আমার সংবাদ ডেস্ক
জানুয়ারি ৩০, ২০২২, ০৫:২৫ এএম
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের আঘাতে বিপর্যস্ত সারাবিশ্ব। বাংলাদেশে ডেলটা ও ওমিক্রন দুই ধরনেরই সংক্রমণের বিস্তার দেখা দিচ্ছে। ঘরে ঘরে জ্বর, কাশি, গলাব্যথার রোগী। কেউ পরীক্ষা করছেন, কেউ পরীক্ষা না করেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
জ্বর, কাশি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে ওমিক্রনের মূল উপসর্গ। এর বাইরে উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো-শারীরিক দুর্বলতা, ঘ্রাণশক্তি উবে যাওয়া, সর্দি, অরুচি, শরীরব্যথা, মাথাব্যথা, পাতলা পায়খানা, বমি ইত্যাদি।
জ্বরের সঙ্গে অন্য যেকোনও উপসর্গ থাকলেই এসময় সর্বপ্রথম কোভিডের কথা ভাবতে হবে। পরীক্ষা করে প্রমাণ হওয়ার আগ-পর্যন্ত ধরে নিতে হবে, এটি কোভিড। তাই জ্বর সহ যেকোনো রোগের লক্ষণ দেখা দিলে অতিদ্রুত করোনার পরীক্ষা করে নিতে হবে।
কোনো জ্বরকেই গুরুত্ব না দেয়ার কারণ নেই। বিভিন্ন জ্বরের ভিন্ন চিকিৎসা। তাই সঠিক চিকিৎসা দেয়ার আগে জ্বরের ধরন চিহ্নিত হওয়া জরুরি। জ্বরের অনেক ধরন থাকে। জ্বরকে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ভাইরাল জ্বর এবং প্যারাসাইটিক জ্বরে ভাগ করা হয়।
যেমন- দীর্ঘদিনের অল্প অল্প জ্বর, বিকালের দিকে আসে, রাতে থাকে, সকালে কমে যায়, ঘাম দিয়ে জ্বর ভালো হয়ে যায়, সঙ্গে দুই সপ্তাহের বেশি কাশি থাকে, কখনও কখনও কাশির সঙ্গে রক্ত যায়, শরীরের ওজন কমে যায়, খাবারে অরুচি থাকে, যক্ষ্মা রোগীর সঙ্গে বসবাসের ইতিহাস থাকে, তাহলে সন্দেহ করা হয় তার যক্ষ্মা হয়েছে।
দীর্ঘদিনের জ্বরের ইতিহাসের সঙ্গে রাতে শরীর ঘামানোর ইতিহাস, ক্ষুধামন্দা, শরীরে চুলকানি, জন্ডিসের ইতিহাস, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গ্লান্ড ফুলে যাওয়ার ইতিহাস থাকলে লিস্ফোমা সন্দেহ করা হয়। অল্প অল্প জ্বরের সঙ্গে ডান দিকের ওপরের পেট ব্যথা, মাঝে মধ্যে পাতলা পায়খানার ইতিহাস, পরীক্ষা করে যদি জন্ডিস, লিভার বড় পাওয়া যায় তাহলে সন্দেহ করা হয় লিভারে ফোড়া হয়েছে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, ঘাম দিয়ে জ্বর কমা, দুর্গন্ধযুক্ত হলুদ রঙের কাশি থাকলে সন্দেহ করা হয় ফুসফুসে ফোড়া হয়েছে।
দীর্ঘদিনের জ্বরের সঙ্গে যদি খাবারে রুচি স্বাভাবিক থাকাসত্ত্বেও ওজন কমে যায়, যে স্থানে জ্বর হয়েছে সেখানে বসবাসের ইতিহাস, মাটির ঘরে মেঝেতে থাকার ইতিহাস, পাশে গরুর ঘর থাকার ইতিহাস থাকলে এবং পরীক্ষা করে রক্তশূন্যতা, পেটের উপরিভাগে চাকা থাকলে সন্দেহ করা হয় কালাজ্বর।
দীর্ঘদিনের জ্বরের ইতিহাসের সঙ্গে গিঁটে গিঁটে ব্যথা এবং সকালে ঘুম থেকে জাগার সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা বেড়ে যায় এবং মুখে ঘা, গায়ে লাল লাল দাগের ইতিহাস থাকলে কানেকটিভ টিস্যু রোগ। যেমন- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই হয়েছে সন্দেহ করা হয়। তাই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক ইতিহাস দিয়ে এবং সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করে বেশিরভাগ জ্বর ভালো করা সম্ভব।
জ্বর হলে কী করবেন:
১.তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হলে প্যারাসিটামলজাতীয় ওষুধ সেবন করুন। মাথাব্যথা, গাব্যথা হলেও এই বড়ি গ্রহণ করা যেতে পারে। সর্দি–কাশির জন্য সেবন করা যেতে পারে অ্যান্টিহিস্টামিনজাতীয় ওষুধ।
২.ভিটামিন সি, জিংক-এগুলো ভাইরাস নির্মূলের কোনো ওষুধ নয়। তবে খেলে কোনো ক্ষতিও নেই।
৩. ভাইরাসবিরোধী বিভিন্ন ওষুধ নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণা হয়েছে। কিন্তু এই ওষুধ সবার জন্য নয়। এ ধরনের ওষুধ নিজে নিজে সেবন না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪.যাঁরা ষাটোর্ধ্ব এবং যাঁরা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ, কিডনিসংক্রান্ত রোগসহ অন্যান্য দীর্ঘদিনের অসুখে ভুগছেন, তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। ওষুধ সেবনের পরও উপসর্গ বেড়ে গেলে কিংবা শ্বাসকষ্টসহ নতুন উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
৫.গলাব্যথা বা খুসখুসে কাশিতে ঠান্ডা পানি, পানীয়, আইসক্রিম পরিহার করা দরকার। গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে গড়গড়া করা, আদা-লেবু-মধু মিশিয়ে চা পান করা বা বাষ্প নিশ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে আরাম পাবেন।
৬. পর্যাপ্ত পানি পান করবেন। টাটকা ফলমূল এবং পর্যাপ্ত ক্যালরি ও আমিষ গ্রহণ করা উচিত।
আমারসংবাদ/এআই