ডিসেম্বর ১৯, ২০২২, ১১:৩২ পিএম
আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের কাছে সমুদ্রে খাবার-পানি ছাড়া একটি নষ্ট নৌকায় ভাসছে প্রায় ১৫০ রোহিঙ্গা। আশেপাশের দেশগুলোর কাছে তাদের সহায়তা করার অনুরোধ জানিয়েছে জাতিসংঘ।
বিবিসি জানায়, দুই সপ্তাহ আগে নৌকাটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। তারপর থেকে সেটি সমুদ্রে ভাসছে।
নৌকায় থাকা লোকজন স্যাটেলাইট ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করে বলেছেন, তাদের নৌকায় নারী ও শিশুরাও রয়েছে। তাদের খাবার-পানি ফুরিয়ে গেছে এবং শিশুসহ নৌকার কয়েকজন যাত্রী এরই মধ্যে মারা গেছেন।
গত শুক্রবারই জাতিসংঘ থেকে আন্দামান সাগরের চারপাশে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওই নৌকায় সহায়তা পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।
কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই অনুরোধে কোনো দেশ সাড়া দেয়নি বলে জানায় বিবিসি।
মাছ ধরা ছোট ওই নৌকাটি গত মাসে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে সমুদ্রে যাত্রা শুরু করে। তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সেটি সমুদ্রে রয়েছে।
ওই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ছোট্ট একটি ছাদ ছাড়া নৌকার পুরোটাই খোলা। খুব সম্ভবত সমু্দ্রে রওয়ানা হওয়ার কয়েকদিন পরই সেটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।
তারপর থেকে এটি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে সমুদ্রে ভাসছে। এটি এখন নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে ভারতীয় জলসীমায় কয়েকশ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করেন এমন একজন সমাজকর্মী রোববার ওই নৌকার একজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন বলে জানায় বিবিসি।
নৌকায় থাকা একজন শরণার্থী তাকে বলেছেন, ‘‘আমরা এখানে মারা যাচ্ছি। এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নৌকার কেউ কিছু খায়নি।”
মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে সে দেশের সেনাবাহিনীর দমন-পীড়ন অভিযান শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রতিবেশী বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
কক্সবাজার জেলার কুতুপালংয়ের শরণার্থী শিবিরে তাদের আশ্রয় মিলেছে। অনেক রোহিঙ্গা উন্নত জীবনের আশায় এখন ওই শরণার্থী শিবির থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। শীতকালে সমুদ্র যখন অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকে তখন রোহিঙ্গারা দালালের মাধ্যমে নৌকায় করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র পথে মূলত মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছানোর চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অনেক বেশি মানুষ রাখা হচ্ছে। এছাড়া, মিয়ানমারে গত বছর সেনাঅভ্যুত্থানের পর ‘বিদ্রোহ দমনের নামে’ আবারও সামরিক অভিযান শুরু হওয়ায় সেদেশে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গারাও পালাচ্ছে।
গত দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিয়ে অন্তত পাঁচটি নৌকা সমুদ্র পথে রওয়ানা হয়েছে।
রোববার সন্ধ্যায় শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী দেশটির উত্তর উপকূলে সমুদ্র থেকে রোহিঙ্গাদের একটি নৌকা উদ্ধার করেছে বলে জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেন, নৌকায় একশ’র বেশি রোহিঙ্গা ছিল। যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও রয়েছে। চারজন খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের ওই দলটি কোন দেশে থেকে রওয়ানা হয়েছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।