Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪,

মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘন: বাইডেনকে ৭৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার চিঠি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জুন ২১, ২০২৩, ১১:৩০ এএম


মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘন: বাইডেনকে ৭৫ মার্কিন আইনপ্রণেতার চিঠি

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সফর করছেন। ২০১৪ সালে প্রথমবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি বেশ কয়েকবারই দেশটিতে সফরে গেছেন এবং তবে প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণের কারণে মোদির এই সফরটি যুক্তরাষ্ট্রে তার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর বলে বিবেচিত হচ্ছে।

তবে গুরুত্বপূর্ণ এই সফরের শুরুতেই মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন মোদি। এমনকি মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চিঠিও লিখেছেন ৭৫ জন মার্কিন আইনপ্রণেতা। 

বুধবার (২১ জুন) পৃথক দুই প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

রয়টার্স বলছে, ওয়াশিংটন সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে তার দেশে মানবাধিকারের বিষয়গুলো উত্থাপন করার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে অনুরোধ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের ৭৫ জন সদস্য।

মার্কিন কংগ্রেসের সিনেট ও হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই আইনপ্রণেতারা সবাই ডেমোক্র্যাট দলীয় এবং বাইডেনের কাছে পাঠানো চিঠিতে তারা এই অনুরোধ জানান।

মার্কিন আইনপ্রণেতারা বলেছেন, ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস এবং সুশীল সমাজের গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়ে তারা উদ্বিগ্ন। সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন এবং প্রতিনিধি প্রমিলা জয়পালের নেতৃত্বে বাইডেনকে এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা ভারতীয় কোনো নেতা বা রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করি না - এটি ভারতের জনগণের সিদ্ধান্ত - তবে আমরা সেই গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলোর সমর্থনে দাঁড়িয়েছি যা আমেরিকান পররাষ্ট্র নীতির মূল অংশ হওয়া উচিত।’

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে পাঠানো ওই চিঠিতে মোট ৭৫ জন ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর এবং প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য স্বাক্ষর করেছেন। আর বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই বিষয়টি প্রথম প্রকাশ্যে আনে।

চিঠিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদির সাথে আপনার বৈঠকের সময় আপনি উভয় দেশের মধ্যে সফল, শক্তিশালী এবং দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সম্পূর্ণ পরিসর নিয়ে আলোচনা করবেন।’

রয়টার্স বলছে, ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে নরেন্দ্র মোদি পাঁচবার যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছেন। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ কূটনৈতিক মর্যাদার সাথে এই সফরটিই হতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রে মোদির প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। যদিও মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির অধীনে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলে উদ্বেগ রয়েছে।

ওয়াশিংটন দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের আশা করছে। কারণ চীনকে মোকাবিলায় ভারতকে পাশে রাখা প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। তবে মানবাধিকার কর্মীরা উদ্বিগ্ন যে, ভূরাজনীতির হিসেব-নিকেশে হয়তো ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো চাপা পড়ে যাবে।

আর এ কারণে বেশ কয়েকটি মার্কিন মানবাধিকার গোষ্ঠী মোদির সফরের সময় বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছে।

এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসে প্রকাশিত মানবাধিকার সুরক্ষার বিষয়ে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বার্ষিক প্রতিবেদনে ভারতে ‘উল্লেখযোগ্য মানবাধিকার সমস্যা’ এবং অপব্যবহারের ঘটনা ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

অন্যদিকে পৃথক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন চলতি সপ্তাহে যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য রাষ্ট্রীয় নৈশভোজের আয়োজন করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন সমালোচকরা অভিযোগ করছেন, মোদির কট্টর ডানপন্থি সরকারের অধীনে ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে চোখ বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কিরবি সাংবাদিকদের বলেন, মোদির যুক্তরাষ্ট্র সফর উভয় দেশের মধ্যে ‘গভীর এবং ঘনিষ্ঠ’ অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করবে।

ভারত আগামী দশকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হবে উল্লেখ করে কিরবি আরও বলেন, ‘এই সফরটি একটি অবাধ, উন্মুক্ত, সমৃদ্ধ এবং নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিকের প্রতি আমাদের দুই দেশের অভিন্ন অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করবে।’

আল জাজিরা বলছে, মোদির সফর নিয়ে হোয়াইট হাউসের এই মুখপাত্রের কথায় ভারতের মানবাধিকার রেকর্ড এবং হিন্দুত্ব নামে পরিচিত অতি-ডানপন্থি হিন্দু জাতীয়তাবাদী নীতি মোদি সরকারের মেনে চলা নিয়ে কোনও মন্তব্য ছিল না।

সমালোচকদের মতে, এই ধরনের নীতি ভারতের সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে মুসলমানদের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।

যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র সমগ্র এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর সাথে মিত্রতার মাধ্যমে চীনের উত্থানকে মোকাবিলা করতে চায়, তাই দল-মত নির্বিশেষে মার্কিন রাজনীতিবিদরা ভারতের সাথে ওয়াশিংটনের বর্ধিত সহযোগিতাকে সমর্থন করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান নেতারা মোদিকে তার সফরের সময় কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে কথা বলবেন ভারতীয় এই প্রধানমন্ত্রী। এর আগে কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী দুইবার মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে কথা বলেননি। উইনস্টন চার্চিল ও নেলসন ম্যান্ডেলা ছাড়া আর কেউ এই সম্মান পাননি।

তবে এর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্র্যাটিক আইন প্রণেতাদের একটি অংশ আবার ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং নাগরিক স্বাধীনতার বিষয়ে ভারতের রেকর্ড যাচাই-বাছাই করে দেখছেন। আর এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার মার্কিন সিনেট এবং প্রতিনিধি পরিষদের ৭৫ সদস্যের স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে, আইনপ্রণেতারা মোদির সাথে আলোচনার সময় ভারতে মানবাধিকারের সমস্যাগুলো সমাধানে কথা বলার জন্য বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

বাইডেনকে পাঠানো ওই চিঠিতে স্বাক্ষর করেননি মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য রাশিদা তালাইব। তবে মঙ্গলবার টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় তিনি বলেছেন, তিনি কংগ্রেসে মোদির ভাষণ বয়কট করবেন।

তিনি লিখেছেন, ‘এটি লজ্জাজনক যে, মোদিকে আমাদের দেশের রাজধানীতে কথা বলার জন্য প্ল্যাটফর্ম দেওয়া হয়েছে। মোদির মানবাধিকার লঙ্ঘনের দীর্ঘ ইতিহাস, গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড, মুসলিম ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা এবং সাংবাদিকদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের মতো কাজ অগ্রহণযোগ্য।’

যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, অস্ত্র বিক্রির মতো বৃহত্তর সহযোগিতার জন্য ভারতে পদ্ধতিগত বা নিয়মতান্ত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনকে উপেক্ষা করছে ওয়াশিংটন।

ইন্ডিয়ান আমেরিকান মুসলিম কাউন্সিলের (আইএএমসি) নির্বাহী পরিচালক রাশেদ আহমেদ বলেছেন, ‘ভারতে যা কিছু চলছে তা যেন কিছুই দেখছে না বাইডেন প্রশাসন, আর এটি নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’

এইচআর

Link copied!