আগস্ট ১৭, ২০২২, ০৪:২০ পিএম
ভারতে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় গর্ভবতী মুসলিম নারী বিলকিস বানুকে দলবদ্ধ ধর্ষণ ও তার পরিবারের সাত সদস্যকে হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ১১ আসামি মুক্তি পেয়েছেন।
রাষ্ট্রীয় ক্ষমার অধীনে গুজরাট সরকারের কাছে সাজা মওকুফের আবেদন করে তারা মুক্তি পেয়েছেন। দেশটির কর্মকর্তারা বলেন, সোমবার গুজরাটের পশ্চিম রাজ্যের পঞ্চমহলের জেল থেকে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কাতারভিত্তিক আলজাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়।
গত সোমবার ভারত ব্রিটিশ শাসন অবসানের ৭৫ বছর উদযাপন করেছে। আর সেই দিনই ১১ জন আসামিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
২০০৮ সালের প্রথম দিকে তারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। দেশটির কর্মকর্তারা বলেন, তাদেরকে মুক্তির ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী, আইনজীবী ও বিরোধী রাজনীতিবিদরা নিন্দা জানিয়েছেন।
২০০২ সালের গুজরাটের সহিংসতা ভারতের সবচেয়ে খারাপ ধর্মীয় দাঙ্গাগুলোর মধ্যে একটি। সেই দাঙ্গায় অন্তত ১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিলো। তাদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম।
তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গুজরাটে এখনো শাসন করছে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি।
গত জুন মাসে কেন্দ্রীয় সরকার স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে কিছু নীতিনির্দেশিকা রাজ্য সরকারগুলিকে পাঠায়। সেখানে বলা হয়, রাজ্য সরকার চাইলে বন্দিদের মুক্তি দিতে পারবে। কিন্তু ধর্ষণের দায়ে শাস্তিপ্রাপ্তদের মুক্তি দেয়া যাবে না বলেও জানানো হয়।
সেইমতো বিলকিস বানোর মামলায় শাস্তিপ্রাপ্তদের মুক্তি দেয়া যায় না। কারণ, তারা গর্ভবতী নারীকে ধর্ষণ ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার দায়ে শাস্তিপ্রাপ্ত।
কিন্তু গুজরাট সরকার এক্ষেত্রে নিজেদের নীতি নিয়ে চলেছে এবং ১১ জন অভিযুক্তকে মুক্তি দিয়েছে। আদালত এক্ষেত্রে মাত্র একজন আবেদনকারীর আবেদন খতিয়ে দেখতে বলেছিল রাজ্য সরকারকে।
রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় নীতির বিরোধী বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে তাদের নীতির কথা স্পষ্টভাবে দেয়া আছে এবং সেখানে এটাও বলা আছে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে মুক্তি দেয়া যাবে না। কিন্তু গুজরাট সরকার যাদের মুক্তি দিয়েছে, সকলেই যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত।
গুজরাটের পঞ্চমহলের শীর্ষ আমলা সুজল জয়ন্তীভাই মায়াত্র রয়টার্সকে বলেন, জেলা কারাগার উপদেষ্টা কমিটি দণ্ড পাওয়া ১১ জনের কারাগারে কাটানো সময় ভাল আচরণ বিবেচনা করে মুক্তির সুপারিশ করেছিল।
তিনি আরো বলেন, সত্য হলো দণ্ড পাওয়া আসামিরা প্রায় ১৫ বছর জেলে কাটিয়েছে। তাই তারা ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য ছিল। ভারতীয় আইন অনুযায়ী ১৪ বছর জেলে থাকার পর দোষীদের ক্ষমা চাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।
নিহতের স্বামী ইয়াকুব রসুল রয়টার্সকে বলেন, দণ্ড পাওয়া ১১ আসামিকে মুক্তি দেওয়ায় তারা হতাশ। দাঙ্গার সময় তার পরিবারের অনেক সদস্য নিহত হয়েছিলো।
ইয়াকুব রসুল আরো বলেন, আসামিদের হঠাৎ করেই মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আদালত বা সরকারের কাছ থেকে তাদের মুক্তির বিষয়ে আমাদের কাছে আগে থেকে কোনো তথ্য ছিল না। আমরা মিডিয়া থেকে তাদের মুক্তির বিষয়ে জেনেছি।
প্রবীণ আইনজীবী আনন্দ ইয়াগনিক বলেন, দলবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার মতো জঘন্য অপরাধের দোষীদের সাজা মওকুফ করা নৈতিকভাবে অনুচিত।
সাহিত্যিক কবিতা কৃষ্ণন টুইট করে মেয়েদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ``মুসলিম বলে বিলকিস কি আপনার নারীশক্তির অংশ নয়?``
এআইএমআইএম নেতা আসাদুদ্দিন ওয়েইসি জানিয়েছেন, মোদী ও বিজেপি শাসকরা মুসলিমদের প্রতি অপরাধকে আমল দেন না।
আমারসংবাদ/টিএইচ