Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ, ২০২৫,

অপরাধে বেশি ব্যবহার হচ্ছে মোটরসাইকেল

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

মার্চ ১৮, ২০২৫, ১২:৪০ এএম


অপরাধে বেশি ব্যবহার হচ্ছে মোটরসাইকেল

অপরাধীদের মধ্যে অপরাধ সংঘটনের পর মোটরসাইকেল ব্যবহার করে পালিয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে— মুহাম্মদ তালেবুর রহমান, উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মিডিয়া বিভাগ, ডিএমপি

দুর্ঘটনা ও অপরাধ সংঘটনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে মোটরসাইকেল। সাম্প্রতিককালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত অপরাধের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অপরাধীদের মোটরসাইকেল ব্যবহার করতে দেখা গেছে। কিশোর গ্যাং এবং ছোট-বড় অনেক অপরাধীর অপরাধ কার্যক্রমে দুই চাকার এই বাহনটি অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। শুধু বিভিন্ন অপরাধ সংঘটনই নয়, সড়ক দুর্ঘটনায়ও এ বাহনটি হতাহতের ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে। যদিও মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ঢাকা মহানগর কিংবা সারা দেশে কী পরিমাণ অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে পুলিশের কাছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই।

তবে সংস্থাটির সদস্যরা বলছেন, অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ব্যবহারের ঘটনা প্রায়ই দেখা যায়। এর কারণ হলো অপরাধ করার পর দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতেই অপরাধীরা এ ধরনের বাহন ব্যবহার করে। পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেসরকারি সংস্থা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে দেশে দুই হাজার ৭৬১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাতে দুই হাজার ৬০৯ জন নিহত এবং এক হাজার ৮৩২ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক হাজার ৯৬৩ জন ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সি। ওই সময়ে জাতীয় মহাসড়কে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ২৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ ঘটেছে। তাছাড়া মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার ৩৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে, ১৭ দশমিক ৪২ গ্রামীণ সড়কে ও ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ শহরের সড়কে ঘটেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ৯ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। আর বাহনটির দুর্ঘটনায় ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রাণহানি বেড়েছে।

সূত্র জানায়, যানজটপূর্ণ সড়ক বা সংকীর্ণ গলি দিয়ে এঁকেবেঁকে দ্রুত পালানোর সুযোগ থাকে বলেই অপরাধ সংঘটনের সময়ে মোটরসাইকেল ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে। ছিনতাইয়ের প্রবণতা বাড়ে পালানোর সুযোগের ওপর ভিত্তি করে। মোটরসাইকেল এদেশে ওই সুযোগটা করে দেয়। হাইজ্যাক বা কোথাও প্যানিক তৈরি করায় বাহনটির বিরাট ভূমিকা আছে। তাছাড়া বাংলাদেশে কিশোর-তরুণদের মধ্যে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে অপরাধ করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। দেশের কিশোর-তরুণদের কাছে কী পরিমাণ মোটরসাইকেল রয়েছে, সরকারিভাবে তার কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। তবে ঢাকার জন্য প্রণীত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা হালনাগাদ ও সংশোধনের জন্য প্রণীত একটি গবেষণায় ঢাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোটরসাইকেল ব্যবহারের প্রবণতা তুলে ধরা হয়। তাতে দেখা যায়, ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের ১০ দশমিক ৬ শতাংশ মোটরসাইকেল ব্যবহার করে।

অন্যদিকে হাইস্কুল পর্যায়ে যাতায়াতে মোটরসাইকেল ব্যবহার করে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন সময় অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। সূত্র আরও জানায়, সাধারণত অপরাধ সংঘটনের সময় পেশাদার অপরাধীরা নিবন্ধনবিহীন মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। যাতে তাদের সহজে শনাক্ত করা না যায়। স্বাভাবিকভাবেই অপরাধী কোনো অপরাধ করার আগে সবকিছুর পরিমাপ করে। অপরাধ করার আগে ধরা পড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও বিবেচনা করা হয়। অপরাধের সুবিধা নিতে গেলে সম্ভাব্য প্রতিবন্ধকতাও অপরাধীরা পরিমাপ করে। কর্ম শেষ করে নিজেকে নিরাপদ করার চিন্তাও থাকে। এদেশে বিশেষ করে ঢাকায় এত বেশি ট্রাফিক থাকে যে চার চাকা ব্যবহার করে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ কম। সেজন্য অপরাধকারীরা মোটরসাইকেল ব্যবহার করে। অপরাধ করে পালানোর জন্য তাদের প্রধান সড়কে যেতে হয় না। শহরের অলিগলি দিয়েই সহজে পার পেয়ে যাওয়া যায়। আবার হাইওয়েতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে মোটরসাইকেল ব্যবহার হয় না। সেখানে চার চাকাই বেশি ব্যবহূত হয়। অপরাধের জন্য জনপ্রিয় বাহন হয়ে উঠেছে মোটরসাইকেল। যদিও এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করার জন্য সরকারের তরফ থেকে প্রায় সময়ই বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। হেলমেট পরিধান করা, মোটরসাইকেলে দুজনের বেশি আরোহণ না করা কিংবা কাগজপত্র ঠিক রাখা- এসব জায়গায় সরকার অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু তারপরও দেশে এমন অনেক মোটরসাইকেল রয়েছে, যেগুলোর রেজিস্ট্রেশনও নেই।

এদিকে বর্তমানে ঢাকা মহানগর এলাকায় প্রায় ১২ লাখ নিবন্ধিত মোটরসাইকেল রয়েছে। সারা দেশে সংখ্যাটি প্রায় ৪৬ লাখ। যদিও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যানুযায়ী দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় মোটরসাইকেল নিবন্ধন নেয়ার হার কমছে। ২০২৩ সালে বিআরটিএ থেকে তিন লাখ ১০ হাজারের বেশি মোটরসাইকেল নিবন্ধিত হয়, যা ২০১৬ সালের পর থেকে সর্বনিম্ন। আর ২০২৪ সালের প্রথম ১১ মাসে (জানুয়ারি-নভেম্বর) দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৬৮টি মোটরসাইকেলের নিবন্ধন হয়েছে।

অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, অপরাধীদের মধ্যে অপরাধ সংঘটনের পর মোটরসাইকেল ব্যবহার করে পালিয়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। তবে অপরাধ মানেই যে সেটি মোটরসাইকেল ব্যবহার করে হচ্ছে, বিষয়টি এমন না। অপরাধ সংঘটন বা পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অপরাধীরা আরও বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে। ঢাকায় তো কয়েক লাখ বাইকার রয়েছেন, সবাই তো আর অপরাধী নন। সামগ্রিকভাবে অপরাধের সঙ্গে আসলে মোটরসাইকেলের তেমন একটা সম্পর্ক নেই। যারা অপরাধী, তারা যেকোনো ধরনের যানবাহন ব্যবহার করেই অপরাধ ঘটাতে পারে। দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অপরাধীরা সাধারণত এটা ব্যবহার করে। পুলিশ সবসময় সব ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে তৎপর রয়েছে, কাজ করে যাচ্ছে।

Link copied!