প্রিন্ট সংস্করণ॥হাসান আরিফ
ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৯, ১২:৪৫ পিএম
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের শাণিত রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। ১২০ কিলোমিটারের সমুদু সৈকত ঘিরে প্রচীন ঐতিহ্য এবং দর্শনীয় স্থানের কারণে প্রতি বছর কক্সবাজারে ছুটে আসেন বিপুল সংখ্যক পর্যটক। আর শুধু সমুদ্র সৈকত নয় পাশাপাশি রয়েছে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। দিগন্তজোড়া বিস্তীর্ণ বালুকাবেলা, মেঘ কালো সারি সারি ঝাউবন, সৈকতের বুকে আছয়ে পড়া ছোট বড় একেকটি ঢেউ, নৌকা ও ট্রলার নিয়ে জেলেদের কর্মচাঞ্চল্য, ভোরের আকাশে পূব পাহাড়ের পেছন থেকে কাঁসার থালার মতো বেরিয়ে আসা সূর্য, আবার সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের মায়াবী রূপ এই সমস্ত সৌন্দর্যের আয়োজন নিয়েই দেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে রচিত হয়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। দেশের ভিতরে কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে দেখা যায় প্রথমে অবশ্যই কক্সবাজারের নাম এসে যায়। কেবল মাত্র দেশীয় পর্যটকই নয়, বিদেশ থেকেও প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এই সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসে। দেখা যায় যথাযথ তথ্যের স্বল্পতা এবং সুন্দর একটি ভ্রমণ পরিকল্পনার অভাবে আমাদের অনেকেরই কক্সবাজার ভ্রমণ শতভাগ সার্থক হয়ে ওঠে না। কক্সবাজার শহর থেকে বদরমোকাম নামক জায়গা পর্যন্ত একটানা একশ বিশ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের মূল স্থান কক্সবাজার যেতে হলে চট্টগ্রাম শহর থেকে দক্ষিণে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫২ কিমি এবং ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ৪১৪ কিমি। রাজধানী ঢাকা থেকে সড়ক এবং বিমানপথে যাওয়া যায়।আমি কক্সবাজার বহুবার গিয়েছি। এরমধ্যে বাসে ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার সব থেকে বেশি যাওয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্রগ্রাম, এর পর বাসে কক্সবাজার। তাই দুই ভ্রমণেরই বনণা থাকবে এখানে। এছাড়া একেক বার একেক অভিঙ্গতার বনণাও থাকবে। ফলে দিনতারিখ উল্লেখের থেকে বনণাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলেই আমার কাছে মনে হচ্ছে। আমি কক্সবাজার একা একা গিয়েছি। দলীয়ভাবে গিয়েছি। এছাড়া মিলন ভাই, ভাবি, অরবি আর আমি একবার গিয়েছি।আমি একবার মনোস্থীর করলাম, একটু কক্সকাজার থেকে ঘুরে আসি। যেই কথা সেই কাজ। অফিস থেকে ছুটিও নিয়ে নিলাম। তাই যাচ্ছি সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। আমার অফিস তখন তেজগাও। তাই অফিস করে বাসের টিকিট কাটা কিছুটা ঝামেলাই মনে হয়েছে আমার কাছে। তাই আমার সিনিয়র বন্ধু মিলন ভাইকে বললাম আমার জন্য একটা টিকিট কিনে রাখতে। আমি যাওয়ার সময় তার কাছ থেকে নিয়ে নিব। তাকে বলার কারণ তার কর্মক্ষেত্র কমলাপুর। থাকেন মালিবাগ। ফলে আমার জন্য টিকিট কাটা তার জন্য সমস্যা না। মিলন ভাই টিকিট কেনার দায়িত্বটা নেওয়ার কিছুটা স্বস্তি পেলাম। পরের দিন মিলন ভাইকে কল করে জানতে চাইলাম টিকিট টাকা হয়েছে কিনা। তিনি বললেন, কেনা হয়নি। এইটা কোন কথা হলো। পরের দিন একই কথা জানালেন তিনি। মনটাই খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু তাকে কিছু বলতেও পাছিনা খুব কাছের বলে। এরপর দিন তিনিই আমাকে কল দিয়ে জানালেন, টিকিট কেটেছে তবে একটা না চারটা। মানে কি জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমার সাথে তারাও যাচ্ছেন। আমিত মহা খুশি। ভাবিকে আমার কখনো দেখা হয়নি। আর সেই ভাবিসহ একসাথে ভ্রমণ। যাই হউক, নির্ধারিত দিনে আমরা নির্ধারিত স্থান থেকে বাস যাত্রা শুরু করি। আমি আর মিলন ভাই বসেছি পাশাপাশি। আমাদের সামনে ভাবি আর অরবি। আমরা বাসে উঠেছি রাতে সে হিসেবে আমাদের কক্সবাজার পৌছানোর কথা সকালে। বাসের বিভিন্ন স্থানে যাত্রবিরতির পর আমরা পৌছি দুপুরে। আমাদের বাইরের হোটেলে খেতে হয়নি কারণ আমরা বাসে উঠার আগেই খাওয়ার কাজটা সেরেনিয়েছি। তবে পথেই সকালের নাস্তা করতে হয়েছিল। ট্রেনে আমার সাথে ছিল আমাদের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি গিয়াস উদ্দিন। তিনি সবই করতে পারেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কতটা পারেন তা পর্যালোচনার বিষয়। রাতে আমরা কমলাপুর থেকে চট্রগ্রামের ট্রেনে উঠেছি। সারারাত যাত্রার পর সকালে চট্রগ্রামে পৌছি। এখান থেকে সকালের নাস্তা সেরে, কক্সবাজারের বাসের সন্ধ্যান। গিয়াস ভাই যেহেত কক্সবাজারের লোক তাই পথঘাট তার চেনা। দুজনে বাসে উঠে আবার যাত্রা শুরু। আমরা পৌছি দুপুরের পরে।কক্সবাজার পৌঁছার পর প্রতিবারই এই দৃশ্য। তা হউক সকাল কি দুপুর। রিকসায় উঠতেই তারাই প্রস্তাব দিবে হোটেল ঠিক করে দেওয়ার বিষয়ে। এখানকার হোটেলগুলো রিকশাচালক ও সিএনজি চালক ঠিক করে রাখে। যারা কমিশনের বিনিময়ে এজেন্টের মত কাজ করে। ওরা ওদের পরিচিত হোটেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেই হোটেলের গুণকীর্তন করতে করতে মাথা ধরিয়ে দেবে। একবার ছাড়া সব বারই আমার হোটেল আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। যেবার হোটেল ঠিক করা ছিল না, সেইবার আমি এই চালকদের মাধ্যমেই হোটেল ঠিক করেছিলাম।কক্সবাজার গেলে পর্যটকরা সাধারণত কলাতলী, লাবনী ও ডলফিন সৈকতেই গোসল করে। এরমধ্যে লাবনীতেই ভীর বেশি হয়। এরপর কলাতলীর অবস্থান। আমি তিন বিচেই গোসল করেছি। কক্সবাজার সৈকতে বিশাল ঢেউ দেখলেই বুকে কাপন ধরে যায়। আর গোসলের সময় যদি ভারসাম্য হারিয়ে ঢেউয়ের মধ্য পরে গেলে জীবন মরণ অবস্থা হয়ে যায়। কলাতলী এবং লাবনী পয়েন্টে রয়েছে ঝিনুক মার্কেট এ ছাড়া ছোট-বড় অনেক দোকান যেখানে নানারকম জিনিসের পসরা সাজিয়ে দোকানিরা পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করে। আর কলাতলী সৈকতে আছে বেশকিছু রেস্টুরেন্ট। তবে প্রতিটা জায়গাতেই রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সব থেকে বেশি আছে মূল সড়কের ধারেই।আমি কক্সবাজার গেলে সব সময় গভীর রাত পর্যন্ত সৈকতেই থাকি। এইটা আমার একটা নেশা। রাতে সৈকতে থাকার কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অভিঙ্গতা হয়েছে আমার। একবার গভীর রাতে আমি, সুজয় মহাজনসহ কয়েক জন সৈকতে বসে আছি। আমরা ছাড়া আর কেউ তখন ছিল বলে মনে হচ্ছে না। এমন সুনশান পরিবেশে হঠাৎ একজন মেয়ের আবিরভাব ঘটল। কোথা থেকে, কিভাবে আসলো তা আমাদের কারো নজরেই আসেনি। মেয়েটি এসেই আমাদের সাথে কথা বলা শুরু করল। সবার মধ্যে আমি যেহেতু বড় তাই আমিই বেশি কথা বলেছি। এইটা আমার সরলতাও হতে পারে। তবে ওদের কম কথা বলার কারণ আমার জানা ছিলনা। আজো তা জানা হয়নি। যাই হউক ঘটনায় আসি। মেয়েটি এসে আমাদের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে, সুজয় মহাজনসহ অন্যরা খেলতে খেলতে একটু দুরে সরে গেছিল। তাই আমিই কথা বলছিলাম। একজন মানুষ আরেকজন মানুষের সাথে পরিচয় হলে যে ধরণের কথা হয়, ঠিক সেই ধরণের কথাই হয়েছিল। মেয়েটি জানিয়েছে, সে জেলে পাড়ায় থাকে। এখন সে ঘুরতে এসেছে। প্রায় দিনই এভাবে ঘুরে বেড়ায়। কথা বলার এক পর্যায়ে সে এই রাতে সাগরে গোসল করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এই রাতে গোসল করার প্রশ্নই আসে না। সে যদি পরিচিৎ হতো তাহলেও না। কিন্তু তার উদ্দেশ্য আমি তখনো বুঝতে পারিনি। সুজয়রা সামান্য দুরে বালিতে খেলা করছিল, আমি য়েয়ারে বসে আছি আর মেয়েটি দাড়িয়ে কথা বলছিল। এসময় একজন পুলিশের হাবিলদাড় আর দুইজন আনসার আমাদের সামনে হাজির। তারা এসেই জানতে চাইলো, এতোরাতে সৈকতে মেয়ে নিয়ে কি করছি। পুলিশ যখন আমাকে বিপদে ফেলতে চাইলে তখনও সুজয়রা দুরে দাড়িয়ে দেখছিল। মোদ্দা কথা পুলিশ বলতে চাইলে এই রাতে মেয়ে নিয়ে অনৈতিক কিছু করছি। কথা বলার এক পর্যায়ে পুশিল বললো মেয়েসহ ধরা হইছে তাই এখন ক্যাম্পে যেতে হবে। সেখানে তাদের অফিসার আছে, তিনি এর সমাধান করবে। এসময়ঢ আমি বললাম, কেনো যাব, এই মেয়েকেত চিনিই না। আর তারাই বা কেনো এই ব্যবহার করছে। তাদের একটাই কথা কোন কথাতেই কাজ হবে না। মেয়েসহ পেয়েছে, তাই ক্যাম্পেই যেতে হবে। অবস্থা বেগতিক দেখে বলতে বাধ্য হলাম আমরা সবাই এক সাথেই আসছি। কেমেটা কে, কোথায় থেকে আসছে তার কিছুই আমরা জানি না। মেয়েটা আমাদের সাথে কথা বলছে তাই আমরাও বলেছি। এসময় পুলিশ আমাদের পরিচয় জানতে চাইলে, আমরা জানাই, আমরা সবাই পত্রিকার পিপোর্টার। পত্রিকার কথা বলাতে পুলিশ আমাদের পরিচয়পত্র দেখাতে বলে। আমি আমার পরিচয়পত্র দেখানোর সাথে সাথে হাবিলদারসহ তারা তিনজনই আমাকে স্যালুট করে। এসময় মেয়েটি তাদের ক্যাম্পের দিকেই চলে যায়। তারা আমাদের নিশ্চয়তা দেয়, আমরা সারা রাত থাকলেও কোন সমস্যা নেই। তারাইা আমাদের পাহাড়া দিবে। তার মানে এইটা পুলিশেরই পাতানো ফাদ ছিল। পুলিশের এই ঘটনা আর স্যালুট আমি কখনোই ভুলব না। এই ঘটনার পরও কিন্তু রাতে বিচে থাকার অভ্যাস পরিবর্তন করিনি। এখনো আমি গভীর রাত পর্যন্ত বিচে থাকি। এইটা আমার ভাল লাগে।রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ওষুধ দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে সাগরের টানে চলে আসি কক্সবাজার। সব সময় হোটেল ঠিক করে আসলেও এবার আর হোটেল ঠিক করে আসা হয়নি। কারণ আসাটাই ছিল অনিশ্চয়তার। যাই হউক রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে সরাসরি কক্সবাজার এসে রিকসা নিয়েছিলাম। আমি একাই ছিলাম। রিকসায় উঠার পর চালক তার কর্ম শুরে করে। তিনি জানান, তার জানা ভাল হোটেল আছে। চাইলে সে হোটেলে নিয়ে যেতে পারবে। প্রথমে তাকে না করার পর, তার পিড়াপিড়িতে রাজি হতেই হল। সে বননায় নাহয় নাই যাই। আমার সভাব হচ্ছে যতটা বেশি সম্ভব সাগরের কাছে থাকা। আর গোসলও করি কয়েক ঘন্টা। পরের দিন সকাল সকাল গোসল করতে সাগরে নামি। আমি যেহেতু একা তাই যে কথা বলে তার সাথেই কথা বলি। কারণ একা গোসল করার থেকে দল বেধে গোসলের মজাই আলাদা। একজন টিউব নিয়ে গোসল করছিলেন, তিনি আমাকে তার সাথে আমন্ত্রণ জানালে আমি তাতে রাজি হয়ে, তার সাথেই গোসলে মেতে উঠি। এসময় শ্যাম বন্যের লম্বা সুঠাম দেহের একজন রমনীয়ও সাগরে গোসলের জন্য আসেন। তিনি কিছুটা সময় গোসল করার পর ভেজা বালুর উপর বসেছিলেন। হাজারো মানুষের গোসলের ভীরে কে কি করলো আর করল না, তা কারো কি দেখার সময় আছে। তারপরও কিছু কিছু ঘটনা চোখে পড়ে যায়। যে রমনী ভিজা বালুতে বসে ছিলেন, তার পাসে কেউ একজন বসে গল্প করছিল। দুর থেকে দেখলে যে কেউ ভাববে তারা দুজন এক সাথেই এসেছেন। কিন্তু আমার চোখ ওই দিকটাতে যেতেই মনে হলো, কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে। এই সমস্যাটা বুঝতে পারার মূল কারণ ছিল রমনী বার বার জায়গা পাল্টাচ্ছিলেন। আর লোকটাও তার কাছে গিয়েই বলছিল। আর আমি যেহেতু রিপোর্টার। তাই দেখার একটু ভিন্নতা থাকতেই পারে। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন, যারা দীর্ঘ সময় সাগরে গোসল করে তারা কিছুক্ষণ পর পর বালুতে বসে বিশ্রাম নেয়। আমার বিশ্রামের সময় হওয়ায়, তাদের কাছাকাছিই বসলাম। বিষয়টা কি তা জানান আগ্রহ থেকেই। তাদের কাছা কাছি বসার পর যা লক্ষ্য করলাম, লোকটা রমনীর সাথে কথা বলছে, কিন্তু রমনীর অস্বস্তি বোধ করছেন। রমনী যেহেতু বার বার জায়গা বদলাচ্ছিলেন, আবারো জায়গা বদলিয়ে চলে এলেন আমি যে জায়গায় বসেছি সেই জায়গাতে। কিছুক্ষণ পর লোকটাও আসে। এতোক্ষণে আমি এতটুকু বুঝতে পেরেছি, তারা দুজন দুজনকে চিনেন না। তাই বিষয়টির সুরাহা হওয়া দরকার বলে মনে করছিলাম। এই চিন্তা থেকেই রমনীকে বললাম, কিছু মনে করবেন না, আপনি যদি কোন সমস্যা অনুভব করেন তাহলে পেছনেই গার্ড আছে তাদের জানাতে পারেন। তারা আপনাকে সাহায্য করতে পারবে।আমার কথায় তিনি কিছুটা সাহস পেলেন। বললেন, না না তেমন কিছু না। সমস্যা হলে জানাবো। আমার সাথে কথা বলাতে লোকটা পাশ থেকে সরে সাগরে নেয়ে গোসল করা শুরু করলেন। তার সাথে একটা টিউব ছিল। রমনী কিছুটা স্বস্তি বোধ করলেন। এরপর তার আর আমার মধ্যে কোন কথা হয়নি। আমি কিছুটা সময় বসে আবারো পানিতে নামলাম। তার আগেই রমনীও নেমেছেন। আমি সাগরে নামলে সাধারণত একটা নেশা কাজ করে তা হলো, যতটা দুরে যাওয়া সম্ভব ততটাই যাই। মোট কথা সাগরের দিকে সবার আগে থাকাটাই প্রবনতা। এবারও তাই করলাম। আমি হয়তো একটু বেশি ভিতরেই চলে গেছিলাম। তাই গার্ড বাশি দিয়ে আমাকে ডাকছে। গার্ডের ঢাকার কারণে গোসলরত কেউ কেউও বলছেন, আপনাকে কাছে চলে আসতে বলছে। তারাতারি চলে আসুন। তাই কাল বিলম্ব না করে দ্রুত চলে আসি। কাছাকাছি আসতেই গার্ড বললো, এতো ভিতরে যাওয়া ঠিক না। আমিও অনেকটা ক্লান্ত। তাই তীরের কাছে আসতেই, সেই রমনীর হাতের ইশারা দেখলাম। সে ভিজা বালুতে বসে আমাকে ইশারা করছেন। পাশেই সেই লোকটা। একবার কথা বলেছি, তিনি এখন ঢাকছে আর পাশে সসেই লোকটা। তাই কৌতহল নিয়েই কাছে গেলাম। আমি যেতেই সেই লোকটা আবারো চলে গেলেন। এবার রমনী আমাকে জানালেন, কিছু মনে করবেন না। আমি গোসল করা শুরু করতেই লোকটা আমার পাশে পাশে ছিল। এক সময় আমি উপরে উঠে বসার পর সে আমার পাশে বসে। দু’একটা কথাও বললে আমি উত্তর দেই। এরপর তিনি কথা বলতেই থাকে। আমার পরিচয়, কোথায় উঠেছি, কি করি, কার সাথে এসেছি। এসব জানতে চায়। যতটুকু বলার মতো ততটুকর জবাবও দেই। এক পর্যায়ে সে তার সাথে টিউব নিয়ে গোসল করার জন্য প্রস্তাব দেয়। আমি না করলে বলে কোন সমস্যা নেই। আমি সাতার জানি না জানালে সে বলে, সমস্যা কি আমার সাথে টিউব আছে। তাছাড়া আমিত আছিই, এই কথাও লোকটা বলে বলে রমনী জানান। সব কথা শুনে আমি তাকে বললাম, তাহলে আপনি কথা না বললেই পারতেন। আর কথা বলার সুযোগ দিলেনই বা কেনো। যাই হউক। লোকটা যেহেতু আপনাকে বিরক্ত করছে তাহলে আপনি ওই দিকটাতে চলে যান, তাহলে হয়তো আর বিরক্ত করবে না। তাকে অন্য দিকে পাঠিয়ে লোকটার কাছা কাছি আমি আসলাম। যে যার মতো গোসল করতে তরতে দেখি লোকটা এ দিকটায় আর নাই। মনে মনে যা ভাবছি তাই। লোকটা আবার সেই রমনীর কাছে চলে গেছে। এবার আমিই তাদের কাছে গেলাম। মনে মনে সন্দেহ ছিল, রমনীয়ও হয়তো লোকটাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। যাই হউক শেষ দেখা দরকার। এবার আমি সামনে যেতেই লোকটা চলে গেলো। রমনী জানালেন, এবারও লোকটা তাকে বিরক্ত করছিল। আমি আসাতে সে চলে যায়। যাই হউক পরে রমনী ছবি তুলেছেন, গোসল করেছেন। লোকটা তাকে আর বিরক্ত করেনি।আমি গোসল করলে ঢুব দিতে পারি না। কারণ আমার কানে পালি ঢোকে। তাই চেষ্টা করি সব সময় কান বাচাতে। ডুব দিলেও কানে হাত দিয়ে দেই। মিলন ভাইর স্বাস্থ্য ভালই। কিন্তু তার মধ্যে পানি ভিতি আছে। তাই হাটু পানির বেশি তাকে নামাতেই পারিনি। ভাবি আর অরবি সেও একই অবস্থা। অরবী ছোট মানুষ হিসেবে তাদের থেকে বেশি সাহসী। আমরা গোসল করে হোটেলে যাওয়ার পর ভাবি মিলন ভাইকে বললেন, খাবার বেশি করে আনবা। আজকে অনেক শ্রম গেছে। অল্প খাবারে হবে না।আমি আর অঞ্জন সন্ধ্যার পর সৈকতে বসে ছিলাম। সাগরের বিশুদ্ধ বাসাতে আমাদের প্রাণ জুড়িয়ে যাচ্ছিল। আমরা এমন একটা জায়গাতে বসে ছিলাম, যেখানে লোকজন ছিল না বললেই চলে। চোখ যত দুর যাচ্ছিল সাগরের বিশালতা ছাড়া অন্য কিছুই চোখে পড়ছিল না। হঠাৎ চোখে পড়ে সাগরেও অনেক গভীরে একটা জেলে নৌকা। নৌকাটা হয়তো চোখেই পড়তো না, যদি না নৌকার বাতিটি মিটি মিটি না জ¦লত। ঢেউয়ের তালে তালে জোনাকি পোকার আলেঅর মতো বাতি জ¦লছে আর নিভছে। এই বিশাল সাগরের বিশুদ্ধ বাতাশে এই নৌকাটাই আমার কাছে বিরক্তির কারণ হয়ে গেল। আমি তো বলেই ফেললাম, এই নৌকাটা কেন আমাদের এই বিশুদ্ধ বাতাশকে বিশাক্ত করছে। আমার কথায় অঞ্জল সায় দিয়ে বলে, সত্তিই তো তাই। এরপর দুজনেই হেসে দিয়েছিলাম।কক্সবাজারের আদি নাম পালংকী। ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামের এক কর্মকর্তা ১৭৯৯ সালে এখানে এসে একটি বাজার স্থাপন করেন। আর তার নাম অনুসারে কক্স সাহেবের বাজার এবং পরে কক্সবাজার হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কক্সবাজারের উত্তরে চট্টগ্রাম, পূর্বে-বান্দরবান পার্বত্য জেলা ও মিয়ানমার, পশ্চিম ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। ২৪৯১ দশমিক ৮৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জেলায় রয়েছে ৫টি নদী। এগুলো হলো- মাতামুহুরী, বাঁকখালী, রেজু, কোহালিয়া ও নাফনদী। দ্বীপ রয়েছে ৫টি। এগুলো হল- মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিন।
কক্সবাজার গেলে একটিবার দর্শন দেবার জন্য যেসব দর্শনীয? স্থান আপনাকে হাতছানি দিবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-
প্রাচীন ঐতিহ্য : কক্সবাজার ভ্রমণে আসা পর্যটকরা কক্সবাজারের প্রচীন ঐতিহ্য ঘুরে দেখেন। এর মধ্যে আলোচিত হচ্ছে আজগবি মসজিদ। এটি ১৬০০-১৭০০ খৃস্টাব্দে শাহ সুজার আমলে তৈরি হয়। এটি চৌধুরী পাড়া মসজিদ হিসেবেও পরিচিত। কক্সবাজার পৌরসভার বিজিবি ক্যাম্পের উত্তর দিকে এর অবস্থান। রিকশা কিংবা টমটমে যাওয়া যায় সেখানে।
প্যাগোড়া (জাদী) : ১৭৯০ সালের দিকে বার্মিজরা আরাকান বিজয়ের পর কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় রাখাইন সম্প্রদায় এটি নির্মাণ করেন। তারা এটিকে স্মৃতিচিহ্ন বলেন। কক্সবাজার সদর, রামু ও টেকনাফের পাহাড় বা উচুঁ টিলায় এ ধরনের অনেক প্যাগোড়া রয়েছে।
অগগা মেধা বৌদ্ধ ক্যাং : কক্সবাজার সদরে ছোট বড় মিলিয়ে ৭টিরও বেশি বৌদ্ধ ক্যাং রয়েছে। আগগা মেধা ক্যাং ও মাহাসিংদোগীক্যাং সবচেয়ে বড়। এসবে স্থাপিত বৌদ্ধ মূর্তিগুলো দেখবার মতো। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব বৌদ্ধ পূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা ও বিষু উৎসব ক্যাং এ উদযাপন হয়।
রামকোট তীর্থধাম : এটি রামকোট বনাশ্রমের পাশ্বের পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। ৯০১ বাংলা সনে স্থাপিত। কথিত আছে রাম-সীতা বনবাসকালে এই রামকোটে অবস্থান করেছিলেন। তীর্থধামে মন্দিরের পাশাপাশি আলাদা একটি বৌদ্ধ বিহারে ধ্যানমগ্ন ছোট একটি বৌদ্ধমূর্তিও রয়েছে। জনশ্রুতি আছে, দু’টি ধর্ম পাশাপাশি শান্তিতে সহাবস্থানের প্রমাণ স্বরূপ সম্রাট অশোকের সময়ে এই মূর্তি স্থাপিত হয়।
ছেংখাইব ক্যাং : রামুর শ্রীকুলস্থ বাঁকখালী নদীর তীরে ছেংখাইব ক্যাং (বৌদ্ধ বিহার) অবস্থিত। এ বৌদ্ধ বিহারে নানা রকম নকশা খচিত আসন ও কাঁচের পাত্রে সংরক্ষিত ১০টিরও বেশি পিতল এবং আরো অনেক শ্বেতপাথরের মূর্তি শোভা পাচ্ছে। সব মিলে রামু থানায় ২৩টি বৌদ্ধ বিহারে শতাধিক মূল্যবান বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে।
কানা রাজার সুড়ঙ্গ : উখিয়া থানার জালিয়া পালং ইউনিয়নে পাটুয়ার টেক সৈকতের কাছে নিদানিয়া পাহাড়ের মধ্যে এ সুড়ঙ্গ বা গর্ত। সুড়ংগেরব্যাস ১২ ও ১২ একটা বড় ট্রাক অনায়াসে সুড়ঙ্গ পথে প্রবেশকরতে পারবে। কথিত আছে, জনৈক মগ সম্প্রদায়ের কানা রাজার (এক চোখ অন্ধ) শাসন আমলে আত্মরক্ষার জন্যে এই সুড়ঙ্গ নির্মাণ করেছিল।
মাথিনের কূপ : উপন্যাসিক ধীরাজ ভট্টাচার্য উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে এস আই হিসেবে টেকনাফ থানায় বদলী হয়ে এসেছিলেন। তখন টেকনাফের নাম করা রাখাইন জমিদার ওয়াংথিনের একমাত্র আদুরে কন্য মাথিন থানার সামনের কুয়া থেকে নিয়মিত পানি নিতে আসতেন। সকাল বিকাল পানি নিতে আসা ছিল মাথিনের সখ। পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিদিন থানার বারান্দায় বসে বসে অপূর্ব সুন্দরী মাথিনের পানি নিতে আসা যাওয়া দেখতেন। আস্তে আস্তে ধীরাজ ভট্টাচার্যের সঙ্গে মাথিনের চোখা চোখি এবং পরে তা প্রেমে পরিণত হয়। বিয়ে করতে ব্যর্থ হলে, মাথিন বিচ্ছেদের জ্বালায় তিলে তিলে দগ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করে। মাথিনের অতৃপ্ত প্রেমের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী মাথিনের কুপ। টেকনাফথানা প্রাঙ্গণে এ কূপের অবস্থান। বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল কুদ্দুস রানা ১৯৯৪ সালে বাঁশের তৈরি কূপটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে জেলা পরিষদ থেকে এদিকে সংস্কার করা হয়। এখন কূপটি দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। সেখানে প্রেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও লেখা রয়েছে।
মা অষ্টভূজা : মহেশখালী আদিনাথ শিব মন্দিরের পার্শ্বে অষ্টভূজা নামে অপর একটি বিগ্রের মূর্তি রয়েছে। কক্সবাজার কস্তুরা ঘাট থেকে নৌযানে ৪৫-৫৫ মিনিট আর স্পিডবোটে ১৫-১৮ মিনিট সময় লাগে। মহেশখালীর গোরকঘাটা জেটি হতে রিকশা করে আদিনাথ মন্দির যাওয়া যায়।
ডুলাহাজরা সাফারী পার্ক : এটি বাংলাদেশের প্রথম সাফারী পার্ক। পাহাড়ি এলাকায় গড়ে তোলা পার্কের আয়তন ২,২২৪ একর। কক্সবাজার শহর থেকে ৩৫ কিমি উত্তরে এই সাফারী পার্কের অবস্থান। সরকারি তথ্য মতে, এখানে বিলুপ্তপ্রায় ও বিরল প্রজাতি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও বংশবৃদ্ধি ঘটানো হচ্ছে। বিনোদনের জন্য ডুলাহাজারা সাফারী পার্ক পর্যটকদের আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতীর কয়েক হাজার পশু-পাখী। এছাড়াও হিমছড়ি ঝর্না, ইনানী বিচ, সোনাদিয়া, সেন্টমার্টিন, ছেঁড়াদ্বীপ, মহেশখালী তো রয়েছেই।
যাতায়াত : আমরা যারা ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পরিকল্পনা করব তাদের জন্য বাসের পাশাপাশি রয়েছে বিমানের সুবিধা। তা ছাড?া ট্রেনে করে চট্টগ্রাম গিয়ে সেখান থেকে বাসে করে কক্সবাজার যাওয়া যায?। ঢাকা থেকে কক্সবাজার বাসে যেতে সময় লাগে প্রায় দশ থেকে বার ঘণ্টা, বিমানে ৫০ মিনিট। এসি/ননএসি দুই ধরনের বাস আছে।
থাকার ব্যবস্থা: বর্তমানে কক্সবাজারে থাকার জন্য ফাইভস্টার ক্যাটাগরির অনেক হোটেল হয়েছে। ফোরস্টার ও থ্রিস্টার বা সমমানের হোটেল ও রিসোর্টের সংখ্যাও কম নয়। সৈকতের কাছে বেশিরভাগ হোটেলই ভাল মানের। হোটেল ও রিসোর্ট কলাতলী ও লাবনী পয়েন্টে অবস্থিত। ইনানির নিকটবর্তী এলাকাতেও থাকার জন্য বেশকিছু হোটেল আছে। তাছাড়া চাইলে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়াও পাওয়া যায়। এ ছাড?া এর বাইরে আছে ইকো রিসোর্ট। মৌসুম ভেদে অর্থাৎ পিক ও অফ-পিক অনুযায়ি ভাড?ার মধ্যে তারতম্য হয়। বছরের সেপ্টেম্বর থেকে এপ্রিল পিক এবং মে থেকে আগস্ট অফ-পিক টাইম হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে। তবে এখন সব সময়ই লোকে লোকারণ্য থাকে।
খাওয়া-দাওয়া : প্রতিটি হোটেলেই নিজস্ব রেস্টুরেন্ট থাকে, যেখানে বরাবরই খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি। অধিকাংশ হোটেলে সকালের নাস্তা রুমের ভাড়ার সাথে যুক্ত অর্থাৎ কমপ্লিমেন্টারি হিসেবে থাকে। সেক্ষেত্রে লাঞ্চ ও ডিনার বাইরে কোথাও করতে চাইলে কোনো চিন্তা নেই কারণ এখানে রয়েছে পর্যাপ্ত সংখ্যক রেস্টুরেন্টে। কলাতলী রোডে অবস্থিত রেস্টরেন্টের সংখ্যা বেশি।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : প্রথমত কক্সবাজার যাওয়ার আগে আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে যাওয়া। দ্বিতীয়ত, প্রতি বছর সমুদ্রের পানিতে গোসল করতে গিয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটে মূলত সতর্কতা ও সচেতনতার অভাবে। লাবনী পয়েন্ট থেকে কলাতলী সৈকত পর্যন্ত বেশকিছু গুপ্ত খাল রয়েছে। অসাবধানতার কারণে বেশীর ভাগ পর্যটক ভাটার সময় নেমে এই খালে পরে প্রাণ হারায়। সুতরাং, ভাটার সময় সৈকতে গোসল করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা চৌকির সংকেত অনুসরণ করে সৈকতে গোসলে নামলে বিপদ থেকে দূরে থাকা যায়। চৌকি থেকে ভাটা ও জোয়ারের সময় অনুযায়ি লাল ও সবুজ পতাকা উত্তোলন করা হয়। সবুজ পতাকার সময় গোসল করা নিরাপদ। প্রয়োাজনে সাথে লাইফ জ্যাকেট রাখা যেতে পারে। প্রবাল সাধারণত ধারাল হয়ে থাকে। সৈকতের পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে এবং জীববৈচিত্র্যকে নিরাপদ রাখার খাতিরে কোনো প্রকার আবর্জনা এবং অপচনশীল দ্রব্য যেমন, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদি ফেলা থেকে বিরত থাকা প্রত্যেকের দায়িত্ব।