Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৪,

বাড়ছে এনজিওদের ক্ষোভ, অভিবাসী ইস্যুতে চাপে ইতালি

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ৯, ২০২২, ১২:২৭ পিএম


বাড়ছে এনজিওদের ক্ষোভ, অভিবাসী ইস্যুতে চাপে ইতালি

উদ্ধারকারী জাহাজ থেকে শুধুমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের নামতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পর রীতিমতো চাপে পড়েছে ইতালির নতুন সরকার। অভিবাসন সংস্থাগুলো এই সিদ্ধান্তকে বেআইনি আখ্যা দিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছে। জাহাজে অপেক্ষারত অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছে সংগঠনগুলো।

ইতালির বন্দরে আসা বেসরকারি উদ্ধার জাহাজ থেকে শুধুমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের নামার অনুমতি দিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে রোম কর্তৃপক্ষ। ইতালির কট্টর ডানপন্থি সরকার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীদের নিয়ে প্রথম সিদ্ধান্তের পর ইউরোপজুড়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

গত সপ্তাহে, উত্তর আফ্রিকা উপকূল থেকে প্রায় ৫০০ অভিবাসী নিয়ে দুটি উদ্ধার জাহাজ দক্ষিণ ইটালির সিসিলিতে নোঙর করে। কিন্তু দেশটির নতুন কট্টর-ডান সরকারের আদেশে প্রায় ২৫০ জন অভিবাসীকে ইটালিতে নামার অনুমতি দেওয়া হয়নি। যার মধ্যে জার্মান পতাকাবাহী উদ্ধার জাহাজ হিউম্যানিটি-১-এ ৩৫ জন পুরুষ অভিবাসী রয়েছে।

ইতালির নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার জোর দিয়ে বলেন, বেসরকারি উদ্ধার জাহাজ থেকে শুধুমাত্র সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা পুরুষ, নারী ও শিশুদের নামতে দিয়ে অভিবাসীদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়েছে।

  • জাহাজ থেকে তিন ব্যক্তির ঝাঁপ

এনজিওগুলোর মতে,জাহাজ থেকে কারা কারা নামতে পারে সেটি ঠিক করে দেয়ার পদক্ষেপ সম্পূর্ণ বেআইনি। বন্দরে থাকা দুটি জাহাজের পরিস্থিতির অত্যন্ত বিপজ্জনক।

ফরাসি দাতব্য সংস্থা এমএসএফ জানিয়েছে, “সোমবার তিনজন ব্যক্তি এই দুই জাহাজের একটি থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদেরকে ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ) পরিচালিত জিও ব্যারেন্টস দ্রুত সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে।

বার্তা সংস্থা এএফপির একজন সাংবাদিক জানান, বন্দরে অপেক্ষারত একটিঅভিবাসী জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে বেশ কিছু অভিবাসী “আমাদের সাহায্য করুন” বলে স্লোগান দিতে থাকেন।

ইটালি নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি রোমে একটি অনুষ্ঠানের পর গণমাধ্যমকে বলেন, “জাহাজে থাকা অনেক অভিবাসীকে ইটালির বন্দরে স্বাগত জানানো হয়েছে। এছাড়া জাহাজে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের কর্তৃপক্ষ পর্যবেক্ষণে রেখেছে।”

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সোমবার এএফপিকে নিশ্চিত করেছে, মাল্টা উপকূলে ঝুঁকিতে থাকা ৫০০ জনেরও বেশি লোককে ইটালিয কর্তৃপক্ষ উদ্ধার করে সিসিলিতে নামিয়েছে।

মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি দাবি করেন, সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি জাতীয় এবং ইউরোপীয় স্তরে কাজ করছেন। রোমের অভিযোগ, বছরের পর বছর অভিযোগের ধরে ইটালি ইইউ’র কাছে অভিযোগ করে আসলেও যথেষ্ট উদ্যোগ নেয়া হয়নি৷

ব্রাদার্স অফ ইটালি দলের প্রধান জর্জা মেলোনির নেতৃত্বাধীন ইটালির নতুন কট্টর ডানপন্থি অভিবাসন বিরোধী সরকার ভোটের আগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে আসা নৌকা থামানোর প্রতিশ্রুতি দেন।

নতুন সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীদের একজন আরেক অভিবাসী বিরোধী লীগ নেতা মাত্তেও সালভিনি, ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে অভিবাসী নৌকা উপকূলে আটকে দিয়ে সমালোচনার মুখোমুখি হন।

মাত্তেও সালভিনি সোমবার টুইট করে বলেছেন, “সংগঠিত ভ্রমণগুলো অত্যন্ত বিপজ্জনক। এগুলি অস্ত্র ও মাদকের অর্থায়ন করে। এই নেটওয়ার্কগুলো অবশ্যই ভেঙে ফেলতে হবে”

  • আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) এবং আন্তজার্তিক অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম সহ সকল অভিবাসন সংস্থা দ্রুত অভিবাসীদের উপকূলে অবতরণ করার সুযোগ দিতে আবেদন জানিয়েছে।

সোমবার একটি যৌথ বিবৃতিতে আইওম ও ইউএনএইচসিআর জানায়, অনেক অভিবাসীকে নামার সুযোগ দেওয়ার জন্য ইটালির পদক্ষেপকে তারা স্বাগত জানায়। তবে বেঁচে থাকা অভিবাসীদের প্রত্যেকের জন্য দ্রুত সমাধান ভাবা অত্যন্ত জরুরি।

বিবৃতিতে, আরও দুটি উদ্ধারকারী জাহাজ, ওশান ভাইকিং এবং রাইজ অ্যাবভের কথাও উল্লেখ করা হয়।

সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, উদ্ধারকারী জাহাজ ‘রাইজ অ্যাবভ’কে দক্ষিণ ইটালির একটি বন্দরে নামার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

জার্মান উদ্ধারকারী জাহাজ লাইফলাইনও আজ ইটালির ক্যালাব্রিয়া বন্দরে নামার সু্যোগ পেয়েছে।

পাশাপাশি, অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং নরওয়েইয়ান রিফিউজি কাউন্সিল সহ অধিকার সংগঠনগুলোর একটি গ্রুপ দ্রুত সব জাহাজজকে অবতরণ করার অনুমতি দিতে আহ্বান জানিয়েছে।

অপরদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অভিযোগ করেছে, ইটালি আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করেছে। এই মানবাধিকার সংগঠনটির মতে, “আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন স্পষ্ট। একটি উদ্ধার কার্যক্রম তখন শেষ হয় যখন উদ্ধার করা সবাইকে নিরাপদ স্থানে নামানো হয়।”

  • মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ‘উদ্বেগ’

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এখনও কয়েকশ অভিবাসী সমুদ্রে অথবা ইটালির বন্দরে ডক করা বেশ কয়েকটি মানবিক জাহাজে অপেক্ষা করছে।

এনজিওগুলো জানিয়েছে, সমুদ্রে প্রায় দুই সপ্তাহ অতিবাহিত করার পরে, বেঁচে যাওয়া অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে এবং হতাশা ক্রমশই বাড়ছে।

তাদের মতে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লোকদের জাহাজ থেকে নামানো দরকার। অন্যথায় জাহাজের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

সাগরে ঝাঁপ দেওয়া অভিবাসীদের একজন ইউসুফ ফরাসি এনজিও এমএসএফকে বলেন, “দীর্ঘদিন জাহাজে থাকার পর, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিল আমার শরীর এবং আমার স্বপ্ন দুটোই ভেঙে যাচ্ছে। সাহায্যের জন্য উদ্ধার জাহাজের নাবিক ও সদস্যদের কাছে কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের সাহায্য করেছে কিন্তু আমি এই পরিস্থিতি আর সহ্য করতে পেরে উপকূলে থাকা জাহাজ থেকে লাফ দিই।”

জাহাজে থাকা লোকেদের মানসিকভাবে সক্রিয় রাখতে জাহাজের সদস্যরা বিভিন্ন কার্যক্রম আয়োজনের চেষ্টা করে। তবে বর্তমানে মানসিক যন্ত্রণা বহুগুণ বেড়েছে।

এমএসএফের সদস্য ক্লডিয়া লোদেসানি বলেন, “অনেকেই আছেন আছে যারা কাঁদে, মাটিতে পড়ে যায়, পানিতে ঝাঁপ দেয়। অনেকেই জাহাজের এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকে এবং কারো সঙ্গ কথা বলে না। কিছু ব্যক্তি খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। ”

অভিবাসীদের পাশাপাশি জাহাজের কর্মীরাও বেশ ক্লান্ত। তাদের পক্ষের পরিস্থিতি পরিচালনা করা আরো জটিল হয়ে পড়ে। 

 

সূত্র: ইনফোমাইগ্রান্টস

 

ইএফ

Link copied!