Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪,

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তকে আদালতে নেয়া প্রয়োজন হয় না: ইসফাক এলাহী

মো. মাসুম বিল্লাহ

নভেম্বর ২০, ২০২২, ০৯:৫১ পিএম


ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তকে আদালতে নেয়া প্রয়োজন হয় না: ইসফাক এলাহী

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইসফাক এলাহী বলেছেন,পুরো বিষয়টি হাস্যকর, যতটুকু জানতে পেরেছি জঙ্গিরা ছিনতাই এর সময় মরিচের গুঁড়া এবং স্প্রে ব্যবহার করা হয়েছে। এটি খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এই স্বল্প কিছু ব্যবহার করে মৃত্যুর দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে সিনেমার স্টাইলে ছিনিয়ে নেওয়া খুবই উদ্বেগের বিষয়। তা ছাড়া ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত কোন আসামিকে হাজিরার জন্য আদালতে নেয়া প্রয়োজন হয় না। এটিও সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত কাজ হয়েছে। তাই বলব মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীকে হাতকড়া কোমরে দড়ি ডান্ডাবেরি পড়ানো থাকে কিন্তু ফাঁসির দন্ধপ্রাপ্ত ২ জঙ্গির শুধুমাত্র কোমরে ধরে ছিল কেন তাদের ডান্ডাভেরি হ্যান্ডকাফ পড়ানো হয়নি এটির জবাব দেওয়া প্রয়োজন।

রবিবার (২০ নভেম্বর) এক বপ্রশ্নের জবাবে আমার সংবাদের প্রতিবেদককে এই কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে পুরো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা সহ সবাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে ।আর একজন জঙ্গিকে যেভাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ব্যবহার করে আদালতে নেয়া প্রয়োজন সেটির কিছুই হয়নি। এটাকে প্রমাণিত হয়েছে জঙ্গীরা আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাইতেও বেশি দক্ষ।

জানতে চাইলে দীপনের বাবা লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক আমার সংবাদকে  বলেন, ‍‍`এটা বিস্ময়কর বিষয়টি আতংকের। আমি হিসাব মেলাতে পারছি না যে এ ধরণের ঘটনা কীভাবে সম্ভব। তাদের গ্রেপ্তারে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে বলে খবর দেখলাম। দেখা যাক কী হয়।‍‍`

জানা যায়, ঢাকার সিজেএম আদালতের অষ্টম তলায় সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনানে এ দুই জঙ্গির মামলার শুনানির দিন ধার্য ছিল। ছিনতাই হওয়া মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন।মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামিরের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার মাধবপুর গ্রামে। মো. আবু ছিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিবের বাড়ি লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেটেশ্বর গ্রামে। উল্লেখ্য, গত ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটে খুন করা হয় জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক দীপনকে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি মামলার রায়ে আসামিদের সবার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আদালত।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, একটি মামলায় শুনানি শেষে আদালত থেকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে সহযোগীরা হাজতখানা পুলিশের চোখে স্প্রে ছিটিয়ে, কিল–ঘুষি মেরে মইনুল হাসান শামীম ও মো. আবু ছিদ্দিক সোহেলকে ছিনিয়ে নেন। এরপর তাঁরা দুটি মোটরসাইকেলে করে রায়সাহেব বাজার মোড়ের দিকে পালিয়ে যান।ছিনিয়ে নেওয়া জঙ্গিদের ধরতে অভিযান চলবে। ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি গোলাম সারোয়ার খানবলেন, আদালতে শুনানি শেষে এই দুজনকে হাজতখানায় নেওয়ার পথে তাঁদের ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) উপকমিশনার ফারুক বলেন, ২ আসামি আদালতে হাজিরা দেয়। আদালত থেকে বের হওয়ায় সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তাদের চোখে জঙ্গিরা এক ধরনের স্প্রে করে। পুলিশ সদস্যরা চোখ কচলে যখন তাকায় তখন দেখতে পায় আসামিরা মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাচ্ছে।

ধরিয়ে দিলে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার: ঢাকার নিম্ন আদালতে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার। পুলিশ সদর দপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা করে মোট ২০ লাখ পুরস্কার দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘আমি ও আইনমন্ত্রী একসঙ্গে বসে বলে দিয়েছিলাম, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের আদালতে আনতে হবে না; যেহেতু তাদের ফাঁসির আদেশ হয়েই গেছে। এই আদেশ কেন মানা হলো না, তা খতিয়ে দেখা হবে।’

রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি: ঢাকার সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারে রাজধানীতে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ফারুক হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

প্রসঙ্গ, রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইবুনাল থেকে নামার সময় সিঁড়ি থেকে প্রকাশক দীপন হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি ও জেএমবি সদস্য আবু সিদ্দিক ও মইনুলকে ঢাকার আদালতের সামনে থেকে ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়েছে অন্য জঙ্গিরা।

উল্লেখ্য, উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটের নিজ অফিসে খুন হন ফয়সাল আরেফিন দীপন। ওইদিন বিকালে তার স্ত্রী শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি দক্ষিণের সহকারী পুলিশ কমিশনার ফজলুর রহমান। এই মামলায় বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক জিয়াসহ ৮ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।

ইএফ

Link copied!