Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪,

প্রথমবারের মতো জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি তথ্য প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুলাই ১৬, ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম


প্রথমবারের মতো জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি তথ্য প্রকাশ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের ক্যান্সার পরিস্থিতি জানাতে প্রথমবারের মতো জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রির তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সেমিনারে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ের প্রধান গবেষক ডা. মো. খালেকুজ্জামান পিএইচডি জানান, এই গবেষণার উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ক্যান্সার পরিস্থিতি নির্ণয় করা। কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পুমদি, শাহেদল, আড়াইবাড়িয়া এবং গোবিন্দপুর ইউনিয়নে এ গবেষণাটি  পরিচালনা করা হয়েছে।

১ জুলাই ২০২৩ থেকে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত সময়কালে পরিচালিত এই গবেষণায় ইন্টারনেট ভিত্তিক বিশেষভাবে তৈরি করা ক্যান্সার রেজিস্ট্রি সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়ি পরিদর্শন করে সাক্ষাৎকার নেওয়ার মাধ্যমে গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। মোট ২৭৭৮৭টি বাড়িতে থাকা সর্বমোট ১ লক্ষ ১৬ হাজার ৪ শত ৭৫ জনকে রেজিস্ট্রির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রেজিস্ট্রিকৃতদের মধ্যে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৩৩ জন। হার হিসেবে তা প্রতি লাখে ১১৪ জন। সে অনুসারে বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা হিসাবে দেশে ক্যান্সারের রোগী সংখ্যা ২ লক্ষাধিক।  

সেমিনারে আলোচকরা ক্যান্সার প্রতিরোধের তথ্যসমূহ তুলে ধরা, ক্যান্সার নির্ণয় কেন্দ্রগুলো একটি নেটওয়ার্কের আওতায় আনা, ক্যান্সার রোগ সংক্রান্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, রোগীদের রেজিস্ট্রি সঠিকভাবে রাখা, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা জানান, জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি বহু গবেষণার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।

সেমিনারে জানানো হয়, বর্তমান বিশ্বে মৃত্যুর একটি কারণ হচ্ছে ক্যান্সার। গ্লোবোক্যান  এর রিপোর্টে ২০২২ সালে বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজার ২৫৬ ও মৃত্যুর সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৫৯৮ জন উল্লেখ করা হলেও জনংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রির অভাবে বাংলাদেশে ক্যান্সারের সঠিক পরিস্থিতি জানার ব্যাপারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।  

গবেষণার ফলাফল হিসেবে উল্লেখ করা হয়– ২৭৭৮৭টি বাড়িতে থাকা সর্বমোট ১১৬৪৭৫ জনকে রেজিস্ট্রির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ ৪৮.৪% ও নারী ৫১.৬%। রেজিস্ট্রিকৃতদের মধ্যে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ১৩৩ জন। হার হিসেবে তা প্রতি লাখে ১১৪ জন (পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১২০ জন ও নারীর ক্ষেত্রে প্রতি লাখে ১০৮ জন)। ৫১  থেকে ৬০ বছর বয়সী নারী (১৬.৫%) এবং পুরুষের (১৮.০%) মধ্যেও সবচেয়ে বেশি হারে ক্যান্সার রোগী পাওয়া গেছে। পুরুষদের মধ্যে স্বরণালীর ক্যান্সারের হার সবচেয়ে বেশি (১৩.২%) আধিক্যের দিক থেকে শীর্ষ অন্যান্য ক্যান্সার হচ্ছে পাকস্থলী (১০.২%), ঠোঁট ও মুখগহ্বর (৮.৮%) ফুসফুস (৭.৪%) এবং খাদ্যনালির (৭.৪%) ক্যান্সার। নারীদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার সর্বোচ্চ (৩৫.৪%)। শীর্ষ অনগুলোর মধ্যে রয়েছে জরায়ুমুখ (১২.৩%), ঠোক ও মুখগহ্বর (১০.৮%), থাইরয়েড (৭.৪%) এবং ওভারির (৪.৬%) ক্যান্সার।

ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ২৮.৬% উচ্চরক্তচাপ, ১১.৩% ডায়াবেটিস, ৮.৩% হার্টের রোগ, এবং ৩% হারে কিডনি জটিলতা এবং স্ট্রোক বিদ্যমান। ক্যান্সার আক্রান্ত ৭৩.৫% পুরুষের মধ্যে নিয়মিত ধূমপান, ৪১.২% পুরুষ এবং ৬১.৫% নারী ধোঁয়াবিহীন তামাক সেবন, এবং ৬৪.৭% পুরুষ ও ৭৫.৪% নারীর মধ্যে নিয়মিত পান-সুপারি খাওয়ার ইতিহাস রয়েছে।

ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে ১৩% শুধু কেমোথেরাপি, ১১.৩% শুধু সার্জারি, ২.৩% শুধু রেডিওথেরাপি, ৯.৭% শুধু প্যালিয়েটিভ সেবা, এবং ৫৯.৫% উল্লিখিত সবগুলোর একের অধিক সেবা গ্রহণ করেছেন। রেজিস্ট্রিকৃত ক্যান্সার রোগীর ৪.৫% কোনো প্রকার চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন নি।

সেমিনারে উল্লেখ করা হয়, ক্যান্সারের পরিস্থিতি, ক্যান্সারের পাশাপাশি থাকা অন্য রোগসমূহ, ক্যান্সার চিকিৎসা পদ্ধতি এবং ক্যান্সারের বিদ্যমান ঝুঁকির কারণগুলির উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে ক্যান্সার মোকাবেলার জন্য নীতিমালা তৈরি করা যেতে পারে। প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, বিশেষ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসমূহের ক্যান্সার রোগীদের সম্ভাব্য সর্বোত্তম সহায়তা প্রদানের জন্য যথাযথ রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা এবং প্যালিয়েটিভ সেবা দিয়ে সজ্জিত করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যসেবার সকল ধাপে ক্যান্সার সেবা জোরদার করলে তা ক্যান্সার রোগীদের সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার পাশাপাশি আর্থিকভাবে উপকৃত করবে।

সুপারিশ হিসেবে বলা হয়, এই জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রি সক্রিয় রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ক্যান্সার রোগীদের জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ক্যান্সারের ঝুঁকির কারণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এই রেজিস্ট্রি ব্রবহার করে ভবিষ্যতে ক্যান্সার গবেষণা পরিচালনা করতে গবেষকদের উৎসাহিত করতে হবে।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. মনিরুজ্জামান খান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন এবং সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক, পিএইচডি। উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (এনসিডিসি) অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. এমএ হাই। জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রেজিস্ট্রির সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গবেষক ডা. মো. খালেকুজ্জামান পিএইচডি। সেমিনারে দেশের বিভিন্ন ধরনের সম্মানিত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞগণ, চিকিৎসক, গবেষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিআরইউ

Link copied!