আমার সংবাদ ডেস্ক
আগস্ট ৫, ২০১৯, ১০:২৩ এএম
পাইলস (Piles): পাইলস হলো পায়ুপথে বিদ্যমান রক্তনালির কুশন যা মল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। যখন এটি কোনো ধরণের উপসর্গ তৈরি করে যেমন- মলদ্বার দিয়ে রক্তপাত বা মাংসপিন্ড মলদ্বার দিয়ে বের হয়ে আসা, তখনই আমরা একে হেমোরয়েড রোগ বলে থাকি।
পাইলস দু’ধরণের হতে পারে-
(১) অভ্যন্তরীণ পাইলস (Internal Haemorrhoid): সাধারণত ডেনটেট লাইনের ওপরে সৃষ্ট পাইলস হলো অভ্যন্তরীণ হেমোরয়েড (Internal Haemorrhoid)। রক্তনালির কুশনের ডেনটেট লাইন থেকে স্থানচ্যুতির মাত্রার ওপর নির্ভর করে একে চার শ্রেণিতে বা গ্রেডে ভাগ করা হয়।
গ্রেড-১: কখনো স্থানচ্যুত হয় না, শুধু রক্তনালির কুশনগুলো ফুলে যায়।
গ্রেড-২: নিম্নমুখী চাপে স্থানচ্যুত হয়, তবে তা আপনা আপনি পায়ুপথে ঢুকে যায়।
গ্রেড-৩: নিম্নমুখী চাপে স্থানচ্যুত হয় এবং তা হাত দিয়ে পায়ুপথে ঢুকাতে হয়।
গ্রেড-৪: স্থানচ্যুত হয় এবং তা তার পায়ুপথে ঢুকানো সম্ভব হয় না।
(২) বাহ্যিক পাইলস (External Haemorrhoid): ডেনটেট লাইনের নিচে সৃষ্ট পাইলস হলো, বাহ্যিক হেমোরয়েড বা External Haemorrhoid। এক্ষেত্রে সাধারণত মলদ্বারের বাইরে ফোলা থাকে এবং কিছুটা ব্যথা বা অস্বস্তি হতে পারে।
পাইলস কেন হয়?: পাইলস কেন হয়, এর সঠিক কারণ জানা না গেলেও এ রোগের জন্য যেসব বিষয় দায়ী বলে ধারণা করা হয় তা মধ্যে রয়েছে- অন্ত্রজনিত সমস্যা (দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া); মলত্যাগে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ, অনিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস, শাকসবজি ও অন্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি স্বল্পতা।
স্থূলতা: পেটের ভিতরে চাপ বৃদ্ধি, যেমন- ভারি ওজন তোলা, গর্ভ্যবস্থা, অ্যাসাইটিস ইত্যাদি; দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে, অথবা বসে থাকা।
উপসর্গ: পাইলস হলো মলদ্বারের নিম্নাংশের রোগ, যেখানে রক্তনালির শিরাগুলো ফুলে গিয়ে বিভিন্ন উপসর্গ তৈরি করে যেমন- রক্তপাত হওয়া বা মাংসপিন্ডের মতো বের হয়ে আসা ইত্যাদি।
এ রোগ মলদ্বারের ভিতরে বা বাইরেও হতে পারে এবং সেই অনুযায়ী উপসর্গের ভিন্নতা থাকতে পারে। অভ্যন্তরীণ পাইলসের লক্ষণের ভিত্তিতে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়।
এক: এক্ষেত্রে টাটকা লাল রক্ত দেখা যায়, যা ব্যথাবিহীন। সাধারণত মলত্যাগের শেষে রক্ত যায়, কখনো ফোটায় ফোটায় আবার কখনো ফিনকি দিয়ে যেতে পারে।
দুই: টাটকা রক্ত যাওয়া ছাড়াও অনেক সময় মলদ্বারের ভিতর থেকে মাংসপিন্ড বাইরে বের হয়ে আসে যা আপনা আপনি ভিতরে ঢুকে যায়।
তিন: এক্ষেত্রে রক্তগুচ্ছ বা মাংসপিন্ড বের হয়ে আসে, যা হাত দিয়ে চাপ দিলে আবার ভিতরে ঢুকে যায়।
চার: রক্তগুচ্ছ বা মাংসপিন্ড সবসময় বের হয়ে থাকে, যা মলত্যাগে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যথা, ঘা হয়ে যাওয়া, পচন ধরা (গ্যাংগ্রিন) বা অন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রে মিউকাম ডিসচার্জ মলদ্বারে চুলকানি বা জ্বালা পোড়া হতে পারে। আর অতিরিক্ত রক্তরক্ষণ থেকে অনেক সময় রক্তশূন্যতাও দেখা দিতে পারে।
করণীয়: পাইলস রোগের যে দুটি বিষয় সবচেয়ে বেশি সমস্যা করে তা হলো কোষ্ঠকাঠিন্য ও ডায়রিয়া।
এই কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সেদিকে বিশেষ সতর্ক থাকা প্রয়োজন। এই জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং লাল মাংস (যেমন- গরুর মাংস, খাসির মাংস ইত্যাদি) যতদূর সম্ভব পরিহার করা। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা। মলত্যাগের অভ্যাস ঠিক রাখা ও নিয়মিত মলত্যাগ করা। মলত্যাগে অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ না করা। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া/ আমাশয় থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছ থেকে সেবা নেয়া।
ডা. আফরিন সুলতানা
জেডআই