জানুয়ারি ৮, ২০২৩, ০৩:২৮ পিএম
`আমি আর মাত্র ৬ মাস বাঁচব, বাবা-মাকে বলো না প্লিজ!’ সেদিন ক্যান্সার আক্রান্ত ছয় বছরের ছোট্ট শিশুর অনুরোধ স্তব্ধ করে দিয়েছিল চিকিৎসককে। ক্যান্সারের চতুর্থ ধাপে ভোগার পর মারা যাওয়া এই শিশুর সেই কথা টুইটারে টুইট করেছেন ভারতের হায়দরাবাদের এক নিউরোলজিস্ট। সেই টুইট মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে ছড়িয়েছে। হৃদয় নাড়া দেওয়া শিশুটির এই কথা ঝড়িয়েছে অনেকের চোখের পানিও।
মাত্র ছয় বছর বয়সের শিশুর এমন অসাধারণ ধৈর্য আর সাহসিকতার কথা স্মরণ করে সুধীর কুমারের হৃদয়বিদারক টুইট ইতোমধ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ পড়েছেন। গত ৫ জানুয়ারি মনু (ছদ্মনাম) নামে শিশুর মৃত্যু নিয়ে টুইট করেন তিনি।
ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর গল্প টুইট করে সুধীর কুমার লিখেন ‘আমার চতুর্থ স্তুরের ক্যান্সার হয়েছে। আর মাত্র ছয় মাস বাঁচব। আবার বাবা-মাকে একথা জানিও না, প্লিজ!’ হুইল চেয়ারে বসা, শীর্ণকায় মনুর অনুরোধ শুনে খানিকক্ষণের জন্য স্তব্ধ ছিলেন হায়দরাবাদের চিকিৎসক সুধীর কুমার। ছয় বছরের ছোট্ট ছেলেটিকে কী বলবেন তিনি! তবুও মনুকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তিনি কথা রাখবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় হায়দরাবাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভিজ্ঞতার কথা পড়ে নেটিজেনদের চোখে পানি ঝরেছে। পরপর ৯ টুইটে শিশু মনুর মর্মস্পর্শী গল্প শুনিয়েছেন চিকিৎসক।
চিকিৎসক সুধীর টুইটে আরো জানান, মনুর পরিবারের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয় চেম্বারেই। ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত মনুর খিচুঁনির সমস্যার বিষয়ে পরামর্শ নিতে ছেলেকে নিয়ে নিউরোলজিস্টের কাছে এসেছিলেন বিধ্বস্ত তরুণ দম্পতি। চিকিৎসককে তারা বলেন, ‘মনু বাইরে অপেক্ষা করছে। তার ক্যান্সার হয়েছে। তবে, আমরা তাকে জানাইনি। দয়া করে তাকে দেখুন এবং পরামর্শ দিন। তবে তাকে যে চিকিৎসা দেবেন, সেই ব্যাপারে কিছু বলবেন না।’
পরে হুইলচেয়ারে করে মানুকে হাসপাতালের বহির্বিভাগে নেওয়া হয়। সেই স্মৃতিচারণ করে চিকিৎসক সুধীর বলেন, ‘সে হাসি দিল। তাকে আত্মবিশ্বাসী এবং দারুণ স্মার্ট মনে হচ্ছিল।’
মনুর মস্তিষ্কের বামপাশে চতুর্থ স্তরের গ্লিওব্লাস্টোমা ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। যে কারণে তার ডান হাত এবং পা প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়। তার ক্যান্সারের অস্ত্রোপচার এবং কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। পরে সে খিঁচুনিতেও ভোগে; যা মস্তিষ্কের ক্যান্সারের কারণে হয়েছিল।
চিকিৎসক সেদিনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, তারা হাসপাতাল থেকে চলে যাওয়ার সময় মনু তার বাবা-মাকে একটু বাইরে যেতে বলে। আমার সঙ্গে একান্তে কিছু কথা বলতে চায় সে। মানু সেদিন সুধীর কুমারকে বলেছিলেন, ‘ডাক্তার, আমি এই রোগের ব্যাপারে সবকিছু আইপ্যাডে পড়েছি। আমি জানি, আমি আর মাত্র ৬ মাস বাঁচবো। তবে আমি বাবা-মাকে এটা বলিনি। কারণ তারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন। তারা আমাকে অনেক ভালোবাসেন। দয়া করে, এসব কথা তাদেরকে বলবেন না।’ তবে চেম্বারে ছোট্ট শিশুর কাছ থেকে যে কথা শুনেন চিকিৎসক এতে তিনি স্তব্ধ হয়ে যান। পরবর্তীতে নিজেকে সামলে নিয়ে চিকিৎসক মনুকেও আশ্বস্ত করেন।
মনুকে আশ্বাস দিলেও তাঁর কথা রাখতে পারেননি চিকিৎসক সুধীর কুমার। মনু বাইরে যাওয়ার পরেই ডেকে পাঠিয়েছিলেন তাঁর বাবা-মাকে। পরামর্শ দিয়েছিলেন বাকি দিনগুলি ছেলেকে নিয়ে আনন্দে কাটাতে। কেঁদে ফেলেছিলেন মনুর বাবা-মা।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মনুর স্মৃতি আবছা হয়ে যায় চিকিৎসক সুধীর কুমারের ব্যস্ত জীবনে। পরবর্তীতে ৯ মাস পরে তাঁর চেম্বারে আসা দম্পতির কথা শুনে স্মৃতিতে ফিরে আসে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছোট্ট মনুর কথা। ৯ মাস পর চিকিৎসককে ধন্যবাদ জানাতে এসেছিলেন সন্তানহারা ওই দম্পতি। বলেছিলেন, ‘আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর ৮টা মাস আমাদের জীবনের সেরা সময় ছিল।’
কাজ থেকে ছুটি নিয়ে শেষের মাসগুলি মনুর সঙ্গেই কাটিয়ে ছিলেন তাঁর মা-বাবা। মনুর ইচ্ছা ছিল ডিজনিল্যান্ড দেখার। অসুস্থ ছেলের সেই আশাও পূর্ণ করেছিলেন তাঁরা। ওই ৮টা মাস প্রাণভরে ছেলের সঙ্গে কাটিয়েছেন। মর্মস্পর্শী এ কাহিনী পড়ে চোখের জল বাধ ভাঙেনি নেটিজেনদের।
সূত্র :টাইমস অব ইন্ডিয়া
এআরএস