আমার সংবাদ ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪, ০৭:২০ পিএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৪, ০৭:২০ পিএম
দুর্গাপূজা উপলক্ষে বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি করা হয় ইলিশ। তবে এবার তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশটির ব্যবসায়ীরা ইলিশ চেয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। ইলিশ পাঠানোর জন্য অস্থায়ী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে আবেদন করেছে ভারতের মাছ আমদানিকারক সংস্থা ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।
অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ বলেন, আমরা প্রত্যেক বছর পুজোর আগে একটা চিঠি দেই। যেখানে আমরা ওনাদেরকে আবেদন করি যাতে পূজার আগে ওনারা আমাদের ইলিশ পাঠান। এই বছর আগস্টে তো ঝামেলা হলো বাংলাদেশে। সেই কারণে আমরা আগস্ট মাসে চিঠি দেইনি। এখন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। সবকিছু এখন স্বাভাবিকের দিকে এগোচ্ছে বলে আমরা গত ৯ সেপ্টেম্বর একটা আবেদন করেছি। আমরা বিভিন্ন দপ্তরে ইমেইল পাঠিয়েছি। কমার্স সচিব ও অ্যাডভাইজার তৌহিদ সাহেবসহ সবাইকে চিঠি পাঠিয়েছি যাতে প্রত্যেক বছরের মত এ বছরও পূজা উপলক্ষে তারা আমাদের ইলিশ দেয়। তবে এই ব্যাপারে আমরা এখনও কোনোরকম পজিটিভ নিউজ পাইনি। যেহেতু প্রত্যেক বছরের মতো রুটিন মেনে আমরা চিঠি দিয়েছি। তাই এ বছরও আমরা চিঠি দিয়েছি। অবস্থা ভালো না। তাও আমরা আশাবাদী বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ পূজা উপলক্ষে আসবে।
ইলিশ মাছ ২০১২ সাল থেকে রপ্তানি বন্ধ করে রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু গত পাঁচ বছর পূজার মধ্যে ইলিশ পাঠানোর যে প্রথা শুরু হয়েছে সেখানে একটা সিম্বলিক কোয়ানটিটি ওনারা আমাদের দেয়। ওনারা ৩/৪ হাজার মেট্রিক টন ও আমাদের জন্য দিয়ে দেয়। কিন্তু আমাদের আমদানির জন্য খুব বেশি হলে থাকে মাত্র এক মাস সময়। এই সময়ের মধ্যে আমরা খুব বেশি হলে ৮০০/১০০০/১২০০ মেট্রিক টন ইলিশ আমরা আনতে পারি। সেটা তুলনামূলক অনেক কম পরিমাণে যতটা বাংলাদেশে ধরা হয়। তাই ওনাদের যে দাবি দেশের মানুষ আগে পাবে পরে রপ্তানি হবে এই হিসেবে দেখতে গেলে দেশের মানুষ তো খাচ্ছেই। ওনারা তো ব্যান তুলে নিচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান চাহিদা কিভাবে সামাল দিচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মাকসুদ বলেন - এখন যেহেতু সিজন চলছে তাই পশ্চিমবঙ্গে ইলিশের চাহিদা মিটছে ডায়মন্ড হারবার, দীঘা গুজরাট ও মুম্বাইযের স্থানীয় ইলিশ থেকে। যদিও স্থানীয় ভাবে ইলিশ ধরা পড়ছে খুবই কম। চাহিদার বড় অংশ মেটাচ্ছে মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ইলিশ।
অন্তর্বর্তী সরকারের অনড় মনোভাব জেনেও কেন বাংলাদেশের ইলিশ এত জোর দিয়ে চাইছেন ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ? এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ার মাকসুদ বলেন- বাংলাদেশের ইলিশ না আসায় বাজারে ইতোমধ্যেই চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। ফলে দামও কিছুটা বেশি আছে। যে মাছ এক হাজার ১২`শ রুপিতে বিক্রি হয় সেই মাছ দেড় হাজার থেকে দু হাজার রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া এপারের বাঙালিদের কাছে বাংলাদেশের পদ্মার ইলিশের বরাবর একটা চাহিদা আছে। দাম বেশি হলেও ক্রেতারা কেনে। আমরা আশা করি, এই ঝামেলার মধ্যেও পূজার সময় ওনারা আমাদের ইলিশ দেবেন।
এক দশক ধরে প্রতি বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ইলিশ পাঠানো হয় ভারতে। তবে এবার অনন্য স্বাদ ও ঘ্রাণে ভরা এই মাছটি প্রতিবেশী দেশটিতে পাঠানো হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা গেছে। গত মাসের শুরুতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। এর আগে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে ভারতে ইলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা করে।
প্রতিবছরই দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ভারতে পাঠানো হতো বাংলাদেশের ইলিশ। কিন্তু ছাত্র-জনতার উত্তাল আন্দোলনের মুখে দেড় দশক ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের গত ৫ আগস্ট পতনের পর সেই ধারাবাহিকতা বজায় না থাকার বিষয়টি এবার অনেকটাই নিশ্চিত।
ইতোমধ্যেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবার ইলিশ দেয়া হবে না বলে ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে যদি সম্ভব হয় তবে পাঠানো হবে। এমন অবস্থায় ভারতের পক্ষ থেকে ইলিশ পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের কাছে চিঠি পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের মাছ আমদানিকারক সংস্থা ফিস ইমপোর্টার্স অসোসিয়েশন ইলিশ রপ্তানির জন্য আবেদন জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকারের কাছে।
একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বরাতে বলা হয়েছে, গত ৫ বছর ধরে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ আমদানি হয়েছে। এবারও সেই রীতি মেনে ভারতে ইলিশ পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে আবেদন করেছে ফিস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।
আরএস