Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম

আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫, ১১:৪৮ পিএম


আহতদের চিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে

আহতদের চিকিৎসায় কোনো কার্পণ্য করা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। বলেছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা ছিল আহতদের চিকিৎসা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া। সেটা পালন করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে।

রোববার বিকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

নূরজাহান বেগম বলেন, আমরা যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ ছিল আহতদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রায়োরিটি দেওয়া। সেটা আমরা পালন করার চেষ্টা করেছি এবং করে যাচ্ছি। ইতোপূর্বে পাঁচটা দেশ থেকে চিকিৎসকরা এসেছেন আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। আমাদের চেষ্টা ছিল যে ছেলেগুলো হাত, পা, চোখ হারিয়েছে তাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবাটা দেওয়া। যে সময়ে আমরা দায়িত্বটা গ্রহণ করি তখন টাকশালে কোনো ডলার ছিল না। এর ওপর আমাদের উপর ছিল লোনের বোঝা। কিন্তু আমরা কখনোই আহতদের চিকিৎসার ব্যাপারে কার্পণ্য করিনি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ৩০ জন আহতকে ব্যাংকক এবং সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছি। আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবো না, শুধু এতটুকুই বলবো ৩০ জনের ভেতর মুসা নামের আহতের জন্য আমাদের ইতোমধ্যে ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। আর কবে নাগাদ তার রিকভারি হবে সেটা আমরা জানি না। তবে মার্চে তার আরেকটা অপারেশন হবে। হাসান নামের একজনের ব্রেইন ইনজুরি ছিল তার জন্য ইতোমধ্যে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৩৬ লাখের বেশি খরচ হয়েছে। সে এখনও কোমায় আছে। কবে নাগাদ সুস্থ হবে তাও বলা যাচ্ছে না। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। স্বাধীনতার এত বছর পরেও বাংলাদেশে এখনও একটা এয়ার অ্যাম্বুলেন্স নেই।  আমাদেরকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনতে হয়েছে ব্যাংকক থেকে, সিঙ্গাপুর থেকে। কখনো কখনো আমাদের ব্যাংকক থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আনতে হয়েছে। প্রতিবারে ষাট লাখ টাকারও বেশি অর্থ ব্যয় হয়েছে। কিন্তু আমরা কখনো অর্থের কথা চিন্তা করিনি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যেভাবে হোক আমাদের সন্তানগুলোকে সুস্থ করে তোলা।

এ সময় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডোনাল্ড ইউ বলেন, আমরা ২৭৮ জনের মতো আহত রোগী দেখেছি এবং বলতে হচ্ছে আমার চিকিৎসা জীবনের সবচেয়ে অন্যরকম অভিজ্ঞতা। এত বেশি চোখের ইনজুরি আমরা আমাদের চিকিৎসা জীবনেও কোনোদিন দেখিনি। এটি আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। কিছু কিছু রোগীর বয়স নয় থেকে ১০ বছর। অনেকের চোখে বন্দুকের প্যালেটের কারণে মারাত্মকভাবে আঘাত পেয়েছেন।

তিনি বলেন, আহত রোগীদের ক্রিটিক্যাল ফেইজে বাংলাদেশের চিকিৎসকরা যে চিকিৎসা দিয়েছে সেটাকে আমি মিরাকল বলবো। অনেক ক্ষেত্রেই যারা চোখে আঘাত পেয়েছেন তারা সাহায্যের বাইরে। কিন্তু কিছু রোগী আমরা শনাক্ত করেছি যাদের সিঙ্গাপুরে নিয়ে গেলে উন্নতি করা সম্ভব। আমরা সাত, আটজন রোগীকে শনাক্ত করেছি তাদের চিকিৎসা সিঙ্গাপুরে হলে তাদের চোখের অবস্থার আরও উন্নতি করা সম্ভব। কিছু কিছু আহত আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে যেটা আমার জন্য সত্যিই হৃদয়বিদারক। আমি বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করবো যাতে তাদের জন্য পর্যাপ্ত সাইকোলজিক্যাল চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে অনেকেরই এ বাস্তবতাটা মেনে নিতে হবে যে কেউ কেউ এক বা দুই চোখ সম্পূর্ণভাবে হারিয়েছেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমরা প্রায় দুই মাস পর আমরা প্রিন্ট এবং ইলেকট্রিক মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইদের সাথে কথা বলার জন্য মিলিত হয়েছি। আহত যোদ্ধাদের সুচিকিৎসা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করে আমরা কখনো মিডিয়ার সামনে নিয়মিত বা বিরতি দিয়ে আসিনি। আজকে আমরা দুই মাস পর মিডিয়ার সামনে এসেছি এ কারণে যে আপনাদের মাধ্যমে আমরা স্পষ্ট করতে চাই যে, আহতদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে আন্তরিকতার কোন ঘাটতি নেই।

ইএইচ

Link copied!