Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫,

সংস্কার কমিশনের কাছে যেসব প্রস্তাব করলেন চিকিৎসকরা

সুমন খান

সুমন খান

ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫, ১০:২৬ এএম


সংস্কার কমিশনের কাছে যেসব প্রস্তাব করলেন চিকিৎসকরা

উপসচিব পদে পদায়নের পরীক্ষা সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক করা, দেশের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানসমূহকে অ্যাকাডেমিক এবং সার্ভিস হাসপাতালে ভাগ করা এবং বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারকে তিনটি বিভাগে বিভক্ত করাসহ জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কাছে অর্ধশতাধিকের বেশি প্রস্তাব করেছে স্বাস্থ্য ক্যাডারেরে কর্মকর্তারা।

তবে, এসব প্রস্তাবের মধ্যে মোটাদাগে প্রায় ২৫টি প্রস্তাবের ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে৷

স্বাস্থ্য ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা ও সংস্কার কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে৷

এদিকে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের পরিবর্তে স্বতন্ত্র বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস কমিশন গঠনপূর্বক চিকিৎসকদের নিয়োগ, পদায়ন, উচ্চশিক্ষা, পদোন্নতি ও বদলি প্রস্তাবও করা হয়েছে৷

সূত্র জানিয়েছে, স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের করা প্রস্তাবের প্রায় বেশিরভাগই আমলে নিয়েছে সংস্কার কমিশন৷ একইসাথে গুরুত্ব বিবেচনায় তাদের এসব প্রস্তাব সুপারিশে অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছে৷

স্বাস্থ্য ক্যাডারের কর্মকর্তাদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে রয়েছে -

১. বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে প্রবেশের বয়স বৃদ্ধিকরণ। যেহেতু সকল ক্যাডারে প্রবেশের বয়স সম্প্রতি ২ বছর বৃদ্ধি করে ৩২ বছর করা হয়েছে, তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রবেশের বসয়সসীমা পূর্বের ন্যায় ২ বছর বৃদ্ধি করে ৩৪ বছর করা।

২. স্বাস্থ্য শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে যৌক্তিকভাবে বিভক্তিকরণ করা, যাতে স্বাস্থ্যশিক্ষার শিক্ষকদের বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি যথার্থতা নিশ্চিত করা যায়। দুই অধিদপ্তরের মধ্যে কার্যাবলী সঠিকভাবে বিন্যাস করে কাজের পরিবেশ নিশ্চিতকরণ৷

তারা প্রস্তাব করেছেন- উপসচিব পুল পদের পরীক্ষা সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক হতে হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষপদসমূহে বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়ন।

৩. বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য প্রশাসন (এবং জনস্বাস্থ্য) তিনটি ধারায় বিভক্ত করে পদবিন্যাস করলে বিদ্যমান অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে। মেডিকেল কলেজের সংখ্যা যৌক্তিকভাবে হ্রাস করা এবং শিক্ষার আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে শিক্ষার্থীদের আসনসংখ্যা পুনর্বিন্যাস করা।

দেশের চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানসমূহকে অ্যাকাডেমিক এবং সার্ভিস হাসপাতাল এই দুইভাগে ভাগ করে অ্যাকাডেমিক হাসপাতালের সার্বিক দায়িত্ব স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ এবং অধিদপ্তরের অধীনে ন্যস্ত করা।

বিশেষায়িত স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান স্থাপনে ঢাকার পাশাপাশি অন্য অঞ্চলকেও গুরুত্ব প্রদান করা।

নবনির্মিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরুর পূর্বেই জনবল নিয়োগ নিশ্চিতকরণ।

প্রস্তাবের মধ্যে আরও রয়েছে- 

স্বাস্থ্যখাতে বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে ও রোগীর সংখ্যা অনুযায়ী (শয্যা সংখ্যা অনুযায়ী নহে) উন্নতমানের পথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে৷ স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা চিকিৎসকদের সময়ের দাবি। কর্মপরিবেশ উন্নয়ন জোরদার করতে হবে৷ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে স্টাডার্ন্ড সেটআপ দ্রুত চালু করা৷ কর্মস্থলে চিকিৎসকদের নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ডিজিটাল হাজিরার পাশাপাশি সরেজমিনে তদারকি বাড়াতে হবে। বিধিবহির্ভূতভাবে অনুপস্থিত হলে বিধি মোতাবেক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৪. সাভারে নির্মিত ট্রেনিং সেন্টারটি দ্রুত চালুকরণ। মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত শিক্ষকদের জন্য ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন। স্বাস্থ্য ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের চাকুরিতে প্রথম যোগদানের ২ (দুই) বছরের মধ্যে ৪ মাসব্যাপী বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ এবং প্রতিটি পদোন্নতির পর প্রশাসনিক ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা৷ উন্নত মানের প্রফেশনাল ট্রেনিং এর জন্য দেশে এবং বিদেশে ব্যবস্থা করা৷ ৪টি ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করা৷ মেডিক্যাল ল্যাব রেগুলেটরি অথরিটি স্থাপনকরা জরুরি প্রয়োজন।

৫. বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারকে তিনটি বিভাগে বিভক্ত করতে হবে। প্রার্থীর পছন্দ, তার অ্যাকাডেমিক কার্যাবলী, পছন্দনীয় বিষয়ে সিট ও ট্রেনিং পোস্টের প্রাপ্যতা অনুযায়ী প্রেষণ নীতিমালা প্রণয়ন করা।

এছাড়া আরও বেশকিছু প্রস্তাব করেছেন তারা -

স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের দ্বৈত নিয়ন্ত্রণ, অবকাঠামোগত ও শিক্ষা উপকরণ এবং বিশেষজ্ঞ মানবসম্পদের অপ্রতুলতা দূরীকরণে ব্যবস্থা গ্রহণ। সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে সেবাপ্রদানকারীদের কারিগরি ও মোটিভেশনাল ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতি নিশ্চিত করতে হবে।

সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, স্বজনপ্রীতি মুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত পদোন্নতি হতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাখাতে জনবলের পদোন্নতি ডিজিটাল পদ্ধতির মাধ্যমে মেধা, হিদা যোগ্যতা ও চাহিদার ভিত্তিতে নির্ধারণ করা। অধিকতর কার্যকরী ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্সটিটিউট সমূহের স্বায়ত্তশাসনের বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।

শয্যা সংখ্যার উপর ভিত্তি করে বড় ইনস্টিটিউট (৮০০ বা এর উপর) সমূহের পরিচালক গ্রেড-১ প্রাপ্ত হবেন। শয্যা সংখ্যা ৮০০-এ নিচে ইনস্টিটিউট সমূহের পরিচালক গ্রেড-২ প্রাপ্ত হবেন।

এমবিবিএস পাশ এবং ইন্টার্নশিপের পরে উপজেলা হাসপাতালে ৬ মাস ও জেলা হাসপাতালে ৬ মাস পোস্ট-ইন্টার্নশিপ ঐচ্ছিক ট্রেইনিং এর সুযোগ সৃষ্টি করা। ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রামে ইমার্জেন্সি ও আউটডোর ব্যবস্থার গুরুত্ব প্রদান করা। 

একজন চিকিৎসকের বিপরীতে ৩ জন নার্স, ২ জন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ৫ জন করে ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদ তৈরি।

উপজেলায়, জেলায় ও বিভাগে আরও অনেক প্রশাসনিক পদ তৈরি করা; যেমন, জেলাতে ডিসিএস (ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক), ডিসিএস (ওষুধ প্রশাসন), ডিসিএস (প্রকিউরমেন্ট এন্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ডিসিএস (প্রশাসন এন্ড লিগ্যাল); উপজেলাতেও আরএমও ছাড়া ডিসিএসের সাথে সমন্বয় করে ডেডিকেটেড এমও পদ তৈরি করা ও জব ডেস্ক্রিপশন তৈরি।

পদোন্নতি বোর্ড/কমিটিতে (এসএসবি/ডিপিসি) সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একজন সিনিয়র অধ্যাপক কে অন্তর্ভুক্তি করা।

পদোন্নতি পদ্ধতি আইআরআইএস ডাটাবেজে থাকা উইথ টাস্ক এন্ড টাইমলাইন (কে কতদিন কোন পদে কোন দায়িত্ব পালন করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের নাম উক্ত পদগুলির বিপরীতে চলে যাবে এবং সে অনুযায়ী তিনি। তারা সেটা সিলেক্ট করবেন ইত্যাদি)। নিয়মিত ডিপিসি এবং ফিট লিস্ট পাবলিশ করা এবং কেন কোন কর্মকর্তা ডিপিসি বা ফিটলিস্টে আসতে পারে নি তার ব্যাখ্যাযুক্ত মন্তব্য কলাম যুক্ত করা। তদসংগে উচ্চপদে পদোন্নতির শর্তসমূহ সংস্কার করে ক্যাডার কর্মকর্তাবৃন্দের পদোন্নতি অন্য ক্যাডারের মত নির্দিষ্ট সময় অন্তর এবং প্রতিবছর নির্ধারিত সময়ে করা ও আন্তঃক্যাডার সমন্বয় করা। বেসিক সাবজেক্ট এর শিক্ষকদের চাকুরির বয়সসীমা ৬৫ এবং ক্লিনিক্যাল সাবজেক্টের চিকিৎসকদের চাকুরির বয়সসীমা ৬২ বছরে বৃদ্ধি করা।

বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ব্যয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। আর্থিক ব্যবস্থার শৃঙ্খলা বজায় বাখার জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ৷ অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমে জড়িত শিক্ষকদের বিশেষভাবে বেসিক সাবজেক্টের শিক্ষকদের নন প্র্যাকটিসিং ভাতা মূল বেতনের শতভাগ বৃদ্ধিকরণ।

ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের শিক্ষকদের জন্য বিশেষ সুবিধা হিসেবে শত ভাগ মূল বেতনসহ অতিরিক্ত প্রণোদনা/সার্ভিস চার্জ/ঝুঁকিভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।

শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি অতিরিক্ত সেবা প্রদান অথবা সরকারের ছুটির দিনে সময়ের অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব পালনের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ব্যবস্থা করা।

সরকারি হাসপাতালে সব রকম রোগ নির্ণয় পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক করা। মেডিকেল যন্ত্রপাতি সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যে প্রত্যেক ইনস্টিটিউটে বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেইনটেন্যান্স ডিপার্টমেন্ট থাকা উচিত।

চিকিৎসা শিক্ষা ও প্রশাসনের কর্মরতদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান/ Teachers‍‍` Training Institute স্থাপন করা। প্রতি জেলায় চিকিৎসকদের জন্য উপযুক্ত আবাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ। কার্যকর হেলথ ইনস্যুরেন্স ও রেফারেল সিস্টেম চালু করা এবং বৈকালিক চিকিৎসা সেবা ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিসের মাধ্যমে চালু করা।

ইএইচ

Link copied!