Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫,

পিত্তপাথুরি চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি

প্রিন্ট সংস্করণ॥ডা. মাহতাব হোসাইন মাজেদ

জানুয়ারি ৯, ২০২০, ১২:২০ এএম


পিত্তপাথুরি চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথি গলব্লাডার ইংরেজি শব্দ যার অর্থ পিত্তাশয় বা পিত্তথলি। এটি নাশপাতির আকৃতির ফাঁপা অঙ্গ যা যকৃতের ডান খণ্ডের নিম্নাংশে অবস্থান করে। এটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭-১০ সে.মি. এবং প্রস্থ ৩ সে.মি.। খাদ্য পরিপাকে ব্যবহারের জন্য একবারে প্রায় ৩০-৫০ মিলিমিটার পিত্তরস ধারণ করে রাখে। পিত্তথলিতে পাথর জমা হওয়াকে পিত্তপাথুরি বলে। এতে নাভি প্রদেশে দারুণ শূল বেদনা হয়। আর এটি অতি কষ্টদায়ক ব্যাধি এবং সোরাদোষ থেকে উৎপন্ন। সোরা দোষ থেকে আমাদের পিত্তকোষ বালুকোণা থেকে আরম্ভ করে বড় প্রস্তরখণ্ড পর্যন্ত সঞ্চয় হয় ও সেই সময়ের মধ্যে মধ্যে পেটে নাভিমণ্ডলের উপরে, দক্ষিণদিকে অল্পাধিক বেদনা উপস্থিত হয়। কিন্তু যে সময় ওই সঞ্চিত প্রস্তরখণ্ড পিত্তবহা নালী পথে বহির্গমনের জন্য আসতে থাকে, তখন অতি ভয়ানক বেদনা অনুভূত হয় এবং রোগী যন্ত্রণায় অধীর হয়ে উঠে। বর্তমান যুগে পিত্তপাথুরির প্রকোপ প্রচণ্ড রূপে দেখা দিয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর কিছু কিছু রোগী আরোগ্য লাভ করলেও এদের মধ্যে অনেক রোগী পরবর্তীতে ক্যান্সার, জন্ডিস, বি-ভাইরাস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পিত্তের কারণে এটির রং গাঢ় সবুজ দেখায়। পিত্তাশয়কে গঠনগতভাবে ফান্ডাস, দেহ ও গ্রিবা এই তিন অংশে বিভক্ত করা হয়। পিত্তপাথুরি বা পিত্তাশয়ে পাথর হলো পিত্তাশয়ের বা পিত্তথলির একটি রোগ। গল্ডস্টোন ইংরেজি শব্দ যার অর্থ পিত্তপাথুরি বা পিত্তাশয় পাথর। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি কোলিলিথিয়াসিস নামে পরিচিত। পিত্তথলির মধ্যে থাকে পিত্তরস বা বাইল এই বাইলকে তৈরি করে লিভার। পিত্তথলি বাইল সল্ট, ইলেক্ট্রলাইট বিলিরুবিন, কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য চর্বি সঞ্চয় করে রাখে। পিত্তরস বিশেষত বিলিরুবিনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রে চর্বি হজম এবং বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। আমাদের খাবার খাওয়ার পূর্বে পিত্তথলি বাইল বা পিত্তরসে পূর্ণ থাকে। খাবার খাওয়া শেষ হলে গলব্লাডার বা পিত্তথলিটি চুপসে যায় অর্থাৎ পিত্তরস খাবারের সাথে মিশে খাবার হজমে সাহায্য করে। এই পিত্তরস সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে খাবার হজমে সমস্যা হয়। আর পিত্তশয়ে কোলেস্টেরল, বাইল সল্ট ও বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে তৈরি হয় পিত্তথলিতে পাথর। অর্থাৎ পিত্তথলিতে পাথর হলে পিত্তাশয়ে কোলেস্টেরল, বাইল সল্ট ও বিলিরুবিনের সংমিশ্রনে গঠিত শক্ত সঞ্চিত পদার্থ। উন্নত দেশে প্রায় ১০-২০ ভাগ প্রাপ্ত বয়স্ক লোক এই রোগে আক্রান্ত। উন্নত বিশ্বে ৯০ ভাগ পাথরই কোলেস্টেরল দিয়ে তৈরি বাদ বাকি পিগমেন্ট পাথর। তবে অনেক সময় মিক্স পাথরও পাওয়া যায়। পিগমেন্ট পাথর এশিয়ায় বেশি পাওয়া যায়। শারীরিক বিধিবদ্ধ নিয়মানুসারে পিত্তকোষ থেকে সঞ্চিত পিত্তরস পিত্তনালি দিয়ে ক্রমে ক্রমে ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথমাংশ বা ডিউডেনামের মধ্যে প্রবাহিত হয়। আহারাদির দোষে অথবা পিত্তকোষের বা পিত্তনালির প্রদাহজনিত কারণে এই পিত্তপ্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে, এর ফলে পিত্তরস জমাট বেঁধে যায় এবং ধীরে ধীরে পিত্তপাথুরি দেখা দেয়। যদি পিত্তপাথুরি খুব ছোট হয় বা বালু কণার মতো থাকে তা অনেক সময় আপনা থেকেই বেরিয়ে যায় এবং কখন বেরিয়ে যায় তা ঠিক বুঝা যায় না। তবে পিত্তপাথুরি আকারে বড় হলে বেরিয়ে যেতে পারে না তখন বেদনার সৃষ্টি হয় এবং রোগী কষ্ট পায়। পিত্তকোষ অঞ্চলে মাঝে মাঝে ব্যথা এই লক্ষণটি দেখে অনেক সময় রোগটি ধরা যায়। লক্ষণ : ১) প্রচণ্ড বেদনা ডান কুক্ষিদেশ থেকে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিশেষ করে ডান ঙ্কন্ধ ও পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। প্রচণ্ড বেদনায় রোগী ছটফট করে এবং অস্থির হয়ে পড়ে। ২) অনেক সময় বেদনার সঙ্গে বমি, পিত্ত বমি হয়ে থাকে। ৩) বেদনার সংগে ঠাণ্ডা ঘাম দেখা দেয়, নাড়ী দুর্বল হয়, ছটফট ভাব এবং হিমাঙ্গের ভাব দেখা দেয়, শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। ৪) অনেক ক্ষেত্রে রোগীর জণ্ডিস রোগ এবং দেহ হলুদ বর্ণ হয়ে যায় ৫) পিত্তকোষ থেকে যদি পাথর না বের হয়ে যায় তবে শেষ পর্যন্ত হোমিওচিকিৎসা না নিয়ে অপারেশন করে বের করার ব্যবস্থ্য করতে হয় নতুবা রোগী ক্রমাগত কষ্ট ভোগ করতে থাকে। হোমিও প্রতিবিধান : রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়, এ জন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিও চিকিৎসককে রোগীর ধাতুগত লক্ষণ মিলিয়ে চিকিৎসা দিতে পারলে তাহলে পিত্তপাথুরি ছোট হোক আর বড় তাহলে আল্লাহর রহমতে হোমিওতে সম্ভব। হোমিও চিকিৎসা : প্রাথমিকভাবে যেসব ওষুধ লক্ষণের উপর আসতে পারে, কোলেস্টেরিনাম, কার্ডুয়াস মেরিয়েনাস, ক্যালকেরিয়া কার্ব, আর্ণিকা, চেলিডোনিয়ান, চায়না, ডিজিটেলিস, হাইড্রাসটিস, ডায়োঙ্কোরিয়াসহ আরও অনেক মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে, তাই ওষুধ চিকিৎসা ছাড়া নিজে নিজে ব্যবহার করলে রোগ আরও জটিল আকারে পৌঁছতে পারে। লেখক, কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমারসংবাদ/এসটিএমএ