মে ৮, ২০২৩, ১১:৩৫ এএম
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশে জনসংখ্যার প্রায় সাত শতাংশ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। অর্থাৎ প্রায় এক কোটি ১০ লাখ মানুষ এই রোগ বয়ে বেড়াচ্ছেন।
আজ সোমবার (৮ মে) বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে— ‘সচেতন হোন, শেয়ার করুন এবং যত্ন নিন’।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি ১৪ জনে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক রয়েছেন, আর ৭০ হাজারের বেশি শিশু থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ৬ হাজার শিশু বিভিন্ন ধরনের থ্যালাসেমিয়া রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে। থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এসব রোগী ছোট বয়স থেকেই রক্তস্বল্পতায় ভোগে। এদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে— তারা যেহেতু তাদের শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত তৈরি করতে পারে না, তাই অন্যের রক্ত ট্রান্সফিউশন নিয়ে তাদের জীবন চালাতে হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার সাত শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা প্রতি মাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। চিকিৎসা না করা হলে এ রোগীরা রক্তশূন্যতায় মারা যায়।
বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া রোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও ব্যয়বহুল এবং ক্ষেত্রবিশেষ তা জটিল আকার ধারণ করতে পারে। তাই এ রোগ প্রতিরোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার বিকল্প নেই। থ্যালাসেমিয়া বিস্তার রোধে বাহকদের মধ্যে এবং আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে নিরুৎসাহিত করতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রে সন্তান ধারণের পর প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত দুরারোগ্য ব্যাধি। এ রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। বাংলাদেশে এই রোগের জিন বাহকের সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। বাহকের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের সার্বিক সুস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বাহকে-বাহকে বিয়ে হলে দম্পতির সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিধায় বিয়ের আগে এই রোগের জিন বাহক কিনা, তা জেনে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, থ্যালাসেমিয়া রোগীরা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। একটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী অন্যটি থ্যালাসেমিয়ার বাহক। যারা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী, তাদেরকে প্রতি মাসেই এক-দুইবার রক্ত দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হয় এবং তারা সারা জীবন এ রোগ বহন করে বেড়ান। এদের অনেকেই ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জটিলতায় মৃত্যুবরণ করেন। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন করে এদেরকে চিকিৎসা করা হলে এদের সুস্থ করার সম্ভাবনা আছে।
তবে দেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন জটিল ও ব্যয়বহুল এবং এটা অপ্রতুল। অপরদিকে যারা থ্যালাসেমিয়ার বাহক, তারা এই রোগ বহন করেন এবং আরেকজন বাহককে বিবাহ করলে তাদের সন্তানদের এই রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি।
তবে একজন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি একজন নরমাল ব্যক্তিকে (ক্যারিয়ার নয়) বিয়ে করেন, তবে তাদের সন্তানদের থ্যালাসেমিয়া রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা নেই। কাজেই সমাজের সর্বস্তরে এই রোগের ব্যাপকতা এবং একজন বাহক যাতে অন্য একজন বাহককে বিয়ে না করেন, বরং একজন নরমাল ব্যক্তিকে বিয়ে করেন, তা নিশ্চিত করা জরুরি।
এইচআর