Amar Sangbad
ঢাকা সোমবার, ০৭ এপ্রিল, ২০২৫,

এসএসএফের সাবেক ডিজি ও স্ত্রীর ২৩ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের নির্দেশ

আমার সংবাদ ডেস্ক

আমার সংবাদ ডেস্ক

এপ্রিল ৬, ২০২৫, ০৪:৫০ পিএম


এসএসএফের সাবেক ডিজি ও স্ত্রীর ২৩ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের নির্দেশ
এসএসএফের সাবেক ডিজি মুজিবুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত

স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল মজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিবের বিরুদ্ধে প্রায় ২৩ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৬৯০ টাকার স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি ব্যাংক হিসেবও অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৬ এপ্রিল) আদালত এ আদেশ দেন আদালত। গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর মুজিবুরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

দুদকের অনুসন্ধানে জানা যায়, মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিবের রাজধানী ঢাকায় বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছে দুদক। সম্প্রতি মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদ ক্রোক করতে আদালতে আবেদন করে দুদক। পাশাপাশি এই দম্পতির ১৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদনও করা হয়েছে। দুদকের একজন উপ-পরিচালক ২৩ মার্চ আদালতে মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিবের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ ক্রোক ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধের আবেদন করেন।

সর্বশেষ আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি পদ থেকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মুজিবুর রহমানকে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বরখাস্ত করা হয়। লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মুজিবুর রহমান এর আগে সেনা সদর দপ্তরে কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) অতিরিক্ত মহাপরিচালক ছিলেন।

২০১৬ সালের জুলাই মাসে গুলশানের হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার সময় ‘অপারেশন থান্ডারবোল্ট’ পরিচালনা করে মুজিবুর রহমান আলোচনায় আসেন। এরপরে তিনি স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক হন। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হওয়ার পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মজিবুর ২০১৮ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত এসএসএফ মহাপরিচালকের দায়িত্ব নেন। দীর্ঘ সময়ে মজিবুর নিজে যেমন নানান অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়ান, তেমনি তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে রাজধানীর মাটিকাটা এলাকায় একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ ফুলে-ফেঁপে ওঠে। বরখাস্ত হওয়ার পর মজিবুর ও ওই ব্যবসায়ী গ্রুপের দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে দুদকে।

যত সম্পদ মুজিবুর দম্পতির: 

মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিবের নামে থাকা ঢাকার দুটি ফ্ল্যাট, ১১টি প্লট, সাভারের বাড়ি ক্রোক করতে আদালতে আবেদন করেছে দুদক। পাশাপাশি তাদের ১৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদন করা হয়েছে।

নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকার মিরপুরে ৪ হাজার ৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট রয়েছে লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. মুজিবুর রহমানের। তার স্ত্রী তাসরিন মুজিবের নামে ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় রয়েছে একটি ফ্ল্যাট। তাদের নামে ঢাকার মিরপুর, ক্যান্টনমেন্ট, খিলক্ষেত, পূর্বাচল এলাকায় রয়েছে ১০টি প্লট। এছাড়া ঢাকার পূর্বাচলে একটি বাড়ি ও সাভারে রয়েছে আরেকটি জমিসহ টিনশেড বাড়ি।

মুজিবুর রহমান ও তার স্ত্রী তাসরিন মুজিবের নামে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় যে ১০টি প্লট রয়েছে তার মধ্যে ৭টির মালিক তাসরিন মুজিব। তার নামে এসব প্লট রয়েছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বাউনিয়া মৌজা এলাকায়। তার নামে থাকা সবচেয়ে বড় প্লটটি সাড়ে ৭ কাঠার। যার মৌজা মূল্য দেখানো হয়েছে ৯৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

এছাড়া তাসরিনের নামে ঢাকার ক্যান্টনমেন্টের জোয়ার সাহারা এলাকায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। মিরপুরের মাটিকাটা এলাকায় মুজিবুর রহমানের নামে ৪০৫০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তিনি এই ফ্ল্যাটের মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। তার নামে মিরপুরের মাটিকাটা, ক্যান্টনমেন্ট ও খিলক্ষেত এলাকায় তিনটি প্লট রয়েছে। মুজিবুরের নামে সবচেয়ে বড় সাড়ে ৭ কাঠার প্লটটি রয়েছে খিলক্ষেত এলাকায়। এ প্লটের মৌজা মূল্য দেখিয়েছেন ৬৩ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা। প্লটের বাইরে ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে তার নামে একটি প্লটসহ বাড়ি রয়েছে। এছাড়া সাভারে ৫ শতাংশ জায়গার ওপর জমিসহ টিনশেড বাড়ি।

এছাড়া এই দম্পতির সন্দেহজনক ব্যাংক লেনদেনের কথা জানিয়েছে দুদক। সংস্থাটি বলছে, মুজিবুর রহমান সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। পরিবারের সদস্যদের নামে অবৈধ সম্পদ করেছেন। মুজিবুর ও তার স্ত্রীর বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে দুর্নীতি-ঘুষের বিপুল পরিমাণ টাকা জমা ও উত্তোলন করা হয়েছে।

আরএস

Link copied!