আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্চ ১৪, ২০২৩, ১০:৫৬ এএম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্চ ১৪, ২০২৩, ১০:৫৬ এএম
ফের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে উত্তর কোরিয়া। পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) তার পূর্ব উপকূল থেকে সাগরে দু’টি স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
গত কয়েক বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় সামরিক মহড়া চলার মধ্যেই ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করল দেশটি। মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর কোরিয়া মঙ্গলবার তার পূর্ব উপকূল থেকে সাগরে দু’টি স্বল্প-পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ (জেসিএস) জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার পশ্চিম উপকূলের কাছে অবস্থিত দক্ষিণ হওয়াংহাই প্রদেশ থেকে মঙ্গলবার সকাল ৭:৪০ মিনিটে ক্ষেপণাস্ত্র দু’টি নিক্ষেপ করা হয় এবং সেগুলো আকাশে প্রায় ৬২০ কিলোমিটার উড্ডয়ন করেছিল।
জেসিএস এক বিবৃতিতে বলেছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পূর্ণ প্রস্তুতি বজায় রেখেছে।
অন্যদিকে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, জাপান (উত্তর কোরিয়ার নিক্ষেপ করা) ক্ষেপণাস্ত্রের তথ্য সংগ্রহ করছে। এছাড়া এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের জেরে জাপান তার দেশের মধ্যে কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য নিশ্চিত করেনি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
জাপানের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিরোকাজু মাতসুনো বলেছেন, পিয়ংইয়ংয়ের নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো জাপানের ভূখণ্ড বা একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর দিয়ে উড়ে গেছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মাতসুনো আরও বলেন, ‘উত্তর কোরিয়া ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ এবং পারমাণবিক পরীক্ষা-সহ আরও উস্কানিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা উত্তর কোরিয়ার সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা অব্যাহত রাখব এবং নজরদারিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করব।’
মার্কিন সামরিক বাহিনীর ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ড বলেছে, সর্বশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ মার্কিন কর্মীদের বা এই অঞ্চল বা তার মিত্রদের জন্য তাৎক্ষণিক কোনও হুমকি সৃষ্টি করেনি। তবে উত্তর কোরিয়ার বেআইনি অস্ত্র কর্মসূচির অস্থিতিশীল প্রভাব (এই অঞ্চল বা মিত্রদের ওপর) রয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
রয়টার্স বলছে, দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী উত্তর কোরিয়ার কর্মকাণ্ডের ‘কঠোর নিন্দা’ করেছে। এছাড়া বারবার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণকে এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ গুরুতর উস্কানি এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশনের লঙ্ঘন বলেও অভিহিত করেছে তারা।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘উত্তর কোরিয়া উস্কানি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে চলমান ফ্রিডম শিল্ড সামরিক মহড়াকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও দক্ষিণ কোরিয়া-মার্কিন জোট পরিকল্পনা অনুযায়ী মহড়া ও প্রশিক্ষণ চালিয়ে যাবে।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী সোমবার থেকে তাদের ‘ফ্রিডম শিল্ড’ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। ২০১৮ সালের পর থেকে এই প্রথমবারের মতো এতো বড় আকারের সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও পাঁচ বছর আগে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য শুরু হওয়া কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সমর্থনে এই মহড়া স্থগিত করেছিল ওয়াশিংটন ও সিউল।
দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর মতে, এই মহড়া কমপক্ষে ১০ দিন ধরে চলবে এবং উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক হুমকির মধ্যে ‘পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিবেশের’ ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে।
অবশ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে এই ধরনের সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়া তাদের ওপর আক্রমণের মহড়া হিসাবে দেখে থাকে। আর তাই নিজের আত্মরক্ষার জন্য এই পারমাণবিক অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি উত্তর কোরিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বলে যুক্তি দিয়ে থাকে পিয়ংইয়ং।
মূলত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমান ভাবে দ্রুতগতিতে আন্তঃমহাদেশীয় এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে উত্তর কোরিয়া। এর মধ্যে কেবল গত বছরই ৬০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বারবার ক্ষেপণাস্ত্রসহ অন্যান্য পরীক্ষা চালাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। আর তাই তাদের মতো অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশ কীভাবে একের পর এক এমন পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে, তা নিয়ে বহু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
যদিও একের পর এক পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার জন্য উত্তর কোরিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশ।
আরএস