বিনোদন ডেস্ক
মার্চ ২১, ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম
বিনোদন ডেস্ক
মার্চ ২১, ২০২৫, ০৫:৪৪ পিএম
জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী নাজমুন মুনিরা ন্যান্সি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এ কারণে গত ১৬ বছর নানাভাবে বঞ্চিত ছিলেন তিনি। অনেক অনুষ্ঠানে তাকে গান গাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তিনি কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পাশাপাশি এ কণ্ঠশিল্পী তার এত দিনে বঞ্চনার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখছেন।
আজ (২১ মার্চ) বিকেল ৩টার দিকে ন্যান্সি একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এতে তিনি বিগত সকরারের আমলে তার ওপর অন্যায় আচরণের কথা তুলে ধরেছেন। এ গায়িকা তার স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘২০১১ সালে প্রজাপতি সিনেমার ‘দু দিকেই বসবাস’ গানটির জন্য আমি সেরা নারী কণ্ঠশিল্পী হিসেবে মনোনীত হই। এর পুরস্কার প্রদান করা হয় ২০১৩ সালের মার্চ মাসে। আমার বড় কন্যার অসুস্থতার কারণে আমি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারিনি, পরবর্তীতে তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমার পুরস্কারটি সংগ্রহ করি। ২০১৩ সালের শেষে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আমি ফেসবুকে ছোট্ট একটি লেখা লিখি যার সারমর্ম ছিল- শুধুমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানের জন্য যারা আওয়ামীলীগ সমর্থন করেন। তাদের সময় এখন ফিরে আসার। সেসময় বিগত জালিম সরকারের সমালোচনা অনেকেই করেছিল (তখনো কিছুটা স্বাধীনতা অবশিষ্ট ছিলো)। কিন্তু রাতারাতি বারুদের মতো আমার লেখনী সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পরে। ফলাফল- ফেসবুক পোস্টের একদিন পরেই মধ্যরাতে আমার নেত্রকোনার বাড়ি ঘেরাও হয়।’
ন্যান্সির মা বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সভাপতি ছিলেন উল্লেখ করে ন্যান্সি লেখেন, ‘আমার মা আমৃত্যু নেত্রকোনা জেলা জাসাসেরসহ সভাপতি ছিলেন (২০১২ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন)। অথচ পুলিশ ফোর্স জানালো তাদের কাছে গোপন সূত্রে খবর আছে আমার বাসা নাকি জামাত-শিবির জঙ্গির আস্তানা! তারা বাড়ি তল্লাশি করবে। আমি অসম্মতি জানালে এসএসসি পরীক্ষার্থী আমার ছোট ভাইকে তারা তুলে নিয়ে যেতে চাইলো। আমার সাথে অনেক বাগবিতণ্ডার পর তারা চলে গেলেন। বাধ্য হয়ে আমি প্রেস কনফারেন্স করলাম। আমি মিথ্যা মামলা থেকে বাঁচলাম কিন্তু হয়রানি বন্ধ হলো না। হয়রানির তালিকা লম্বা, অনেকেই নিশ্চই জানেন। যারা জানেন না তারা আমার কমেন্ট বক্সে গিয়ে বাংলাভিশন এর ইন্টারভিউ দেখে নিবেন।’
গানের শো বাতিল হওয়া নিয়ে এ গায়িকা লেখেন, ‘২০১৪ সাল থেকে একের পর এক স্টেজ শো বাতিল হতে থাকলো। সিনেমার গান- সে তো স্বপ্ন! আমার প্রায় ৩০ লাখ ফলোয়ার এর ফেসবুক পেজ গায়েব হয়ে গেলো যেন আমার কথা মানুষের কাছে না পৌঁছায়! আমার জানামতে ২০১৪ সালে শিল্পীদের মধ্যে ফেসবুকে অর্গানিকভাবে সবচাইতে বেশি ফ্যান-ফলোয়ার ছিলো আমার। এমনকি নতুন করে যে ফেসবুক আইডি খুলতাম সেটাই কিছুদিন পর লাপাত্তা হয়ে যেত!’
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ন্যান্সির জীবন কিভাবে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে তার বর্ণনা দেন। এ প্রসঙ্গে এ গায়িকা লেখেন, ‘২০১৪ সালে অবৈধভাবে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি সমর্থক আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে গেলো। ততদিনে চেনা মুখগুলো অচেনা হতে শুরু করলো। আওয়ামী সমর্থকদের তখন জোর দাবি- শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূ কথা বলা এই আমাকে কেন জাতীয় পুরস্কার দেয়া হোলো? অথচ আমি একটি রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করেছিলাম মাত্র! ওদের ভাব এমন যেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্তি আমার অর্জন নয় কিংবা বাংলাদেশ সরকার এই সম্মাননা দেয়নি, স্বয়ং শেখ হাসিনা বুঝি ভিক্ষা দিয়েছেন!’
মানসিক চাপে অস্থির হয়ে ঠিকমতো ঘুমাতে পারতেন না ন্যান্সি। তিনি তার স্ট্যাটাসে জানান, ‘২০১৪ সালে আর্থিক, মানসিক, সামাজিক, কর্মক্ষেত্রে হেয় প্রতিপন্ন ২৬ বছর বয়সী আমি ভয়ংকর রূপে সাইবার বুলিংয়ের শিকার। বিধ্বস্ত অবস্থায় ঘর- সংসার সব ফেলে নেত্রকোনা চলে গেলাম। ঘুম নেই, খাওয়া নেই, প্রতিদিন পুলিশ ভ্যান বিকেল থেকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে আর আমি বাসার ছাদে পায়চারি করি। আর নিতে না পেরে ঘুমের ওষুধ খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। শেখ হাসিনার মব বাহিনীর সে কি কুৎসিত উল্লাস!’
নতুন করে লড়াইয়ের শুরু করেন ন্যান্সি। সেই প্রসঙ্গে তিনি লেখেন, ‘মন শক্ত করলাম। নিজেকে বোঝালাম, আমি একজন যোদ্ধা। কাজ খোঁজা শুরু করলাম। বেশিরভাগ জায়গায় অলিখিত ব্ল্যাক লিস্টেড। শো এর সংখ্যা তলানিতে। সে সময় বেশ কিছু গান নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করলো স্নেহাশিস ঘোষ। শুরু হোলো সিডি চয়েসের ব্যানারে আমার একের পর এক গান মুক্তি পাওয়া।’
কঠিন সময়ের যারা ন্যান্সির পাশে এসে দাঁড়ান, তাদের কথা তুলে ধরে ন্যান্সি লেখেন, ‘ন্যান্সি উইথ স্টারস শিরোনামে দারুণ একটা প্রজেক্ট হলো। আমার দুঃসময়ে সর্বাধিক কাজ করেছি সিডি চয়েসের ব্যানারে। অন্যদিকে এগিয়ে এলো সাউন্ডটেক। আহমেদ রিজভীর সার্বিক পরিচালনায় সাউন্ডটেকের ব্যানারে এলো একক অ্যালবাম “ভালোবাসো বলেই”। আমার জীবনের সেরা কাজের একটি নিঃসন্দেহে। এছাড়া গাংচিল মিউজিক, বাংলা ঢোল, রঙ্গন মিউজিক, সিএমভি এর সাথেও অল্প বিস্তর কাজ হয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়ে গান গাইলাম প্রো টিউন আর অনুপমেরর ব্যানারে। আবার নামকরা একটি ব্যানার (নাম বলতেও রুচিতে বাঁধে) গান গাইয়ে নামমাত্র সম্মানীও দিয়েছে। আমার অনেক গুণমুগ্ধ নবীনরাও আমাকে ভালো সম্মানী দিয়ে আমার সাথে গান গেয়েছেন এবং এখনো গাইছেন। হাবিব ওয়াহিদের সাথে গান আগের মতো না হলেও অল্প কিছু হচ্ছিলো তবে তার কোনোটাই সিনেমার জন্য নয়।’
টেলিভিশনের গান গাওয়া প্রসঙ্গে ন্যান্সি বলেন, ‘টিভি চ্যানেলগুলোতে কদাচিৎ ডাক পেতাম। সেটাও সম্ভব হত যেসব প্রোগ্রাম প্রডিউসার আমার গান ভালোবাসতেন তাদের বদৌলতে। তবে একটি টিভি চ্যানেল পুরোটুকু সময় আমার উপস্থিতি পর্দায় চলমান রেখেছে- চ্যানেলটির নাম বাংলাভিশন। এমনকি আমার আপন দুই ভাই বাংলাভিশনে কর্মরত।’
সব শেষে ন্যান্সি লেখেন, ‘প্লে ব্যাক সিঙ্গার হিসেবে আমি বিগত ১১ বছরে ১১টি গান সিনেমার জন্য গেয়েছি বলে মনে পরে না। ফিল্মে আমার সব জনপ্রিয় গান ২০১৪ সাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। সে কারণেই আমার আর কখনোই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া হয়নি। আমি জোর কণ্ঠে বলতে পারি, হাসিনা বাহিনীর রোষানলে পরা ব্ল্যাক লিস্টেড আমি টিকে ছিলাম এবং টিকে আছি আমার মনোবল ও ভক্ত শ্রোতাদের ভালোবাসায়।’
আরএস