Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫,

জন্ডিস রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

আমার সংবাদ ডেস্ক

মে ১২, ২০১৯, ০৬:০৬ পিএম


জন্ডিস রোগের লক্ষণ, প্রতিকার ও চিকিৎসা

রোগ-বালাই বলে-কয়ে আসে না। কথাটা সম্পূর্ণ সত্য নয়। যে কোনো রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করার আগে নানা ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই সেসব উপসর্গকে গুরুত্ব সহকারে দেখি না।

ফলে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়ানো যায় না। অথচ সামান্য একটু সচেতনতাই পারে যে কোনো অসুখ প্রকট আকার ধারণ করার আগে আরোগ্য লাভের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে।

জন্ডিসও তেমনি একটি। জন্ডিস আসলে কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ। এতে মানুষের শরীরের চামড়া ও চোখ হলুদ দেখায়। এর মুল কারণ হচ্ছে শরীরে বিলিরুবিন নামে হলুদ রঞ্জক পদার্থের পরিমাণ বেড়ে জাওয়া।

জন্ডিস কেমন রোগ : শরীরের ত্বক, মিউকাস মেমেব্রেণ এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়াকে সাধারণত জন্ডিস বলে। প্রতিদিন আমাদের শরীরে সর্বনিন্ম ১% পুরনো লোহিত কণিকার স্থলে নতুন লোহিত রক্ত কণিকা স্থানান্তরিত হয়ে থাকে। আমাদের শরীরের পুরনো লোহিত রক্ত কণিকা গুলো সবসময় বিলিরুবিন উৎপন্ন করে, যা সাধারণভাবে পায়খানার মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে বের হয়ে যায়।

যদি কোন কারণে শরীর থেকে এই বিলিরুবিন না বের হতে পারলে এই অধিক বিলিরুবিনের জন্য জন্ডিস হয়। বিলিরুবিনের কারণে শরীরের ত্বক, চোখ ইত্যাদি হলদে ভাব হয়ে যায়। জন্ডিসের কারণে আরও নানাবিদ সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

জন্ডিস রোগের লক্ষণ ও কারণ : জন্ডিস অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল চোখ ও প্রসাবের রং হলুদ হয়ে যাওয়া। জন্ডিস এর মাত্রা বেড়ে বা বেশি হলে হলে পুরো শরীর গাঢ় হলুদবর্ণ ধারণ করতে পারে। অনেকসময় দেখা যাই পায়খান সাদা হয়ে যায়, চুলকানি, যকৃত শক্ত হয়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গও জন্ডিস এর কারণে দেখা যায়। এছাড়া শারীরিক দুর্বলতা, জ্বর, বমি, পেটব্যথা, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি তো লেগেই থাকে। ডাক্তারদের মতানুসারে জন্ডিসকে আমরা সাধারনত তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি। ‘হেপাটোসেলুলার’, ‘অবস্ট্রাকশন’ এবং ‘হেমোলাইটিক এনিমিয়া’। জন্ডিসে আক্রান্ত হলে সাথে সাথেই ডাক্তার দেখানোর মাধ্যমে এর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।

জন্ডিসের প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক : সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা, জীবাণুমুক্ত খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার মাধ্যমেই জন্ডিসের আক্রমণ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। রাস্তাঘাটে খোলা পানি, ফলের জুস, সরবত ইত্যাদি খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান বা বিরত থাকতে হবে। সময়মত হেপাটাইটিস এ এবং বি’র প্রতিষেধক টিকা নিতে হবে। হেপাটাইটিস বি’র ক্ষেত্রে প্রথম মাসে একটি, দ্বিতীয় মাসে একটি বা ছয়মাসের মধ্যে একটি ডোজ দেওয়া হয় এটা আপনারা গ্রহণ করতে পারেন। হেপাটাইটিস এ’র ক্ষেত্রে একটি ডোজই সাধারণত যথেষ্ট।

আর দুই ক্ষেত্রেই পাঁচ বছর পরপর বুস্টার টিকা দেয়া হয়ে থাকে। এই বুস্টার টিকার দাম বেসরকারীভাবে সাধারণত ৭শ’ থেকে ৮শ’ টাকা হয়ে থাকে। তবে জন্ডিস একবার হয়ে গেলে বটিকা নিয়ে কোনো লাভ হয় না। তাই সুস্থ থাকা অবস্থাতেই আগেই টিকা নিয়ে নিতে হবে।

জন্ডিসের চিকিৎসা সম্পর্কে মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেহেতু জন্ডিস সাধারনত কোনো রোগ নয়, তাই এর কোনো ওষুধ নেই। স্বাভাবিকভাবে সাত থেকে ২৮ দিনের মধ্যে শরীরের রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস এমনিতেই সেরে যায়।

তারা আরও বলেন যে, “জন্ডিস হলে রোগীকে পুরোপুরিভাবে বিশ্রামে থাকতে হবে। তখন যকৃতের প্রতি অতিরিক্ত যত্নবান হওয়া একান্ত প্রয়োজন। প্রচুর পরিমানে শর্করাজাতীয় এবং ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার খেতে হবে। তখন গ্লুকোজ, আখের রস, আনারস ইত্যাদি জন্ডিস রোগীর জন্য অনেক উপকারী খাদ্য।”

জন্ডিস হলে আমরা সাধারণত প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন বা ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকি, যা কখনই উচিত নয়। আমাদের শরীরের পরিপাকতন্ত্রে জমে থাকা জীবাণুগুলো যাতে কোন প্রকার প্রদাহ তৈরি করতে না পারে সেজন্য রোগীকে প্রতিদিন কমপক্ষে একবার হলেও পায়খানা করা নিশ্চিত করতে হবে।

এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিতে গিয়ে আরও জানান, জন্ডিস কোনো রোগ নয় বলে এটাকে মোটেও অবহেলা করা উচিত নয়। জন্ডিসের চিকিৎসা সম্পর্কে অনেকের মাঝে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। কেউ ঝাড়ফুঁক দিয়ে জন্ডিস নামায়, আবার কেউ রোগীকে অতিরিক্ত হলুদ দিয়ে রান্না করা খাবার খাওয়ান, কেউ আবার বিভিন্ন গাছের শেকড় খেয়ে থাকেন। এগুলো সম্পুর্ণভাবেই ভুল ধারণা। জন্ডিস হলে সময় নষ্ট না করে সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

জন্ডিস হলে কখন ডাক্তার দেখানো উচিত : শিশু এবং বড়দের শরীরের ত্বক, চোখ ইত্যাদি হলুদ হয়ে গেলে জন্ডিস হয়েছে বলে মনে করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে রোগীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।