থী যোগ্য বিবেচিত না হওয়ায় ২৭ ক্যাটাগরিতে ৩৪টি পুরস্কার দেওয়া হবে বলে সম্প্রতি জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি চূড়ান্ত তালিকার অনুমোদন দিয়েছে। যেখানে সবকটি মূলধারার চলচ্চিত্রে পুরস্কারে জয়জয়কার।

এবার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে যৌথভাবে পুরস্কার পাবেন মো. সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা) ও মীর সাব্বির মাহমুদ (রাতজাগা ফুল)। শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে যৌথভাবে আজমেরী হক বাঁধন (রেহানা মরিয়ম নূর) ও তাসনোভা তামান্না (নোনাজলের কাব্য) পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন।

এবার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র যৌথভাবে লাল মোরগের ঝুঁটি ও নোনাজলের কাব্য।

শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পার্শ্ব চরিত্রে এম ফজলুর রহমান বাবু (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী পার্শ্ব চরিত্রে শম্পা রেজা (পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ অভিনেতা খল চরিত্রে জয়রাজ (লাল মোরগের ঝুঁটি)।

শ্রেষ্ঠ অভিনেতা কৌতুক চরিত্রে মিলন ভট্টাচার্য্য (মৃধা বনাম মৃধা), শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী আফিয়া তাবাসসুম (রেহানা মরিয়ম নূর), শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়)।

শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ গায়ক কে এম আবদুল্লাহ-আল-মুর্তজা মুহিন (শোনাতে এসেছি আজ-পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গায়িকা চন্দনা মজুমদার (দেখলে ছবি পাগল হবি-পদ্মপুরাণ), শ্রেষ্ঠ গীতিকার প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন), শ্রেষ্ঠ সুরকার সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন)।

শ্রেষ্ঠ কাহিনিকার রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ)।

শ্রেষ্ঠ সম্পাদক সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক শিহাব নূরুন নবী (নোনাজলের কাব্য), শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক দলগত-সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি), শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর), শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য)। শ্রেষ্ঠ মেকআপম্যান দলগত-মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি)।

শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আকা রেজা গালিব (ধর), শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রকার কাওসার চৌধুরী (বধ্যভূমিতে একদিন)।

এর আগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জন্য গত ১৬ আগস্ট তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড গঠন করে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য ২০২১ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ২১টি পূর্ণদৈর্ঘ্য, ১৭টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ৭টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রসহ মোট ৪৫টি চলচ্চিত্র জমা পড়েছিল।

Link copied!