Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪,

তুরস্কে রান-অফ নির্বাচনে নয়া সমীকরণ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মে ১৬, ২০২৩, ০১:০৪ পিএম


তুরস্কে রান-অফ নির্বাচনে নয়া সমীকরণ

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এবং কেমাল কেলিকদারগোলুর কেউই এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পাননি। 

রোববার (১৪ মে) অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে এরদোয়ান পেয়েছেন ৪৯ দশমিক ৫০ শতাংশ ভোট। কেমাল পেয়েছেন ৪৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ ভোট। আর নির্বাচনের তৃতীয় প্রার্থী সিনান ওগান পেয়েছেন ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ ভোট।

দেশটির নির্বাচনের বিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট হতে হলে এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়া লাগবে। ফলে ৪৯ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েও প্রথম দফায় সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেননি এরদোয়ান।

প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বির কেউই যেহেতু এই ‘ম্যাজিক ফিগার’ স্পর্শ করতে পারেননি ফলে দেশটিতে আগামী ২৮ মে অনুষ্ঠিত হবে রান-অফ নির্বাচন। এতে থাকবেন শুধুমাত্র এরদোয়ান ও কেমাল। রান-অফ নির্বাচনে যিনি বেশি ভোট পাবেন তিনি আগামী ৫ বছর দেশ শাসন করবেন।

এরদোয়ান ও কেমালের কেউই এককভাবে ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ার কারণ হলেন নির্বাচনের তৃতীয় প্রতিদ্বন্দ্বী সিনান ওগান। কারণ তাকে দেশটির ৫ শতাংশেরও বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন।

২৮ মে যে রান-অফ নির্বাচন হবে সেটিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন সিনান ওগান। কারণ তাকে যারা ভোট দিয়েছেন এখন সেসব ভোটারদের ভোটই নির্ধারণ করে দিতে পারে কে হবেন প্রেসিডেন্ট।

ভোট গণনার সময়ই বোঝা গিয়েছিল এরদোয়ান এবং কেমালের মধ্যে কেউই প্রথম ধাপে নির্বাচিত হবেন না। ফলে সিনান ও তার সমর্থকদের নিয়ে ওই দিন থেকেই আলোচনা শুরু হয়।

সিনান ও তার সমর্থকরা এখন কাকে সমর্থন দেবে এ নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা।

সোমবার (১৫ মে) এক সাক্ষাৎকারে সিনান বলেন, ‘এ মুহূর্তে, আমরা বলছি না এই প্রার্থী বা ওই প্রার্থীকে সমর্থন জানাব। তবে যারা জঙ্গিদের কাছ থেকে দূরত্ব রাখে না তাদের আমাদের কাছে আসা উচিত নয়।’

সিনান যে ‘জঙ্গিদের সঙ্গে দূরত্বের’ কথা বলছেন এ বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সিনানের মতো জাতীয়তাবাদীদের চোখে এরদোয়ান এবং কেমাল দুইজনের সঙ্গেই ‘জঙ্গিদের’ সখ্যতা রয়েছে। জঙ্গি বলতে তুরস্কের কুর্দি দলগুলোর কথা বুঝিয়েছেন তিনি।

কেমালকে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সমর্থন দিয়েছিল পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এইচডিপি)। এই দলটিকে কুর্দিদের দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া নিষিদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠী কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সহচর হিসেবে ধরা হয় এইচডিপিকে।

তুরস্কের বিরুদ্ধে গত ৩৯ বছর ধরে সশস্ত্র আন্দোলন করে আসছে পিকেকে। এই আন্দোলনে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। তুরস্ক, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সবাই পিকেকে জঙ্গি দল হিসেবেই দেখে।

অপরদিকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি) কুর্দি ইসলামিক দল হুদা-পারের সমর্থন পেয়েছে। একে পার্টির ব্যানারে এবার হুদা-পারের তিনজন রাজনীতিবিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

হুদা-পারের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্ক রয়েছে কুর্দি দল হিজবুল্লাহর। যেটি ১৯৯০ সালের দিকে পিকেকে ও তার্কিস পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর হামলা চালাত। (তুরস্কের হিজবুল্লাহর সঙ্গে লেবাননের শিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর কোনো সম্পর্ক নেই)।

এরদোয়ান নাকি কেমাল কাকে সমর্থন দেবেন সিনান ওগান?

ওগানের ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) সাবেক পরামর্শক মুরাত ইলদিজ বলেছেন, ওগান প্রথমদিন থেকেই পরিষ্কার করেছেন, যে দল জঙ্গিদের কাছ থেকে দূরে থাকবে তাকেই তিনি সমর্থন জানাবেন।

তিনি বলেছেন, ‘ওগান কেমাল কিলিকদারোগলুকে বলবেন তাকে কথা দিতে হবে, কিছু বিষয়ে তিনি কুর্দি দল এইচডিপির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখবেন। কিন্তু এরদোয়ানের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি কঠিন হবে। কারণ তিনি ইতোমধ্যে হুদা-পারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন।’

ইস্তাম্বুলের সাবাঙ্কি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বের্ক এসেন বলেছেন, ‘জাতীয়তাবাদী দল আইই পার্টির কেমালের একটি দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই দূরত্বের কারণে জাতীয়তবাদী তার্কিসরা কেমালকে ভোট দেননি।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘কিছু তার্কিস বিশেষভাবে এরদোয়ানকে পছন্দ করেন না, অপরদিকে তারা আবার কুর্দি বিরোধী। এরদোয়ানকে পছন্দ না করলেও তারা কেমালকে ভোট দেননি কারণ তার সঙ্গে কুর্দিদের সখ্যতা রয়েছে।

এখন দেখার বিষয় ওগান কাকে সমর্থন জানান। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রান-অফ নির্বাচনে ওগানের সমর্থকরা ভোট দেবেন কিনা এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। 

এছাড়া ওগান তার সমর্থকদের যে নির্দেশনা দেবেন সেই নির্দেশনা অনুযায়ী তারা ভোট দেবেন কিনা সেটি নিয়েও সংশয় আছে। সূত্র: আল জাজিরা

এইচআর

Link copied!