আব্দুল কাইয়ুম
ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪, ০৯:০৫ এএম
আব্দুল কাইয়ুম
ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪, ০৯:০৫ এএম
হুন্ডিতে অর্থ পাঠানোর ফলে প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে, এতে তারা বেশি লাভবান বলে সেদিকে ঝুঁকছেন
—সিএমএসের গবেষণা
গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীদের আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ২১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের তুলনায় রেমিট্যান্সের পরিমাণ বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। সেই বছর দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ২১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অথচ গত বছরে বিগত ৪৮ বছরের মধ্যে বিভিন্ন দেশে সর্বোচ্চ কর্মী গেছেন। যার সংখ্যা ছিল এক কোটি ৬০ লাখ ৭৫ হাজার ৪৮৭ জন। তবে যে পরিমাণ বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন দেশে গেছেন সেই পরিমাণে রেমিট্যান্স আসেনি। গত বছর প্রবাসীর সংখ্যা বেড়েছে ১৩ শতাংশ কিন্তু রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বিশাল সংখ্যক কর্মী থেকেও আশানুরূপ রেমিট্যান্স না পাওয়ার ভালো লক্ষণ নয় বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। তাদের দাবি, রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজারে ডলারের দামের ব্যবধান বেশি থাকে। তখন বৈধ চ্যানেলের চেয়ে হুন্ডিতে রেমিট্যান্স বেশি আসে। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিস্তৃত। তারা অভিবাসীদের কম সময়ে, কম খরচে দেশে অর্থ পাঠানোর নিশ্চয়তা দেন। কোনো প্রবাসী কোনো মাসে অর্থ পাঠাতে না পারলে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা নিজ উদ্যোগে ধার দিয়ে দেশে অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা করে দেন। প্রবাসীরা পরের মাসে তা শোধ করতে পারেন। অথচ, দ্রুত বর্ধমান ব্যাংক বা মানি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো প্রবাসীদের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারেনি। হুন্ডির চেয়ে ব্যাংকে অর্থ পাঠিয়ে যদি একই রকম সুবিধা পাওয়া যায়, তাহলে প্রবাসীরা উদ্বুদ্ধ হবেন।
সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজের (সিএমএস) সামপ্রতিক এক গবেষণায় দেখা যায়, দিন দিন প্রবাসী আয়ের পরিমাণ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হলো হুন্ডির মাধ্যমে অধিক মাত্রায় অর্থ পাঠানো। হুন্ডি মাধ্যমে প্রবাসীরা বেশি লাভবান হন বলে এই দিকে ঝুঁকছেন তারা। কারণ এর সাথে তাদের আর্থিক লেনদেন ও সময় জড়িত থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, প্রবাসীরা ঋণ নিয়ে প্রবাসে যান, যার ফলে যেই মাধ্যমে তারা বেশি আর্থিক সুবিধা পান সেই মাধ্যমেই টাকা পাঠান।
দেশে পাঠনো সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। যার পরিমাণ হলো ৩৬ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এটি মোট রেমিট্যান্সের ১৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ। তারপরই সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে যার পরিমািণ ছিল ৩২ দশমিক ৮১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। সৌদি আরবে অভিবাসন বাড়লেও রেমিট্যান্স বেড়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট ১৩ লাখ পাঁচ হাজার ৪৫৩ জন বাংলাদেশি কর্মী কাজের উদ্দেশে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করেছেন। যা ২০২২ সালের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অভিবাসী গেছেন সৌদি আরবে। বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে অভিবাসন করেছেন চার লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৪ জন যা মোট অভিবাসনের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে কর্মী গ্রহণে প্রথম অবস্থানে থাকলেও শ্রমিক গ্রহণের হার গত বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৮৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ২০২২ সালে মোট প্রবাসীর সংখ্যা ৫৪ শতাংশ অভিবাসন হয়েছিল সৌদি আরবে। গত বছর কুমিল্লা অঞ্চল থেকে কাজের উদ্দেশে সর্বোচ্চ বিদেশ গমন করেন এক লাখ আট হাজার ৮৭০ জন। দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসনের উৎস এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া যেখান থেকে ৬৪ হাজার ৮০৭ জন কর্মী বিদেশে যান। তৃতীয় অবস্থানে থাকা চট্টগ্রাম থেকে ৬৪ হাজার ২০২ জন।
চতুর্থ অবস্থানে আছে টাঙ্গাইল যা ৫৪ হাজার ৯৬ জন কর্মী বিদেশে যান। এর পরের জেলাগুলো যথাক্রমে চাঁদপুর ৪৭ হাজার ১২৩ জন, কিশোরগঞ্জ ৪৪ হজার ২৯২ জন, নোয়াখালী ৪৪ হাজার ১৩৫ জন কর্মী বিদেশে কাজের উদ্দেশে যায়।
গত বছরে ৭৬ হাজার ৫১৯ জন নারী কর্মী কাজের জন্য বিদেশে গেছেন। ২০২২ সালে বিদেশগামী কর্মীর সংখ্যা ছিল এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৬৬। ২০২২ সালের তুলনায় নারী প্রবাসীর সংখ্যা এই বছর ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত বছরে মোট আন্তর্জাতিক অভিবাসনের ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ হলেন নারী কর্মী যা ২০২২ সালে ছিল ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। নারী অভিবাসনের ক্ষেত্রেও গন্তব্য দেশগুলোর মধ্যে এই বছরে ও সৌদি আরবে নারী গেছেন সবচেয়ে বেশি। ২০২৩ সালে অভিবাসনের ৪ দশমিক ১৪ শতাংশ ছিল পেশাজীবী কর্মী। তা ছাড়া ২৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ ছিল দক্ষ কর্মী, ২১ দশমিক ১ শতাংশ আধাদক্ষ কর্মী এবং ৫০ শতাংশ স্বল্পদক্ষ কর্মী অভিবাসন করেছেন।
অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠার রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) এক জরিপের দেখা যায়, বিদেশে গিয়ে কোনো কাজ পাননি এমন কর্মীর সংখ্যা ১৫ শতাংশ। চুক্তি অনুযায়ীও কাজ পাননি এমন কর্মীর সংখ্যাও ২০ শতাংশ। তাই তাদেরকে বাধ্য হয়ে দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। তাদের জরিপে আরও দেখা যায়, পবেষণা করা প্রবাসীদের ১৫ শতাংশ বিদেশে যাওয়ার এক মাসের মধ্যে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। তা ছাড়া ২৯ শতাংশ কর্মী যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে দেশে ফিরে আসেন।