Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসা

‘ডা. সংযুক্তার প্র্যাকটিস ১৩ বছর ধরে অবৈধ’

মো. মাসুম বিল্লাহ

জুন ২১, ২০২৩, ১১:০২ এএম


‘ডা. সংযুক্তার প্র্যাকটিস ১৩ বছর ধরে অবৈধ’

রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনার পুরো দায় চিকিৎসকের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে সেন্ট্রাল হাসপাতাল। অপরদিকে চিকিৎসক সংযুক্তা সাহা দোষ চাপিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ওপর।

এর মধ্যে ডা. সংযুক্তার বিরুদ্ধে এলো নতুন খবর। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার লিয়াকত আলী জানিয়েছেন, গাইনি বিশেষজ্ঞ সংযুক্তা সাহা অবৈধভাবে প্র্যাকটিস করছেন।

তিনি বলেন, সংযুক্তা সাহার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ২০১০ সালে। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর লাইসেন্স নবায়নের বিধান থাকলেও তিনি তা করেননি। তাই আইন অনুযায়ী তিনি এতো বছর ধরে অবৈধভাবে প্র্যাকটিস চালিয়ে আসছেন।

লিয়াকত আলী জানান, চিকিৎসক সংযুক্ত সাহার বিষয়টি নিয়ে আগামী শুক্রবার আলোচনায় বসবে বিএমডিসি। এরপর তার বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।

উল্লেখ্য, সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের পর মা মাহমুদা রহমান আঁখি রোববার (১৮ জুন) দুপুর ২টার দিকে ল্যাবএইড হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকাবস্থায় মারা যান।

জানা গেছে, সেন্ট্রাল হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসক ডা. সংযুক্তা সাহার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নরমাল ডেলিভারির তথ্য পেয়ে গত ৯ জুন কুমিল্লা থেকে সেন্ট্রাল হাসপাতালে আসেন আঁখি। তবে সেদিন ডা. সংযুক্তা সাহার বদলে ওই নারীর ডেলিভারি করতে যান ডা. মিলি।

এ সময় ডা. মিলি ওই প্রসূতির পেট কাটতে গিয়ে মূত্রনালি ও মলদ্বার কেটে ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হয়ে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। অজ্ঞান অবস্থায় সিজার করে বাচ্চা বের করা হয়। এতে বাচ্চার হার্টবিট কমে গেলে তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নবজাতককে মৃত ঘোষণা করে।

পরবর্তীতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তির পর সেখানে আঁখিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। তবে তার কোনো ইমপ্রুভমেন্ট ছিল না। চিকিৎসকরাও জানিয়েছিলেন, আঁখির ইমপ্রুভমেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। তার শরীরের কিডনি, লিভার, হার্ট এবং অন্য কোনো অংশ কাজ করছিল না।

এরমধ্যে ব্রেন স্ট্রোকও করেন আঁখি, সেই সঙ্গে রক্তক্ষরণও বন্ধ হচ্ছিল না তার। ফলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ার কারণে শরীরের অন্য অংশগুলো কাজ করতে ব্যর্থ হয়ে পড়েছিল। এতে হাসপাতালে ভর্তির পুরো সময় তাকে রক্ত দিতে হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিশ্বাস চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত রক্ত দিতে হবে বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।

গত বুধবার (১৪ জুন) এজাহারনামীয় দুই আসামি ডা. মুনা সাহা ও ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানাকে গ্রেপ্তার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।

সেন্ট্রাল হাসপাতালের এ ঘটনায় চিকিৎসক ও নার্সসহ ১১ জনকে বরখাস্ত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে গত শুক্রবার সেন্ট্রাল হাসপাতালে অভিযান চালায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। অভিযানে হাসপাতালটির চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় বেশ কিছু ঘাটতি দেখতে পান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

জরুরি চিকিৎসায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় আইসিইউসহ প্রতিষ্ঠানটিতে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধের নির্দেশ দেয় অধিদপ্তর। পাশাপাশি ডা. সংযুক্তা সাহাকে ওই প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ সেবা দেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

এইচআর

Link copied!