আমার সংবাদ ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
আমার সংবাদ ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৫, ১২:৩০ পিএম
উচ্ছৃঙ্খল আইনজীবীর বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি জানিয়েছে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি এ হুঁশিয়ারি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, কতিপয় আইনজীবীর উদ্ধতাপূর্ণ আচরণ ও আক্রমণাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্য পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়েছে, বিচারপ্রার্থী মানুষ অবণনীয় হয়রানীর শিকার হচ্ছে। উক্ত আইনজীবীবৃন্দ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে বিচারকের মানহানী করারও চেষ্টা করছেন।
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সাভিস এসোসিয়েশন অত্যস্ত ধৈর্য ও সতর্কতার সাথে এতোদিন পুরে৷ ঘটন৷ পর্যবেক্ষণ করেছে। কিন্তু পরিস্থিতি যে পর্যায়ে যাচ্ছে তা সারা দেশের বিচারকদের মনে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের জম্ম দিয়েছে।
এমতাবস্থায়, সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ এবং সারাদেশের মানুষের অবগতির জন্য সকলের সামনে আমরা প্রকৃত ঘটনা, এর পেছনের মূল কারণ এবং বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশনের অবস্থান তুলে ধরছি।
ঘটনার সুত্রপাত গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সাইবার ট্রাইবুন্যালে একটি মামলার শুনানিকে কেন্দ্র করে। ঢাকা আইনজীবী সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদধারী কয়েকজন আইনজীবী ঢাকার বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইব্যুনালে আসামিপক্ষে জামিন শুনানি করেন, যা বিচারক গুনাগুনের ভিত্তিতে শুনানিপুর্বক নামঞ্জুর করেন৷ উক্ত গুরুত্বপূর্ণ পদধারী আইনজীবীগণ শুনানি করার পরেও আসামিকে জামিন না দেওয়ার ঘটনাকে তার নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন।
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে তারা আইনজীবী সমিতিতে তাদের পদকে ব্যবহার করে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ঢাকার সাইবার ট্রাইবুন্যালের বিচারক মামলার গুনাগুনের ভিত্তিতে আদেশ দেওয়ায় অর্থাৎ তাদেরকে বিশেষ সুবিধা না দেওয়ায় তারা আগে থেকেই বিচারকের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। প্রকাশ্য আদালতে তার৷ এটাও উল্লেখ করেন যে, `এটা জেলা বার না, ঢাকা বার`।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদধারী ব্যক্তিরা আদালতে শুনানি করলে তাদের পক্ষে আদেশ দেওয়া ঢাকা কোটের রীতি উল্লেখ করে তারা আদেশ পরিবর্তনের জন্য বিচারকের উপর এজলাসেই চাপসৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে বিচারক এজলাস থেকে নেমে যেতে বাধ্য হন। এরপরেও চাপের কাছে নতিস্বীকার না করায় অর্থাৎ আদেশ পরিবর্তন না করায় পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি বিচারক এজলাসে উঠলে উক্ত আইনজীবীর বিচারককে এজলাসে থেকে নেমে যেতে বলেন। বিচারক এজলাস থেকে নামতে ন চাওয়ায় তার৷ এজলাসে হট্টগোল, বিশৃংখলা, বিচারককে হুমকি ও এজলাস রক্তাক্ত করার ভয় দেখান। এক পর্যায়ে আদালতের কর্মচারিকে এজলাসেই মারধর করেন যার ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
আদালতের আইনানুগ আদেশকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির কতিপয় স্বার্থান্বেষী আইনজীবীর ইন্ধন ও প্রত্যক্ষ মদদে কিছু আইনজীবী বিগত কয়েকদিনে যে আচরণ প্রদর্শন করেছেন তা স্পটত অসদাচরণ, বিচার কাজে বাধা সৃষ্টি, বিচারকের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং বিচারকের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ। আইনজীবীদের উক্ত আচরণ শুধু ঢাকার সাইবার ট্রাইবুন্যাল নয় বরং সারা দেশের বিচারক তথ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও নিরাপত্তার প্রতি হুমকি বলে আমরা মনে করি। একজন বিচারক সাংবিধানিকভাবে আদালতে স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করেন। তার আদেশ এক পক্ষের অনুকূলে এবং অপর পক্ষের প্রতিকূলে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আইনজীবী সমিতির কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদধারী ব্যক্তি মামলায় শুনানি করলে তার পক্ষে আদেশ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের এই মানসিকতা স্বাধীন বিচার বিভাগের জন্য অশনি সংকেত। আদালতের আদেশ দ্বারা কেউ সংস্কুদ্ধ হলে আইনগতভাবে সেই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া ব্যক্তি বিচারকের বিরুদ্ধে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধেও কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়েরের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দেশের বিদ্যমান আইন ও বিচারকের সাংবিধানিক স্বাধীনতাকে বৃদ্ধাপুলি দেখিয়ে পদ ও পেশি শক্তি প্রদর্শন করে নিজের পক্ষে রায় বা আদেশ পাওয়ার লক্ষ্যে আইনজীযী কর্তৃক এজলাস ও আদালত প্রাঙ্গণে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা ফৌজদারি অপরাধ। এতে আদালতের স্বাভাবিক বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, বিচারপ্রার্থী সাধারণ জনগণ হয়রানির শিকার হচ্ছে এবং বিচার বাবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন শুরু থেকেই ঘটনাটি শান্তিপূর্ণ ও স্থানীয়ভাবে সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। এ লক্ষ্যে সকল কর্তৃপক্ষের সাথে সব সময় যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া! ঢাকার বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ এবং মহানগর দায়রা জজ মহোদয়গণ ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এসকল প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আইনজীবী সমিতি উক্ত প্রচেষ্টাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকের অপসারণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রাইব্যুনাল বর্জনের ডাক দিয়েছে। আদালতে বিচারক নিয়মিত বসবেন এটা স্বাভাবিক, আইনজীবীর৷ আদালত বর্জন করতেই পারেন, কিন্তু বিচারককে আদালত থেকে নেমে যাওয়ার জন্য চাপ বা ভয়ভীতি দেখানোর কোনো সুযোগ নেই।
বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন এবং উক্ত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে যেসকল গ্ঁতিহাসিক উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন বাংলদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন ও সারা দেশের বিচারকগণ উক্ত রোডম্যাপ বাস্তবায়নে স্ব-স্ব অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। ঠিক এমন সময়ে কতিপয় আইনজীবীর উত্তরূপ আচরণ ও কর্মকান্ডের দ্বারা মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয় কর্তৃক ঘোষিত রোডম্যাপ বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিস এসোসিয়েশন মনে করে। আদালতের আইনানুগ আদেশকে কেন্দ্র করে এজলাস ও আদালত প্রাঙ্গণে এমন অস্থিরত! ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা পুরে৷ বিচার ব্যবস্থার প্রতি হুমকি বলে এসোসিয়েশন মনে করে। বিচারালয়ে এরূপ অরাজকতা সৃষ্টি, বিচারককে ভয়ভীতি দেখানো এবং বিচারকাজ পরিচালনায় সরাসরি বাধা সৃষ্টি সভ্য সমাজে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ঢাকার বিজ্ঞ সাইবার ট্রাইবুন্যালে সংঘটিত এসব কর্মকান্ডের বিষয়ে আমরা তীব্র নিন্দা জ্রাপন করছি এবং নিস্মোক্ত সিদ্ধান্ত ও দাবি উপস্থাপন করছি-
১। অনভিবিলম্ভে তদস্তপুর্বক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বিদ্বকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনে মামলা দায়ের করতে হবে;
২। পেশাগত অসদাচণের দায়ে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের সনদ বাতিল করতে হবে;
৩। ইতঃপূর্বে দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘটিত একইরূপ ঘটনায় দায়েরকৃত আদালত অবমাননা মামলা ও সংশ্লিষ্টদের সনদ বাতিলের কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে।
অন্যথায়, এসোসিয়েশন সারাদেশের জেলা আদালতের বিচারকদের নিয়ে যেকোনো কঠোর কর্মসুচি গ্রহণে বাধ্য হবে।
বিআরইউ